বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৪ ২০:৪৮ পিএম
আপডেট : ১৩ মে ২০২৪ ২১:১১ পিএম
দেশের স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সার্বজনীন পেনশনসংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক’ প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) ও হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) শিক্ষকরা মানববন্ধন করেছেন। সোমবার (১৩ মে) নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা মানববন্ধন করেন।
জাবিতে দুপুর ১২টা দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসংলগ্ন সড়কে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী সমিতি ও কর্মচারী ইউনিয়নের ব্যানারে মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে সরকারের পেনশনসংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক’ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান আন্দোলনকারীরা।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে সবার জন্য পেনশন যেমন ছিল তেমনই বহাল রাখার দাবি জানাচ্ছি। স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ২৪ জুলাই থেকে নিয়োগপ্রাপ্তদের সরকারের গৃহীত সার্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশের সুনাগরিক হিসেবে আমরা সরকারের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া বহাল রাখার দাবি জানাচ্ছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বকসী বলেন, ‘সরকারের বৈষম্যমূলক এ সিদ্ধান্ত আমরা মানি না। একটি রাষ্ট্র একই শ্রেণির কর্মচারীর একটি নির্দিষ্ট অংশকে সুবিধাবঞ্চিত করতে পারে না। সরকারের কাছে আমরা বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সভা করে। এ সময় কর্মসূচির অংশ হিসেবে একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থানসহ বিশ্ববিদ্যালয়টির সকল শিক্ষক পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনে শিক্ষকরা সার্বজনীন পেনশন স্কিমকে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে এর প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার ও শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল দাবি করেন।
মানববন্ধনে পবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জেহাদ পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান মিয়া মুন্নাসহ বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে পেনশন স্কিমের প্রজ্ঞাপন বাতিল ও স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধন শেষে শিক্ষক সমিতি উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।
মানববন্ধনে হাবিপ্রবি গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. শ্রিপতি সিকদার বলেন, ‘সার্বজনীন পেনশন স্কিম শিক্ষকদের জন্য চরম বৈষম্যমূলক। এ ধরনের স্কিম অতীতে কখনও ছিল না।’
শিক্ষা খাতকে ধ্বংস করে, শিক্ষকদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়ে আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা করার এই নীলনকশা আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।
হাবিপ্রবি প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. বলরাম রায় বলেন, ‘এই পেনশন স্কিম শিক্ষকদের জন্য একটি চরম বৈষম্যের। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকতা পেশাকে গ্রেড-১-এর মর্যাদা দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি স্বতন্ত্র বেতন স্কেল দেওয়া হোক।’
হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘সার্বজনীন পেনশন স্কিম ছিল নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য। যার মাধ্যমে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষরা পেনশন সুবিধার সঙ্গে যুক্ত হতো। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই স্কিমের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি বৈষম্যের সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, যে সকল শিক্ষক ২০২৪ সালের ১ জুলাইয়ের পর যোগদান করবেন, তাদের জন্য সার্বজনীন পেনশন স্কিমের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং তাদের ক্ষেত্রে উক্ত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার জন্য বিদ্যমান অবসর সুবিধাসংক্রান্ত বিধি-বিধান প্রযোজ্য হবে না।