মোঃ মাসুদ, চবি
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৪ ০০:১০ এএম
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল ফটো
বিতর্কিত নিয়োগের জন্য আলোচিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার দায়িত্ব থেকে বিদায় নিলেও তার স্বাক্ষরে এখনও নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যার অফিস আদেশে কোনো তারিখও উল্লেখ নেই। এই সংক্রান্ত কয়েকটি নথি প্রতিদিনের বাংলাদেশের হাতে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করেই উপাচার্যের দায়িত্বের শেষ দিন গত মঙ্গলবার অন্তত ৪০ জন কর্মচারীকে অস্থায়ী নিয়োগ দিয়েছেন ড. শিরীণ আখতার।
এসব নিয়োগকে অবৈধ বলছেন শিক্ষক সমিতি ও সিন্ডিকেট সদস্যরা।
অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ২০১৯ সালের ৪ নভেম্বর। ২০২৩ সালের ৩ নভেম্বর অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের উপাচার্য হিসেবে ৪ বছর মেয়াদ পূর্ণ হয়। অধ্যাপক শিরীণ আখতারকে সরিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মো. আবু তাহেরকে গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ১৯তম উপাচার্য হিসেবে বুধবার তিনি দায়িত্ব নেন।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী শাখার ওই নথিতে লেখা আছে, ‘ইসরাত জেরিনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলে দৈনিক ৪৫০ টাকা হারে ছয় মাসের জন্য নিম্নমান সহকারী হিসেবে নিয়োগ করা হলো।’
তারিখবিহীন অফিস আদেশ ও উপাচার্যের স্বাক্ষরিত অফিসের গোপন নথি কীভাবে চাকরিপ্রার্থীদের হাতে গেল, সেটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সচেতন মহল মনে করছেন, উপাচার্য যেমন ইচ্ছে তেমন করে সিগনেচার করে নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগ আর কয়দিন চলবে সেটিও অস্পষ্ট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো শূন্য পদে নিয়োগ দিতে হলে বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়। এরপর প্রার্থীদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে মৌখিক অথবা ব্যবহারিক পরীক্ষা নিতে হয়। পরে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশের আবেদন অনুমোদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে পাঠানো হয়। সিন্ডিকেট নিয়োগের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। কিন্তু বিদায়ি উপাচার্যের শেষ দিনে এসব নিয়মনীতি মানা হয়নি।
২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দৈনিক মজুরি কিংবা অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ বন্ধ রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশনা দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী সেলের প্রধান সৈয়দ মনোয়ার আলী বলেন, গত মঙ্গলবারে অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ জন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তারিখবিহীন অফিস আদেশ ও উপাচার্যের স্বাক্ষরিত অফিসের গোপন নথি চাকরিপ্রার্থীদের হাতে কীভাবে এলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমি জানি না। আমি শুনেছি, উপাচার্যের বাসভবনে চাকরিপ্রার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। ভিড়ের মধ্যে কীভাবে সিগনেচার করেছেন, সেটা তো বলতে পারছি না। তবে নিয়োগের বিষয়ে আমাদের কোনো হাত নেই। উপাচার্য যেটা চান, এখানে সেটাই হয়। আমরা শুধু দায়িত্ব পালন করি।
এইসব নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘এসব অবৈধ নিয়োগ বন্ধ করতে সিন্ডিকেটের ৫৪৫তম সভায় একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান জনবল এবং সরকার অনুমোদিত জনবল কত তা জানার পর স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যথাযথ সিলেকশন বোর্ডের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সিন্ডিকেটে বলা হয়েছে। ব্যক্তিগত খেয়ালখুশিমতো নিয়োগ দেশের প্রচলিত আইন ও মানবিকতা কোনো দিক থেকেই গ্রহণযোগ্য নয়। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের ওই তারিখ থেকে সব নিয়োগই অবৈধ। এগুলো বাতিলে আমরা সিন্ডিকেটে জোরালো ভূমিকা রাখব।’
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এসব অবৈধ নিয়োগের বিরুদ্ধে কথা বলে আসছি। নিয়োগ দেওয়াই যে তার একমাত্র লক্ষ্য সেটি তিনি তার শেষ কর্মদিবসে আবার প্রমাণ করে দিলেন। যেখানে বিভাগ বলছে, তাদের লোকবল লাগবে না সেখানে উপাচার্যের কেন এত আগ্রহ? এসব বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। আশা করি, সিন্ডিকেট এসব অবৈধ নিয়োগ বন্ধ করবে।
নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, ‘এসব বিষয়ে সিন্ডিকেট মিটিংয়ে আমি আলোচনা করব। বিশ্ববিদ্যালয় সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ সিন্ডিকেটই সিদ্ধান্ত নেবে।’