× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

‘নির্মল জাবি তপ্ত ভূমিতে পরিণত হচ্ছে’

রাজিব রায়হান, জাবি

প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৪ ১১:০০ এএম

আপডেট : ০৪ মে ২০২৪ ০৯:৩৫ এএম

গত পাঁচ বছরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় আড়াই হাজার গাছ কাটা হয়েছে। প্রবা ফটো

গত পাঁচ বছরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় আড়াই হাজার গাছ কাটা হয়েছে। প্রবা ফটো

নৈসর্গিক সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাস হিসেবে সবার কাছে পরিচিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। শুরুতে গাছপালার সংখ্যা কম থাকলেও পরিকল্পিত বনায়নের আওতায় বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচিত হতে থাকে সবুজের অভয়ারণ্য হিসেবে। কিন্তু ২০১৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাস হওয়া উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হলে বদলে যেতে থাকে সেই চিত্র। প্রশাসন ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২১টি স্থাপনা নির্মাণ করতে গিয়ে শুরু করে বৃক্ষনিধন। নির্মল সবুজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস তপ্ত ভূমির পথে যাত্রা শুরু করে।

প্রকল্পটির আওতায় প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবনের সম্প্রসারণ, শিক্ষার্থীদের জন্য হল, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবন ও খেলার কমপ্লেক্স নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নসহ অন্যান্য কারণে গত পাঁচ বছরে প্রায় আড়াই হাজার গাছ কাটা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।

সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ’-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ১৯৮৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গত ৩৫ বছরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) গাছপালা ও জলাশয় কমেছে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ, অন্যদিকে নির্মাণকৃত ভবনের সংখ্যা বেড়েছে ১৫৯ দশমিক ৩ শতাংশ। এ গবেষক দলে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরহাদুর রেজা, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাশহুরা শাম্মী ও অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃক্ষরোপণ ও গাছ কাটার বিষয়টি দেখভাল করে রেজিস্ট্রার অফিসের এস্টেট শাখা। এ অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে প্রায় ৩০০টি গাছ কাটার বিপরীতে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছিল ৪০০টি। পরের বছর ২০১৯ সালে দুই শতাধিক গাছ কাটার বিপরীতে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছিল ২৫০ টি। ২০২০ সালে ১৫০টি গাছ কাটার বিপরীতে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছিল ৩০০টি। ২০২১ সালে ৩০০ টি গাছ কাটার বিপরীতে ৭০০টি বৃক্ষরোপণ করা হয়েছিল । তবে ২০২২ সালে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছিল ২০০ টি। তবে গাছ কাটার সংখ্যার সুস্পষ্ট তথ্য মেলেনি অফিসে । পরবর্তী বছর ২০২৩ সালে ২০০টি গাছ কাটার বিপরীতে রোপণ হয়েছিল ৫০০টি। ২০২৪ সালে এখনও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হাতে নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে গাছ কাটা পড়েছে ২৫০ টি। কোথায় কোথায় গাছ লাগানো হয়েছে এই প্রশ্নের জবাব সুস্পষ্টভাবে দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলী বলেন, গত ১৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি আমরা দেখিনি। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে যে জায়গাগুলোতে বৃক্ষের সংখ্যা বেশি সেখানে ভবন নির্মাণ করে বৃক্ষ উজাড় করেছে তারা। এর বিপরীতে প্রতি বছর বিভিন্ন সময় তারা হাতেগোনা কয়েকটি গাছ এখানে-সেখানে লাগিয়ে দায়সারা বৃক্ষরোপণ করে। তা ছাড়া পরিচর্যার বিষয় তো কখনও আমলেই নেয়নি তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ একটি সূত্র জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃক্ষরোপণ শুধু খাতা কলমেই হয়েছে। ছিল না কোনো পরিকল্পনা। নিজেদের খেয়ালখুশিমতো বৃক্ষরোপণ করা হয়েছিল। ছিল না কোনো পরিচর্যা আর ব্যবস্থাপনা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে গাছগুলো বিক্রি করে থাকে, সেগুলোর হিসাবই থাকে। এর বাইরেও অনেক গাছ কাটা হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন সংসদের একাংশের সভাপতি আলিফ মাহমুদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যত্রতত্র অযাচিত ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। নির্দ্বিধায় গাছ কাটার ফলে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ভারসাম্য। আন্দোলনের তোপে পড়ে গাছের বদলে গাছ লাগানো হবে বললেও তা কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। শিক্ষার্থীরা মাঝে মাঝে যা গাছ রোপণ করে তাই সই। বৃক্ষরোপণের পরিকল্পিত দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অতি অল্প যে স্থলভূমি রয়েছে তা সংরক্ষণের নেই কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। ফলে নির্মল জাবি দিন দিন তপ্তভূমিতে রূপান্তরিত হচ্ছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরুর পর থেকে তিনটি ছাত্রী হলের জন্য ১৭৮টি কাঁঠালগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির ২০৭টি, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনের সম্প্রসারণের জন্য ২০০টি, লাইব্রেরির জন্য দেড় শতাধিক, স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের দক্ষিণে শতাধিক এবং অতিথি ভবনের জন্য শতাধিক গাছ কাটা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়েরর অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, আমি স্বীকার করছি চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে সহস্রাধিক গাছ কাটা পড়েছে। কিন্তু আমরা সব সময় চেষ্টা করেছি যত কমসংখ্যক গাছ কেটে ভবন নির্মাণ করা যায়। এ প্রকল্পের আগে আমরা যে মাস্টার প্ল্যান করেছিলাম সে অনুযায়ী ভবন নির্মাণের কাজ করেছি। তবে বিভিন্ন সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে কয়েকটা ভবন মাস্টার প্ল্যানের বাইরে করতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেভাবে বলেছে আমরা সেভাবেই কাজ করার চেষ্টা করেছি।

