× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

হিট অ্যালার্টের মধ্যেই খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শঙ্কায় অভিভাবকরা

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:২২ এএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে দুর্বিষহ জনজীবন। ইতোমধ্যে টানা চারবার দেশে ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে বলে সতর্ক করছেন আবহাওয়াবিদরা। এমনকি আজ রবিবার ও আগামীকাল সোমবার দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভাঙার আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ। এর মধ্যে আজ রবিবার থেকেই খুলছে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোগুলো। দাবদাহ এবং অন্যান্য কারণে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকার ফলে তৈরি শিখন ঘাটতি ও নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী শিখন ফল অর্জনের জন্য পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত প্রতি শনিবারও শ্রেণি কার্যক্রম চলবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও তীব্র গরমে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি ও স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও অভিভাবকরা। তারা বলছেন, গরমে বাসায় থাকাই কষ্টকর। এমন অবস্থায় স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীরা টিকতে পারবে না। তাপমাত্রা সহনীয় হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা উচিত ছিল। আপাতত অনলাইনে ক্লাস নেওয়া যেত। 

গতকাল শনিবার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার (৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস) রেকর্ড ভাঙার আশঙ্কা খুবই বেশি ২৮ ও ২৯ এপ্রিলের যেকোনো দিন। এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, যশোর, পাবনা, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস, ঈদুল ফিতরসহ বেশ কিছু ছুটি সমন্বয় করে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশের নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ছুটি শুরু হয়েছিল। প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় ছুটি শুরু হয়েছিল ২২ মার্চ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ২১ এপ্রিল থেকে খোলার কথা থাকলেও গরমের কারণে ছুটি এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়। সেই ছুটি শেষে আজ রবিবার থেকে খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। 

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে এক প্রজ্ঞাপনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ আজ রবিবার থেকে যথারীতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে এবং শ্রেণি কার্যক্রম চলবে বলে জানায়। তবে দাবদাহ সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত অ্যাসেম্বলি বন্ধ থাকবে এবং শ্রেণি কার্যক্রমের যে অংশটুকু শ্রেণিকক্ষের বাইরে পরিচালিত হয়ে থাকে এবং সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসতে হয়, সেসব কার্যক্রম সীমিত থাকবে। দাবদাহ এবং অন্যান্য কারণে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় যে শিখন ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা পূরণ এবং নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিখন ফল অর্জনের জন্য পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত প্রতি শনিবারও শ্রেণি কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, আজ রবিবার থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজসমূহে ক্লাস যথারীতি চলবে। 

অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে, আজ রবিবার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরু হবে; তবে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ক্ষতি পোষাতে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগামী সপ্তাহ থেকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবারও ক্লাস চালু রাখা হবে। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো শনিবার বন্ধ থাকবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আক্তারুন্নাহারের সই করা এক অফিস আদেশে তীব্র তাপপ্রবাহে প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনার বিষয়ে কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেখানে শনিবার প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে কি না, তা নিয়ে কোনো তথ্য নেই। জানতে চাইলে উপসচিব আক্তারুন্নাহার বলেন, নির্দেশনায় শনিবার খোলার বিষয়ে যেহেতু কিছু বলা নেই, তার অর্থ শনিবার বন্ধ থাকবে।‌

গতকাল শনিবার সকালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, চলমান দাবদাহের কারণে কোমলমতি শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালিত শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কর্তৃক পরিচালিত লার্নিং সেন্টারগুলোর শ্রেণি কার্যক্রম চালুর বিষয়ে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছেÑ রবিবার থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম চলমান থাকবে। এক শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়গুলো প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আর দুই শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়গুলোর প্রথম শিফট সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা এবং দ্বিতীয় শিফট সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলমান থাকবে। দাবদাহ সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত অ্যাসেম্বলি বন্ধ থাকবে।

উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা 

গরমের প্রভাব কমার আগেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। কারণ ইতোমধ্যেই গরমে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে দেশে বিশ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সরকারের নিষেধাজ্ঞা না মেনে খোলা রাখা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হওয়ারও খবর পাওয়া গেছে। 

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে আফাজ উদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে দিনের পাশাপাশি রাতেও এইচএসসি ব্যাচের ক্লাস নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে গরমে আট শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। অসুস্থ হয়ে পড়া কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, বৃহস্পতিবার রাতের আঁধারে ক্লাস চলছিল। ক্লাস চলাকালীন ছয় শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। 

রাজধানীর খিলগাঁও ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের অভিভাবক তানিয়া আক্তার বলেন, ‘গরমে বাসায় থেকেই আমার সন্তান কয়েকদিন অসুস্থ ছিল। এখন স্কুলে পাঠানোর সাহস পাচ্ছি না।’ 

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক নিশাত আহমদ বলেন, ‘এই গরমে শিশুরা স্কুলে যাবে-আসবে, দীর্ঘসময় ক্লাস করবে, নির্ঘাত অসুস্থ হয়ে পড়বে। তাই সরকারের উচিত ছিল গরম না কমা পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রেখে অনলাইন ক্লাস চালু করা।’ 

অন্যদিকে তীব্র তাপপ্রবাহে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে অনলাইনে ক্লাস চালুর দাবি জানিয়েছে ‘অভিভাবক ঐক্য ফোরাম’। ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল কবির দুলু এক বিবৃতিতে বলেন, ‘কোথাও কোথাও এখনও অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও এক সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে। এ অবস্থায় অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিবেচনায় নিয়ে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার দাবি জানাচ্ছে। এতে বন্ধের সময়ে শিক্ষার যে ঘাটতি, তা পূরণে অনেকটা সহায়ক হবে।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘বৃষ্টি হওয়ার আগ পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে পারলে ভালো হতো। আমরা চাই আমাদের বাচ্চারা আগে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো থাকুক তারপর পড়াশোনা করুক। স্কুলে গিয়ে যদি কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হয় তাহলে তার পড়ালেখার ক্ষতি হবে। আবহাওয়া অনুকূলে আসার আগ পর্যন্ত অনলাইনেও পড়াশোনা করানো যেত। তবে যেহেতু খোলা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মনিং শিফট চালু রাখলে ভালো হতো।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা