প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:৩২ পিএম
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:১৮ পিএম
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার তৃতীয় ধাপে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সংঘবদ্ধ চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ।
ডিবি বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলে বসে এই পরীক্ষার প্রশ্নের সমাধান করতেন গ্রেপ্তাররা। আর পরীক্ষা শুরুর আগেই পরীক্ষার্থীদের হাতে সেই উত্তরপত্র পৌঁছে দেওয়া হতো।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে দুজন ঢাবি শিক্ষার্থী ও তিনজন পরীক্ষার্থী। তারা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী জ্যোতির্ময় গাইন ও সুজন চন্দ্র। তারা দুজনই জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। আর গ্রেপ্তার পরীক্ষার্থীরা হলেন, মনিষ গাইন, পংকজ গাইন ও লাভলী মণ্ডল।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ফাঁস করা প্রশ্ন ও প্রশ্নের সমাধান চক্রের হোতা অসীম গাইনের কাছে পাঠাতে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এতে অভিযোগের বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে।
হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ২১ জেলার সাড়ে তিন লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেন। পরীক্ষা চলাকালে প্রশ্নের উত্তরপত্র, ডিভাইসসহ মাদারীপুরে সাত ও রাজবাড়ীতে এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় দুই জেলায় পৃথক মামলা করেন সংশ্লিষ্টরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজবাড়ীতে আটক হওয়া পরীক্ষার্থী আদালতে নিজের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি জানান, কীভাবে উত্তর পেয়েছেন এবং তার মোবাইলে কখন উত্তরপত্র এসেছে।’
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘মাদারীপুরে গ্রেপ্তার হওয়া পরীক্ষার্থীদের বেশিরভাগই জামিনে বের হয়ে যান। ঘটনাটি তদন্তের জন্য মাদারীপুর জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাসুদ আলমের অনুরোধে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম দক্ষিণ বিভাগ তদন্তে নামে। অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে মাঠে নেমে চক্রের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী জ্যোতির্ময় গাইন ও সুজন চন্দ্রকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
তার দাবি, ‘জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দা পুলিশকে আসামিরা জানিয়েছেন, পরীক্ষার আগেই তারা প্রশ্ন সমাধানের জন্য পেয়ে যান। তারা প্রশ্ন সমাধানের দায়িত্ব পান জ্যোতির্ময় গাইনের চাচা অসীম গাইনের মাধ্যমে। প্রশ্নপ্রতি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার আশ্বাসে তাদের দিয়ে প্রশ্ন সমাধান করান অসীম। এই প্রস্তাবে জ্যোতির্ময়, সুজনসহ সাতজন জগন্নাথ হলের জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা ভবনের ২২৪ রুমে বসে প্রশ্নের সমাধান করে পাঠান।’
মহানগর ডিবিপ্রধান আরও বলেন, ‘অসীম তার ভাতিজা জ্যোতির্ময় গাইনকে প্রশ্ন সমাধানের দায়িত্ব দেন। অন্যদিকে তিনি পরীক্ষার দুই থেকে তিন মাস আগেই পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। বিশেষ করে, যাদের চাকরির বয়স শেষের পথে এমন পরীক্ষার্থীদের টার্গেট করতেন। তাদের পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার জন্য ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকায় চুক্তি করতেন। পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগেই প্রশ্নের উত্তরপত্র পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন অসীম। সমাধান করে দেওয়া প্রশ্নের ৭২ থেকে ৭৫টি প্রশ্ন মিলেছে।’
অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, ‘আমাদের তদন্তে এখন পর্যন্ত যে প্রমাণ পেয়েছি, তাতে এই চক্রের মূল হোতা অসীম গাইন। তার বাড়ি মাদারিপুরের রাজৈর উপজেলায়। সে আগেও বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে। সে অল্প দিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় করেছে। এই টাকা দিয়ে তার গ্রামে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছে। স্থানীয় রাজনৈতিক একটি প্রভাব থাকা অসীমের মানব পাচার, হুন্ডি ব্যবসা, ডিশ ব্যবসাও রয়েছে। যেখানে তিনি প্রশ্ন ফাঁস করে আয় করা টাকা বিনিয়োগ করেছে।’
এই আসামি পলাতক জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। তাকে গ্রেপ্তার করলে কীভাবে সে প্রশ্ন পায় সেই বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারব। এ ঘটনায় দুজনকে আমরা রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতে যারা প্রশ্নের সমাধান করেছেন তারাও স্বীকার করেছেন। যারা প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন তারাও স্বীকার করেছেন। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে আরও কারা কারা জড়িত সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। জড়িত কেউ ছাড় পাবে না।’
প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ডিবির পক্ষ থেকে পরীক্ষা বাতিলের অনুরোধ জানাবে কি-না, জানতে চাইলে হারুন বলেন, ‘আমরা এই মামলার তদন্তে নেমে যা যা পেয়েছি সবকিছুই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। এরপর তারা সিদ্ধান্ত নেবেন পরীক্ষা বাতিল করবেন নাকি বহাল রাখবেন। তারা তাদের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এর আগেও আমরা ব্যাংক, বিমানসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় জড়িত অনেককে গ্রেপ্তার করেছি। ব্যাংকের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।’