প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৫৬ পিএম
আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:৩৭ পিএম
সনদ বাণিজ্যের ঘটনায় সন্দেহের তালিকায় থাকা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানকে ওএসডি করে শিক্ষা অধিদপ্তরে সংযুক্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে বোর্ডের পরিচালক (আইসিটি) অধ্যাপক মো. মামুন উল হককে।
সোমবার (২২ এপ্রিল) শিক্ষা মন্ত্রণালয় পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ জারি করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সাধারণত চেয়ারম্যান ওএসডি হলে বা অন্য কোনো ঘটনা ঘটলে বোর্ডের সচিবকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু কারিগরি বোর্ডের সচিব মে. মিজানুর রহমানও সনদ বাণিজ্যের সন্দেহে নজরদারিতে আছেন। এ কারণে তাকে এ দায়িত্ব না দিয়ে অধ্যাপক মো. মামুন উল হককে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে রবিবার সকালে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রীর নেতৃত্বে জাল সার্টিফিকেট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, মার্কশিট ও প্রবেশপত্র বিক্রির শক্তিশালী জালিয়াত চক্র তৈরি হয়েছে বলে জানায় ঢাকা মহানগর গোয়ন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগ।
এ চক্রের অন্যতম হোতা বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী মোছা. সেহেলা পারভীন ও দুটি টেকনিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়ন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগ।
ডিবিপ্রধান বলেন, গত ১ এপ্রিল মিরপুরের ১৪৯/১৩/৩, দক্ষিণ পীরেরবাগের বাসা থেকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কম্পিউটার সেলের সিস্টেম এনালিস্ট একেএম শামসুজ্জামান ও একই প্রতিষ্ঠানের চাকরিচ্যুত ও বর্তমানে শামসুজ্জামানের ব্যক্তিগত বেতনভুক্ত সহকারী ফয়সালকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বিপুল পরিমাণ তৈরি করা জাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র এবং এসব তৈরিতে নানা সরঞ্জামসহ বোর্ড থেকে চুরি করে নেওয়া হাজার হাজার অরিজিনাল সার্টিফিকেট এবং মার্কশিটের ব্লাঙ্ক কপি, ট্রান্সক্রিপ্ট, বায়োডাটা, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কুষ্টিয়ার সদর এলাকার গড়াই সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক সানজিদা আক্তার কলিকে ৫ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয়। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, আসামিদের ব্যবহৃত ডিভাইস পর্যালোচনা করে কামরাঙ্গীর চরের হিলফুল ফুজুল টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ সরদার গোলাম মোস্তফা ওরফে মোস্তাফিজুর রহমান ১৮ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ীতে ঢাকা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের (মেডিকেল) পরিচালক মো. মাকসুদুর রহমান ওরফে মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয় গত ১৯ এপ্রিল। আর বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী মোছা. সেহেলা পারভীন গত শনিবার উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টরের রাজউক অ্যাপার্টমেন্ট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা যায়, আসামিদের কাছ থেকে উদ্ধার করা কম্পিউটার, প্রিন্টার, ল্যাপটপ দিয়ে আসামি একে এম শাসমুজ্জামান ও তার ব্যক্তিগত সহযোগী ফয়সাল গত কয়েক বছরে ৫ হাজারের অধিক জাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট বানিয়ে বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করেছে। একই সঙ্গে সরকারি ওয়েবসাইটে, সরকারি পাসওয়ার্ড, অথরাইজেশন ব্যবহার করে ভুয়া লোকদের মধ্যে বিক্রয়কৃত সার্টিফিকেটগুলোকে সরকারের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করেছে। ফলে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর যেকোনো দেশে বসে এ ওয়েবসাইটে গিয়ে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর গুগলে সার্চ করলে তা সঠিক পাওয়া যায়।
ডিবি জানায়, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীর তথ্য সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তন সংক্রান্ত আবেদন নিবেদনের ফোকাল পারসন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। কোনোক্রমেই সিস্টেম অ্যানালিস্ট বা কম্পিউটার অপারেটরগণ নয়। সিস্টেম এনালিস্ট বা কম্পিউটার অপারেটররা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রকদের নির্দেশে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রেখে সংবেদনশীল এ কাজগুলো করবেন। কিন্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন উপজেলা, জেলা এবং বিভাগীয় শহরে অবস্থিত সরকারি বেসরকারি কারিগরি স্কুল ও কলেজ, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক, প্রিন্সিপালরা সম্পূর্ণ অবৈধ ও অনৈতিকভাবে অসময়ে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন, রোল নম্বর সৃজন, রেজাল্ট পরিবর্তন পরিবর্ধন, নাম ও জন্ম তারিখ সংশোধনের তথ্য টাকার বিনিময়ে হোয়াটসঅ্যাপে আদান-প্রদান করেছে। এরকম প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিপরায়ণ ২৫ থেকে ৩০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে; যাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
ডিবিপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কিছু দুর্নীতিপরায়ণ সিবিএ দালাল কর্মচারী কর্মকর্তা, কম্পিউটার এবং পরিদর্শন শাখার কর্মকর্তা কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে রেজাল্ট পরিবর্তন, নাম ঠিকানা পরিবর্তন, প্রার্থীদের বয়স পরিবর্তন ও অবৈধভাবে রেজিস্ট্রেশন নম্বর, রোল নম্বর প্রদান সংক্রান্ত কাজগুলো করার সিন্ডিকেট বানিয়েছে। যারাই দায়িত্বে থাকত তাদেরই এ সিন্ডিকেটটি এ কাজগুলো করার জন্য প্রলুব্ধ করে একটা পর্যায়ে পার্সেন্টেজ পেত অথবা জিম্মি করে কাজ করিয়ে নিত। এ সিন্ডিকেট শিক্ষা বিটের কিছু ভুঁইফোঁড় অনলাইন সাংবাদিকদের মাসোহারা দিয়ে রিপোর্ট করাত অথবা রিপোর্ট করার ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিত।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে সার্টিফিকেট ও মার্কশিট ক্রয় বিক্রয়, রেজাল্ট পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়টি তথ্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারী, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিটের সাংবাদিকদের কাছে জানা ছিল অনেকদিন আগেই। তাদের কেউ রিপোর্ট করেছেন, কেউ আবার রিপোর্ট করার নামে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন, কেউ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য আংশিক রিপোর্ট করেছে।