প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৪ ১২:১৩ পিএম
বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক নতুন দেশ গঠন এবং মুক্তচিন্তা ও রাষ্ট্র-সংস্কারের পক্ষে ঐক্য গড়ার আহ্বান জানিয়ে শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হন শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীরা। প্রবা ফটো
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে রাজপথের কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে তাদের ওপর গুলি চালানোর প্রতিবাদ জানিয়ে শহীদ মিনারে কর্মসূচিও পালিত হয়েছে শিল্পীদের চারটি প্ল্যাটফর্মের সম্মিলিত আয়োজনে। এ প্ল্যাটফর্মগুলো হলোÑ দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ, আলোকচিত্রী সমাজ, বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীরা ও বাংলাদেশ সংগীতশিল্পী সমাজ (গেটআপ স্ট্যান্ডআপ)। এই চার সংগঠনের সম্মিলিত আয়োজনের অংশ হিসেবে রাস্তায় নেমেছিলেন দেশের বিভিন্ন অঙ্গনের নামিদামি তারকারাও।
সেই আন্দোলনের সূত্র ধরে পতন ঘটেছে আওয়ামী লীগ সরকারের। নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের এক দিন পরই ফের মাঠে নেমেছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। এবার তারা জানালেন বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক নতুন এক দেশ গঠন এবং মুক্তচিন্তা ও রাষ্ট্র-সংস্কারের পক্ষে ঐক্য গড়ার আহ্বান।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী গতকাল শনিবার শহীদ মিনারে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ২টা থেকেই শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকেন শিল্পীরা। বিকাল ৩টা বাজতেই ব্যানার হাতে তারা দাঁড়িয়ে যান শহীদ মিনারের সামনে। শুরুতেই আয়োজকদের পক্ষ থেকে সমবেতদের উদ্দেশে বলা হয়, স্বৈরাচারের পতন হয়েছে।
এরপর বক্তারা বলেন, ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানে সবাইকে বিপ্লবী অভিনন্দন। তবে সময়টা শুধু উদযাপনের নয়, উল্লাসের নয়; সময়টা রাষ্ট্র পুনর্গঠনের। আন্দোলনে আমরা ছাত্রদের ওপর যেমন ভরসা রেখেছি, ঠিক তেমনি রাষ্ট্র পুনর্গঠনে তাদের পাশে থেকে সর্বজনের প্রতিনিধিত্বমূলক বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই। দেশের অভ্যন্তরে চলমান সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞে আমরা সর্বস্তরের শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মী গভীরভাবে চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন। দেশের এই ক্রান্তিকালে সর্বস্তরের শিল্পীদের এক করেই এই সমাবেশ।
বক্তারা আরও বলেন, অহিংস এক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। যেখানে নিশ্চিত হবে সহাবস্থান। নতুন এই বাংলাদেশ সবার। শেখ হাসিনার পতনের পর নতুন করে নতুন দিনের স্বপ্নে বিভোর সবাই। যে স্বপ্নে জন্ম নতুন বাংলাদেশের , সে স্বপ্ন পূরণের নতুন ভোর দেখতে কাঁধে কাঁধ রেখে কাজ করতে হবে সব শ্রেণি-পেশার মানুষেরÑ এমনটিই মনে করছে শিল্পীসমাজ।
এ সময় আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, ‘এই সময়টায় অনেক খারাপ কিছু করার চেষ্টা করা হবে। আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে সেটাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করব। যে স্বাধীনতা আমরা আজ পেয়েছি, এটা যেমন বিশাল একটা ঘটনা, এটাকে হারিয়ে ফেলাও বিশাল একটা ঘটনা হবে। আমাদের দেশে আর কোনো দিন যেন স্বৈরতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র গ্রাস না করে। আমরা চাই সৃষ্টির স্বাধীনতা।’
এদিকে রাষ্ট্র ও সংস্কৃতির সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে গতকাল শনিবার সকালে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে আরেকটি সমাবেশ করেছেন শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা। সেখান থেকে শিল্প-সংস্কৃতির চর্চায় যুক্ত সবাইকে নিজেদের চর্চা অব্যাহত রেখে দলমত ও ধর্মের নামে আধিপত্যবাদী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে রাষ্ট্র ও সংস্কৃতির সংস্কারে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।
দৃশ্য-আলোকচিত্র-পারফরম্যান্স-সংগীতশিল্পী, কবি, লেখক, গবেষক, স্থপতি, সংস্কৃতিসেবী ও সংগঠকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘গণহত্যা ও নিপীড়নবিরোধী শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে এ সমাবেশ থেকে বলা হয়, বিপুলসংখ্যক তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থী ও গণমানুষের জীবন উৎসর্গের মধ্য দিয়ে স্বৈরশাসনবিরোধী গণ-আন্দোলনের বিজয় অর্জিত হয়েছে। এ গণ-আন্দোলনের যে অভিপ্রায় ছিল, রাষ্ট্র-সমাজ-সংস্কৃতিতে তার বাস্তবায়ন করতে হবে। সেই দায়িত্ব নিয়ে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, তাদের ওপর জনসাধারণের আস্থা রয়েছে। শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপর নজর রাখবেন। কোনো অনৈতিক বা অপ্রত্যাশিত কর্মকাণ্ড হতে দেওয়া যাবে না।