দেশব্যাপী চলমান দাবদাহ বিষয়টিকে আরও বেশি ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃক্ষ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আমির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ২০১৯ সালে বৃক্ষ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হলেও এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বৃক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং পরিকল্পিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করেনি আর আমাদের কাছেও কখনও পরামর্শ নেয়নি। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে যখন অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণের জন্য গাছ কাটতে হয় তখন আমাদের ডাকা হয়। তবে সব সময় নয়। যখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলন ও প্রতিবাদের মুখে পড়ে তখন বৃক্ষ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে আলোচনা রাখা হয়।

তিনি আরও বলেন, বৃক্ষ ব্যবস্থাপনা কমিটিতে বৃক্ষরোপণ নিয়ে কোনো এজেন্ডা রাখেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বৃক্ষরোপণ নিয়ে তাদের নেই কোনো আগ্রহ। বর্তমানে বৈশ্বিক উষ্ণায়নে ফলে সারা দেশে প্রবহমান দাবদাহ থেকে রক্ষা পেতে বৃক্ষরোপণ অন্যতম একটি পদক্ষেপ হতে পারে। শুধু বৃক্ষরোপণ করলেই হবে না, সেগুলোর সঠিক পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনাও জরুরি। এটাও বৃক্ষরোপণেরই একটি অংশ। ক্যাম্পাসে আমাদের দ্রুত বর্ধনশীল বৃক্ষরোপণ করে সেগুলোর সঠিক পরিচর্যার মধ্য দিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করতে হবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্রুততর পদক্ষেপ নিতে হবে বলে আমি মনে করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, বৃক্ষরোপণে আমরা উদাসীন এ কথাটি সঠিক নয়। প্রতি বছরই আমরা বৃক্ষরোপণ করে থাকি। তবে এ বছরে বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি বৃক্ষরোপণ করা হবে। আর পরিচর্যার ব্যাপারেও আমরা আরও বেশি গুরুত্ব দেব।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা