× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

এক উপাচার্যের সময়েই ১৯৫ কর্মচারীর বেআইনি নিয়োগ!

মো. মাসুদ, চবি

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৪ ১১:৩৬ এএম

আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৪ ১১:৪৩ এএম

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল ছবি

উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের পর থেকে টানা চার বছর বিতর্কিত নিয়োগ দিয়ে সংবাদের শিরোনামে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্যবিদায়ি ভিসি অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। এই চার বছরে তিনি নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দিয়েছেন ১৯৫ জন কর্মচারীকে। এমনকি দায়িত্বের শেষদিন গত মঙ্গলবারও তিনি নিয়মবহির্ভূতভাবে ৩২ জন কর্মচারীকে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। এসব নিয়োগকে ‘অবৈধ’ বলছেন সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এসব নিয়োগের ব্যাপারে দুদকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে তদন্তের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির।

অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ২০১৯ সালের ৪ নভেম্বর। ২০২৩ সালের ৩ নভেম্বর উপাচার্য হিসেবে তার ৪ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হয়। গত মঙ্গলবার তার স্থানে নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মো. আবু তাহেরকে। ১৯তম উপাচার্য হিসেবে গত বুধবার তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সেলের তথ্য অনুযায়ী, অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দৈনিক ভিত্তিতে ১৯৫ কর্মচারীকে নিয়োগ দেন। এদের মধ্যে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ১১৩ ও চতুর্থ শ্রেণির ৮২ জন। এসবের পরও গত মঙ্গলবার তার অনুমোদনে নিয়োগ পেয়েছেন ৩৪ জন। অবশ্য বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। তার ভাষ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মচারী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের চাপের মুখে তিনি কিছু নিয়োগে স্বাক্ষর করেছেন; কিন্তু সংখ্যাটি এত বেশি কীভাবে হলো তা তিনি জানেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো শূন্য পদে নিয়োগ দিতে হলে বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়। এরপর প্রার্থীদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে মৌখিক অথবা ব্যবহারিক পরীক্ষা নিতে হয়। পরে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশের আবেদন অনুমোদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে পাঠানো হয়। সিন্ডিকেট নিয়োগের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। তবে এসব নিয়মের তোয়াক্কা করেননি সদ্য সাবেক উপাচার্য।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দৈনিক মজুরি কিংবা অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ বন্ধ রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। তারপরও এসব নিয়োগের ঘটনা ঘটেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. শামীম উদ্দিন খান বলেন, এসব অবৈধ নিয়োগ বন্ধ করতে সিন্ডিকেটের ৫৪৫তম সভায় একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান জনবল এবং সরকার অনুমোদিত জনবল কত তা জানার পর স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যথাযথ সিলেকশন বোর্ডের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলা হয়। সে অনুযায়ী, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের ওই তারিখ থেকে সব নিয়োগই অবৈধ। এসব ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের কথাও শোনা যাচ্ছে। তাই এসব বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।

প্রসঙ্গত, অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের মেয়াদকালে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ৩৬৮ জন শিক্ষক ও কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষক ১৩০ জন। অন্যরা কর্মচারী। তার মেয়াদকালে ২০২২ সালের ৩ মার্চ চবির ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে অর্থ লেনদেন-সংক্রান্ত ৫টি ফোনালাপ ফাঁস হয়।

ফোনালাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মচারীকে বলতে শোনা যায়, শিক্ষক পদে ১৬ লাখ, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী পদে ১২ লাখ এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে ৮ লাখ টাকা লাগবে নিয়োগ পেতে। শিক্ষক হতে চাইলে চট্টগ্রামের বাসিন্দার ক্ষেত্রে ১৬ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রামের বাইরের হলে ২০ লাখ টাকা লাগবে। ২০২২ সালের ৫ মার্চ ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের এই বিতর্কিত নিয়োগ বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। 

২০২২ সালের ৬ আগস্ট আরও দুটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। এতে নিম্নমান সহকারী পদের কর্মচারী মানিক চন্দ্র দাস নিজেকে সেকশন অফিসার পরিচয় দিয়ে তিন চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা আদায়ের তথ্য উঠে আসে। এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়োগে স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।

গত ২০২৩ সালের ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর পরিকল্পনা কমিটির সুপারিশকে তোয়াক্কা না করে আইন ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড ডাকা হলে প্রতিবাদ জানায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এই প্রতিবাদের পরও ভিসি বাংলোতে আইন বিভাগের নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দের পদত্যাগ দাবিতে অনশনসহ টানা কর্মসূচি পালন করে শিক্ষক সমিতি।

সাবেক উপাচার্যের এসব নিয়োগের বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত বলে মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, ‘এই সমস্ত নিয়োগ সাবেক উপাচার্য বিধিবহির্ভূতভাবে দিয়েছেন। উনি নির্দিষ্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের নির্দিষ্ট বিধি ও প্রক্রিয়া আছে। এক্ষেত্রে অনুসরণ করা না হলে তা আইনানুগ হয়নি। এটা অবৈধ। তিনি অনৈতিক ও বেআইনি কাজ করেছেন। এই সমস্ত ব্যাপক অনিয়মের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত।’

জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক হাসিনা খান বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম তদন্তে একটি কমিটি কাজ করছে। কমিটি এ বিষয়গুলোও দেখবে।’

নিয়মবহির্ভূত এসব নিয়োগ নিয়ে জানতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবু তাহেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এসব সম্পর্কে জানার লক্ষ্যে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা