বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৩৮ পিএম
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৩১ পিএম
সোমবার তৃতীয় দিনের মতো ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যায় বুয়েটের ড. এমএ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে চলমান ছাত্ররাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে তারা। প্রবা ফটো
বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি থাকবে কি থাকবে না— সে সিদ্ধান্ত নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে জানান, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি না থাকার তাদের যে দাবি, তার যৌক্তিকতা নিয়ে তারা ঐক্যবদ্ধ ও অটল। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষককে নিয়ে আপামর বুয়েট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের যে আকাঙ্ক্ষা, তা সকল আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাতে পূরণ করেন; উপাচার্যের কাছে সে আর্জি তাদের।
সোমবার (১ এপ্রিল) তৃতীয় দিনের মতো ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি শেষে সন্ধ্যায় বুয়েটের ড. এমএ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে চলমান ছাত্ররাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে তারা এ আহ্বান জানান।
বুয়েটে সব রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তির’ কার্যক্রম স্থগিতের আদালতের আদেশের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা বুয়েটের শিক্ষার্থীরা দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান ও আস্থা রাখি। বুয়েট ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ২৮ মার্চ মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে বহিরাগত রাজনীতিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের আগমন ও শোডাউনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালার লঙ্ঘন বলে মনে করে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের পর ৯ অক্টোবর গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন যে, ‘অনেক প্রতিষ্ঠানেই তো সংগঠন করা নিষিদ্ধ আছে। বুয়েট যদি মনে করে তারা সেটা নিষিদ্ধ করে দিতে পারে। এটা তাদের ওপর।’ এরই ফলস্বরূপ বুয়েটের সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষকের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট প্রশাসন সকল প্রকার সাংগঠনিক রাজনীতি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করে।
বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরতে বুয়েট প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি না থাকার আমাদের যে দাবি- তার যৌক্তিকতা নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ ও অটল। যেই ছাত্ররাজনীতি র্যাগিং কালচারকে প্রশ্রয় দেয়, ক্ষমতার অপব্যবহারের পথ খুলে দেয়, যার বলি হতে হয় নিরীহ ছাত্রদের; তা আমাদের জন্য ভালো কিছু কখনোই বয়ে আনেনি, আনবেও না। এর চরমতম মূল্য হিসেবে আমরা আমাদের কেমিকৌশল ৯৯-এর সাবেকুন্নাহার সনি আপু, যন্ত্রকৌশল ৯-এর আরিফ রায়হান দ্বীপ ভাই এবং সর্বশেষ তড়িৎকৌশল ১৭-এর আবরার ফাহাদ ভাইকে হারিয়েছি। ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। মৌলবাদী শক্তিকেও আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দিতে পারি।’
বুয়েটের শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তারা আরও বলেন, আমরা বর্তমান শিক্ষার্থীরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি পূর্ণ ভরসা ও আস্থা রাখি। তাদের কাছ থেকেই আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি, তারাই আমাদের প্রতিটি ক্লাসরুম প্রতিটি ল্যাবের নায়ক। প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, লেকচারার যারাই আমাদের ক্লাস নিয়েছেন, আমরা গত চার বছরে শিক্ষার্থীরা এমনটা কখনও অনুভব করিনি যে, তারাও চান পুনরায় ছাত্ররাজনীতি প্রবেশ করুক, সেই অন্ধকার দিনগুলো ফিরে আসুক। তারা কখনোই আমাদের অকল্যাণ চাননি এবং কখনোই চাইবেনও না। তারা সব সময়ই আমাদের সকল শিক্ষার্থীদের পক্ষেই ছিলেন।
রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের আকাঙ্ক্ষা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পূরণ করতে উপাচার্যের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, আমরা আমাদের মাননীয় ভিসি স্যারের ওপর আস্থা পোষণ করি। তার সদিচ্ছা সব সময় আমাদের পক্ষে ছিল বলেই আমরা বিশ্বাস করি। তিন দিন ব্যাপী আন্দোলনের মধ্যে তিনি আমাদের সকল ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেন, বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং আমাদের কথা শোনার চেষ্টা করেন। আমরা শিক্ষার্থীরা আমাদের মাননীয় ভিসি স্যারকে এই আর্জি জানাচ্ছি- তিনি যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষককে নিয়ে আপামর বুয়েট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের যে আকাঙ্ক্ষা তা সকল আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাতে পূরণ করেন।