× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নারীর হার ক্রমেই কমছে বিসিএসে

সেলিম আহমেদ

প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৪ ১৩:০৭ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

শিক্ষার সব সূচকে দেশের নারীরা এগিয়ে থাকলেও বিসিএসের চাকরির বাজারে এসে তারা ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছেন। অথচ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এখন ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীই বেশি। উচ্চশিক্ষাতেও নারী-পুরুষের অংশগ্রহণের সমতা কাছাকাছি। কিন্তু বিসিএসের মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় তার প্রতিফলন ঘটছে না। সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এটি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়।

বিগত ৫টি বিসিএসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সামাগ্রিকভাবে বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের তুলনায় অংশগ্রহণের হার পুরুষদের বেশি। সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার তালিকাতেও পুরুষরা এগিয়ে। এ ছাড়া মানবিক বিভাগ থেকে বেশি পরীক্ষার্থী অংশ নিলেও চাকরির জন্য চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পাচ্ছেন বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিসিএসে নারী কোটা বাতিল হওয়ার পর থেকেই মূলত তারা পিছিয়ে পড়ছেন। আর পিএসসির সিলেবাসে বিজ্ঞানকে গুরুত্ব দেওয়ার কারণে এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা অধিক সংখ্যায় সুপারিশপ্রাপ্ত হচ্ছেন। 

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, কোটা বাতিলের কারণে নারীরা কিছুটা পিছিয়েছে তা ঠিক। তবে এর পেছনে আরও কারণ আছে। যেমন নারীদের এখন নানা কর্মক্ষেত্রের সুযোগ হয়েছে। তাই তারা পাবলিক সার্ভিসে আসতে চায় কম। কারণ পাবলিক সার্ভিসে আজ এখানে পোস্টিং, আবার কাল ওখানে। এসব কারণে নারীদের পাবলিক সার্ভিসের প্রতি আগ্রহ কম। তবে আমরা চাই নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ুক। 

৩৯তম (বিশেষ), ৪০তম, ৪১তম, ৪২তম এবং ৪৩তম (বিশেষ) বিসিএসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মূলত ৪০তম বিসিএস থেকেই নারীদের পিছিয়ে পড়ার হার বাড়ছে। ৩৯তম (বিশেষ) বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ৩৭ হাজার ৫৭৬ জন। এর মধ্যে সুপারিশকৃত প্রার্থীর সংখ্যা ৬ হাজার ৭৯২। তাদের মধ্যে পুরুষ ও মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ৩ হাজার ৬০০ ও ৩ হাজার ১৯২। আর সুপারিশকৃতদের মধ্যে অবিবাহিতের সংখ্যা ৩ হাজার ৮১২ এবং বিবাহিতের সংখ্যা ২ হাজার ৯৮০। বিবাহিতের মধ্যে সুপারিশকৃত পুরুষ প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ২৪৩ জন এবং মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৭৩৭ জন।

কোটা পদ্ধতি বাতিলের পর ৪০তম বিসিএসে ৪ লাখ ১২ হাজার ২১৫ জন আবেদনকারী ছিলেন। এর মধ্যে সুপারিশকৃত প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৯৬৩। তাদের মধ্যে পুরুষ ও মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ১ হাজার ৪৫২ ও ৫১১ জন। আর সুপারিশকৃতদের মধ্যে অবিবাহিতের সংখ্যা ১ হাজার ৬৭৭ এবং বিবাহিতের সংখ্যা ২৮৬ জন। বিবাহিতের মধ্যে পুরুষ প্রার্থীর সংখ্যা ১৮৭ এবং মহিলা প্রার্থী ১৩৯ জন।

৪১তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৪ হাজার ৫১৩ জন। এর মধ্যে সুপারিশকৃত প্রার্থীর সংখ্যা ২ হাজার ৫১৬ জন। সুপারিশকৃতদের মধ্যে পুরুষ ও মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ১ হাজার ৮৪৪ ও ৬৭২ জন। তাদের মধ্যে অবিবাহিতের সংখ্যা ২ হাজার ১০৯ জন এবং বিবাহিতের সংখ্যা ৪০৭ জন। বিবাহিতের মধ্যে সুপারিশকৃত পুরুষ প্রার্থী ২১২ জন এবং মহিলা প্রার্থী ১৯৫ জন।

৪২তম (বিশেষ) বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ২৬। সুপারিশকৃত প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৪ হাজার। যার মধ্যে পুরুষ ও মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ২ হাজার ৩৯ ও ১ হাজার ৯৬১ জন। আর তাদের মধ্যে অবিবাহিতের সংখ্যা ২ হাজার ১৭৪ জন এবং বিবাহিতের সংখ্যা ১ হাজার ৮২৬। বিবাহিতের মধ্যে পুরুষ ৭১৫ জন এবং মহিলা ১ হাজার ৭৫ জন।

৪৩তম বিসিএসে আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৪২ হাজার ৮৩১ জন। এর মধ্যে সুপারিশকৃত প্রার্থী ছিল ২ হাজার ১৬৩ জন। তার মধ্যে পুরুষ ও মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ১ হাজার ৭৪২ ও ৪২১। আর সুপারিশকৃতদের মধ্যে অবিবাহিতের সংখ্যা ১ হাজার ৮০৫ জন এবং বিবাহিতের সংখ্যা ৩৫৮। বিবাহিতের মধ্যে পুরুষ প্রার্থী ২৩৯ জন এবং মহিলা ১১৯ জন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সর্বপ্রথম ১৯৭২ সালে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়। সে সময় মেধাতালিকার ২০ শতাংশ বরাদ্দ রেখে, ৪০ শতাংশ জেলাভিত্তিক, ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য এবং ১০ শতাংশ যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকবার এই কোটা ব্যবস্থার পরিবর্তন করে সর্বশেষ ৫৫ শতাংশের কোটা করা হয়। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ, জেলাভিত্তিক কোটা ১০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ কোটা ছিল। পরে ১ শতাংশ কোটা প্রতিবন্ধীদের জন্যও নির্ধারণ করা হয়।

তবে বিভিন্ন বিসিএসের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মেধাবীরা উত্তীর্ণ হয়েও একদিকে চাকরি পাননি, অন্যদিকে শত শত পদ শূন্য রয়ে যাচ্ছে। পিএসসির প্রকাশিত ফল অনুযায়ী, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া যাওয়ায় ২৮তম থেকে ৩৮তম বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারে অন্তত ছয় হাজার পদ খালি ছিল।

২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা। যা সর্বাত্মক আন্দোলনে রূপ নেয়। রাজধানীসহ দেশের বড় শহরগুলো অচল করে দেওয়া হয়। দিনের পর দিন ঢাকার রাজপথ, রেলপথ অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে সরকার সচিব কমিটি গঠন করে। এ কমিটি ওই বছরই কোটা বিলুপ্তির সুপারিশ করে। 

পরীক্ষার্থী বেশি মানবিকের, সুপারিশ বেশি বিজ্ঞানের

বিসিএসে মানবিক বিভাগ থেকে বেশি পরীক্ষার্থী অংশ নিলেও চাকরির জন্য চূড়ান্তভাবে সুপারিশ বেশি পাচ্ছেন বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। ২০২৩ সালের এই বার্ষিক প্রতিবেদনে ৪১তম বিসিএস ও ৪৩তম বিসিএসে চাকরি পাওয়া শিক্ষার্থীদের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৪১তম ও ৪৩তম বিসিএসে মানবিক বিভাগ থেকে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। তবে পিএসসি যাদের চাকরির জন্য চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করেছিল, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিলেন বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। ৪১তম বিসিএসে সুপারিশ করা পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৬ দশমিক ২১ শতাংশ ছিলেন বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। ৪৩তম বিসিএসে সেটি ছিল ৩৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। অবশ্য পিএসসির প্রতিবেদনে প্রকৌশল ও চিকিৎসাবিজ্ঞানকে আলাদা বিভাগ দেখানো হয়েছে। এই দুটি বিভাগকে বিজ্ঞান বিভাগের সঙ্গে যোগ করলে দেখা যায়, ওই দুই বিসিএসে চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পাওয়াদের মধ্যে ৬৫ শতাংশের বেশি ছিল বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা