পরীক্ষায় অংশ নিল না কোনো শিক্ষার্থী, কাল আবার আন্দোলন

গভীর রাতে বুয়েটে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রবেশের ঘটনায় ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভে নেমেছিলেন। সকাল ৭টা থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তবে তীব্র গরমে বেশ কয়েক শিক্ষার্থী অসুস্থ বোধ করায় দুপুর ১২টার দিকে আজকের মতো আন্দোলন সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। আগামীকাল ফের আন্দোলনে নামবেন তারা।

এদিকে, বুয়েট প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আন্দোলন চলাকালে শনিবার (৩০ মার্চ) টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তবে আগেই ঘোষণা দিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করা কোনো শিক্ষার্থী এতে অংশ নেননি।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, আজ তারা পাঁচ ঘণ্টা বিক্ষোভ করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে দাবির বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সাড়া পাননি। আন্দোলনরত বেশ কয়েক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ায় আজ কর্মসূচি শেষ করা হয়েছে। তারা রবিবার একইভাবে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা ও ক্লাস বর্জন করে সকাল ৭টা থেকে বুয়েটের শহীদ মিনারে অবস্থান নেবেন।

শিক্ষার্থীদের দাবি, আবরার ফাহাদ হত্যার পর বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরও বুধবার মধ্যরাতে বহিরাগত কিছু নেতাকর্মী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিচালনা করেছে।

শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, বুধবার মধ্যরাতের পর ক্যাম্পাসে ‘বহিরাগতদের’ প্রবেশ ও রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক পুরকৌশল বিভাগের ছাত্র ইমতিয়াজ হোসেন, যিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। 

এসময় বহিরাগতদের প্রবেশ ও রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক পুরকৌশল বিভাগের ছাত্র ইমতিয়াজ হোসেনসহ তার সহযোগীদের বুয়েট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্তৃপক্ষ দাবি না মানলে ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক মিজানুর রহমানের অপসারণের দাবিতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।

শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভে গতকাল শুক্রবার উত্তাল ছিল বুয়েট ক্যাম্পাস। ছয় দফা দাবিতে গতকাল দুপুর আড়াইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত টানা বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা দাবি আদায়ে শনিবার ও রবিবারের (৩০ ও ৩১ মার্চ) পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেন। ইমতিয়াজকে বুয়েট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার, হলের সিট বাতিলসহ তার সহযোগীদেরও বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। প্রসঙ্গত, ইতোমধ্যে ২১ ব্যাচের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের হলের সিট বাতিল করেছে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তার স্থায়ী বহিষ্কার চাচ্ছেন।

দাবি আদায়ে আজ সকাল ৭টায় বুয়েট শহীদ মিনারে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে কয়েক শ শিক্ষার্থী জড়ো হন।

বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি সাংবাদিকদের লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। গতকাল শিক্ষার্থীরা যে ছয় দফা দাবি জানিয়েছিলেন, আজ সেগুলো কিছুটা নতুন করে আবার জানানো হয়।

শিক্ষার্থীদের হালনাগাদ দাবিগুলো হলো—বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে বুধবার মধ্যরাতে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক ইমতিয়াজকে আজ দুপুর ২টার মধ্যে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার; তার সঙ্গে জড়িত পাঁচ শিক্ষার্থীকে (এ এস এম আনাস ফেরদৌস, হাসিন আরমান নিহাল, অনিরুদ্ধ মজুমদার, জাহিরুল ইসলাম, সায়েম মাহমুদ) বুয়েট থেকে স্থায়ী-একাডেমিক ও হল থেকে বহিষ্কার, জড়িত অন্যদের অবিলম্বে শনাক্ত করে শাস্তি দেওয়া; ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার বিষয়ে প্রশাসনের লিখিত নোটিস ও বাস্তবায়ন; দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক (ডিএসব্লিউ) পদত্যাগ; আন্দোলনরত বুয়েট শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো রকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি।

সংবাদ সম্মেলনের পর শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বুয়েটের ড. এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভ চলার পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাদের একজন প্রতিনিধি বলেন, আজ সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা বিক্ষোভ করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে দাবির বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। আন্দোলনরত বেশ কয়েক শিক্ষার্থীও ইতোমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সেজন্য আজকের মতো তারা কর্মসূচি শেষ করছেন। আগামীকাল সকাল ৭টায় তারা আবার বুয়েট শহীদ মিনারে জড়ো হবেন।