বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৪ ১২:৩৩ পিএম
আপডেট : ০৬ মে ২০২৪ ১৬:০৬ পিএম
ঢাবির চারুকলা অনুষদের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে রবিবার জয়নুল গ্যালারিতে শুরু হয়েছে ‘রাইজ অব নেশন’ আলোকচিত্র প্রদর্শনী। প্রবা ফটো
উনিশশ একাত্তর। বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা মহাঅধ্যায় রচিত হয়েছিল এই সময়। মুক্তি ও স্বাধীনতার স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সাড়ে সাত কোটি মানুষ। সেই মুক্তিযুদ্ধের সময় বিখ্যাত ভারতীয় আলোকচিত্রী রঘু রাইয়ের তোলা ৫৩টি আলোকচিত্র নিয়ে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর আয়োজন করা হয়েছে এক মর্মস্পর্শী প্রদর্শনীর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঢাবি ও দুর্জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের (ডিবিএফ) যৌথ ব্যবস্থাপনায় গতকাল রবিবার থেকে জয়নুল গ্যালারিতে শুরু হয়েছে ‘রাইজ অব নেশন’ শীর্ষক এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী। যা চলবে আগামী ১৯ মে পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ প্রদর্শনীর গ্যালারি খোলা থাকবে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় নানা ঘটনার প্রেক্ষাপটে ধারণকৃত রঘু রাইয়ের এই ৫৩টি ছবি স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও সাক্ষী দিচ্ছে কী মূল্য দিতে হয়েছে মুক্তির জন্য, স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য। পাকিস্তানি সামরিক সেনাদের নির্যাতন-নৃশংসতার পাশাপাশি উদ্বাস্তু এবং উদ্বাস্তুশিবিরের মানবিক গল্পগুলো এসব ছবিতে জ্বলজ্বল করছে।
অনুষদের ওসমান জামাল মিলনায়তনে এক উদ্বোধনী আলোচনা সভা শেষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক প্রধান অতিথি হিসেবে ১৫ দিনের এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।
আলোচনা সভায় আ. ক. ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘পাকিস্তানি সেনারা এদেশের মানুষের ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি মানুষ বাধ্য হয়েছিলেন মাতৃভূমি ছেড়ে পাশের রাষ্ট্র ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিতে। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ও দেশটির জনগণ যেভাবে আশ্রয়, নিরাপত্তা ও থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন, সেই চিত্র যারা সচক্ষে দেখেননি, তাদের বোঝানো খুব কঠিন। বরেণ্য চিত্রশিল্পী রঘু রাই ‘রাইজ অব এ নেশন’ অ্যালবামে সেই সময়ের মানুষের নিদারুণ কষ্ট, জীবন বাঁচানোর আকুতি ধরে রেখেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি করছি। আমার মনে হয় রঘু রাইয়ের ‘রাইজ অব এ নেশন’ এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, ‘আমরা সীমিত পরিসরে থেকে বিশ্বমানের ছবি উপস্থাপনের সুযোগ পেয়েছি। এই প্রদর্শনী চারুকলা অনুষদের ৭৫ বছরের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
প্রদর্শনীর কিউরেটর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জিহান করীম বলেন, ‘প্রখ্যাত ভারতীয় আলোকচিত্রশিল্পী বন্ধু রাই তার ক্যামেরায় অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সঙ্গে এদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি মর্মস্পর্শী করুণ কাব্যিক রূপ ধারণ করেছেন। পাকিস্তানিদের বর্বরতার পাশাপাশি সেখানে উদ্বাস্তু এবং উদ্বাস্তুশিবিরের গভীর মানবিক গল্পগুলো ধরা পড়েছে। চিরন্তন হয়ে উঠেছে ক্ষণস্থায়ী মুহূর্তগুলো। সীমিত সংস্থান নিয়ে অস্থায়ী শিবিরে আটকে থাকা উদ্বাস্তুদের দুর্দশা রাইয়ের ছবিতে ভিন্ন ব্যঞ্জনা পেয়েছে; করুণ, নির্মম একটি অন্ধকার অনুচ্ছেদের ওপর তিনি মানবিক আলো ফেলেছেন। ‘রাইজ অব এ নেশন’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রঘু রাইয়ের ধারণকৃত ছবিগুলোর একটি অমূল্য সংকলন।’
প্রদর্শনীতে নাট্যব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর সভাপতিত্বে ও চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগের চেয়ারম্যান নাসিমুল খবিরের সঞ্চালনায় আরও বক্তৃতা করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের উপাচার্য ড. রুবানা হক, দুর্জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা দুর্জয় রহমান, স্কয়ার গ্রুপের ডিরেক্টর অঞ্জন চৌধুরী প্রমুখ।