বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ২২:৩০ পিএম
আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ২২:৩৮ পিএম
বৃহস্পতিবার বিকেলে বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন বুয়েটের ‘ছাত্রলীগমনা’ ছয় শিক্ষার্থী। গতকালও একই ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন তারা। প্রবা ফটো
হিজবুত তাহরীর ও ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে কথা বলায় প্রতিনিয়ত ‘হুমকি’ পাচ্ছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নিরাপত্তা চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ‘ছাত্রলীগমনা’ ছয় শিক্ষার্থী। তাদের অভিযোগ, প্রগতিশীল রাজনৈতিক চিন্তাধারায় বিশ্বাস এবং স্বাধীন মত প্রকাশের কারণে তারা বুলিংসহ নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এছাড়া বিভিন্ন হুমকিও দেওয়া হচ্ছে তাদের।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন তারা।
গতকালও একই ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন এ শিক্ষার্থীরা।
ওই ছয় শিক্ষার্থী হলেন- কেমিকৌশল বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী আশিক আলম, সাগর বিশ্বাস, অরিত্র ঘোষ ও ২১ ব্যাচের অর্ঘ দাস, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী তানভীর স্বপ্নীল ও বিষ্ণুদত্ত চাঁদ।
তাদের পক্ষে আজ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান আশিক আলম ও অরিত্র ঘোষ।
আশিক বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপ থেকে বের করে দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত তথ্যের ক্ষেত্রে অসহযোগিতা করা হচ্ছে। আমাদের ছবি তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে জীবন হুমকির মুখে ফেলা হচ্ছে।’
ক্যাম্পাসে বড় ধরনের ‘নাশকতার’ আশঙ্কা করে অরিত্র ঘোষ বলেন, ‘হিজবুত তাহরীর বা শিবিরের সন্ত্রাসী আক্রমণ থেকে কতটা নিরাপদ বুয়েটের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি? রাষ্ট্রযন্ত্র মেধাবীদের এই ক্যাম্পাসকে কতটা নজরদারিতে রেখেছে বা এর প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করছে আমরা জানি না। যেকোনো বড় ধরনের নাশকতার ঘটনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলে হলি আর্টিজানের মতো কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছি আমরা ক্যাম্পাসের প্রগতিশীল ছাত্র সমাজ। এ বিষয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা কতটুকু তাও আমরা জানি না। অতিসত্ত্বর বুয়েট নিয়ে তাদের কার্যক্রম জোরদার করার দাবি জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নিরাপদ ও স্বাধীন মতামত প্রকাশের ক্যাম্পাস উপহার দিন। দেশ ও দশের প্রতি ভালোবাসা রেখে সকলের কল্যাণকে মাথায় রেখে আমরা ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিস্থিতি চাই এবং জীবনের নিরাপত্তা চাই। আমরা বুয়েট ক্যাম্পাসে নিরাপদে এবং সৎ সাহসের সঙ্গে প্রগতিশীল রাজনীতির চর্চা করতে চাই। আমরা চাই না আমাদের ক্যাম্পাস জঙ্গি তৈরির কারখানা হোক।
‘আমরা চাই না দ্বীপ ভাই, সনি আপু ও আবরার ফাহাদ ভাইয়ের মত নির্মম ঘটনা ঘটুক, আমরা দ্বিতীয় কোনো হলি আর্টিজানের ঘটনাও চাই না। আমরা চাই না তন্ময় ভাইয়ের মতো কেউ শিবিরের নৃশংস হামলার ক্ষত চিহ্ন নিয়ে জীবনযাপন করুক। আমরা সবাই জানি, বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত মুক্তবুদ্ধি চর্চার মুক্ত মাঠের মতো, আমাদেরও সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আপনার কাছে এই আকুল আবেদন,’ যোগ করেন তিনি।
আশিক আরও বলেন, ‘শুধু স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য যে পরিমাণ বুলিং করা হয়েছে আমাদের ওপর, তা অকথ্য। বুয়েটের অন্যতম নক্ষত্র আবরার ফাহাদ ভাইয়ের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয়। কিন্তু এরপর র্যাগিং বা এর সঙ্গে জড়িত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আইন ভঙ্গের অভিযোগ না থাকলেও ছাত্রদের উপর শুরু হয় পাবলিক হিউমিলিয়েশন এবং ডিফেমেশন, যা হয় শুধুমাত্র স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হওয়ার কারণে।’
তিনি বলেন, ‘‘জাতির জনকের আদর্শকে পালন করতে চাইলেই আমাদের সঙ্গে বুলিং ও নানাভাবে আমাদের হাস্যরস করা হয়। আমাদের হলের রুমে বঙ্গবন্ধু ও আপনার ছবি রাখতে চাইলেও আমাদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ চেতনা’ বিষয়ক ক্লাব প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেও তার বিরোধিতা করে সমালোচনা করা হয়। যার কারণে এই ক্লাব প্রতিষ্ঠায় আমাদের পিছপা হতে হয়।’’