বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৪ ১৭:৪৮ পিএম
আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৪ ১৯:১০ পিএম
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল ফটো
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) রসায়ন বিভাগের এক নারী শিক্ষক মানহানির বিচার চেয়ে উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগপত্রে তিনি দাবি করেছেন– বিভাগের একটি ঘটনায় তার নিরপেক্ষ ভূমিকা ছিল, এ কারণে কর্মস্থলে তাকে হেয় করার প্রয়াসে লিফলেট ছাপিয়ে ক্যাম্পাসে ছড়ানো হচ্ছে। এই নারী শিক্ষকের অভিযোগ তদন্ত করছে পাঁচ সদস্যের কমিটি। তারা তদন্তে অনেক দূর এগিয়েছে, শিগগিরই সুপারিশসহ প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
অভিযোগপত্রে নারী শিক্ষক বলেন, ‘১২ ফেব্রুয়ারি ৩টা ৪২ মিনিটে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহকর্মী তার ব্যক্তিগত মোবাইল হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আমার ব্যক্তিগত মোবাইল হোয়াটসঅ্যাপে একটি লিফলেট পাঠান। তিনি লিফলেটটি আমাকে পড়ার অনুরোধ করেন। লিফলেটটি পড়ে দেখি– সেখানে আমার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে মানহানিকর কুরুচিপূর্ণ শব্দচয়ন ও মন্তব্য করা হয়েছে।’
লিফলেটে উল্লেখিত কয়েকটি বাক্য নিজের অভিযোগপত্রের সঙ্গে যুক্ত করে এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ওই নারী শিক্ষক। তিনি আরও বলেন, ‘যা আমার পেশাগত জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদা ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে সদ্য ঘটে যাওয়া একটি ঘটনায় আমার নিরপেক্ষ ভূমিকার কারণে অজ্ঞাত ব্যক্তি/ব্যক্তিরা আমাকে কর্মস্থলে হেয় প্রতিপন্ন করার ঘৃণ্য মানসিকতা থেকে লিফলেটটি বিভিন্ন ডিভাইসের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছড়াচ্ছে। এমতাবস্থায় বিষয়টি আপনার সদয় অবগতির জন্য অবহিত করছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সবিনয়ে অনুরোধ করছি।’
এই অভিযোগত্র উপাচার্যকে দেওয়া হয় ১৩ ফেব্রুয়ারি। সম্প্রতি অভিযোগপত্রের একটি অনুলিপি প্রতিদিনের বাংলাদেশের এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপাচার্যের কাছে অভিযোগ দেওয়ার আগের দিন ১২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ওই নারী শিক্ষিক। অভিযোগ পেয়ে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তদন্ত কমিটিকে দ্রুতসময়ের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল ফারুককে আহ্বায়ক ও সহকারী রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ রিয়াজুন হারুনকে সদস্য সচিব করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. মো. দানেশ মিয়া, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল আজিম ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারিহা জেসমিন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে– নিজের মানহানির অভিযোগে ওই নারী শিক্ষক বিভাগের যে ঘটনাটি ইঙ্গিত করেছেন, তা এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা। ৩১ জানুয়ারি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুল মতিনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ পেয়ে ব্যবস্থা নেয় কর্তৃপক্ষ। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ১৬ ফেব্রুয়ারি তাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ সিন্ডিকেট।
এ ব্যাপারে জানতে ওই নারী শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রতিদিনের বাংলাদেশ। তবে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্তাধীন থাকায় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে কমিটির আহ্বায়ক আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে দুবার বৈঠক করেছি। তদন্তের কাজ চলমান রয়েছে। শিগগিরই কাজ শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেব।’