প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৪ ১৭:০১ পিএম
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৪ ১৮:০৫ পিএম
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভর্তি বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। প্রবা ফটো।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি বাতিল হওয়ার পর ১৬৯ জন শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে বলে জানিয়েছে অভিভাবকরা। এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের মানসিক দিক বিবেচনা করে হলেও বাতিল সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে ভিকারুননিসা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি জানিয়েছে তারা।
শনিবার (১৬ মার্চ) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান অভিভাবকরা। এর আগে একই দাবিতে বেইলি রোডে ভিকারুননিসার মূল শাখার সামনে এ মানববন্ধন করেন তারা।
অভিভাবক এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হতে হচ্ছে এবং নানারকম বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন অভিভাবকরা।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে ১৬৯ জনের ভর্তি বাতিল করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। বাতিল শিক্ষার্থীরা বেইলি রোডের মূল শাখা, আজিমপুর, ধানমন্ডি ও বসুন্ধরা শাখার শিক্ষার্থী। এ শিক্ষার্থীরা ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা অনুসরণ না করে ১ জানুয়ারি ২০১৭ সালের পূর্বে জন্মগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো হয় এমন অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে রিট করেন একজন অভিভাবক। এরপর তাদের ভর্তি বাতিল করার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। যদিও এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে অভিভাবকরা।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবক কায়সার হোসাইন বলেন, ‘বয়সসীমার যে কথা এখন বলা হচ্ছে সেটা ভর্তির সময় কেন বলা হয়নি। আমরা সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অনলাইন আবেদন করে ভর্তি করিয়েছি। মাউশি অধিদপ্তরের লটারির ফলাফলেও তাদের নাম ছিল। সেই তালিকা থেকেই ভিকারুননিসায় বাচ্চাদের ভর্তি করানো হয়েছে। তিন মাস পর কেন ভর্তি বাতিল করা হলো?’
তিনি বলেন, ‘এই বাচ্চারা ভিকারুননিসা ছাড়া রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার ও সাউথ পয়েন্ট স্কুলসহ বিভিন্ন স্কুলের ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল। তখন বয়সের বিষয়টি বলা হলে বাচ্চাদের অন্য স্কুলে ভর্তি করাতাম।’
অভিভাবক রওশন আরা আফরোজ বলেন, ‘এখন তিন মাস পর হঠাৎ করে ভর্তি বাতিল করায় এ বাচ্চাদের কোথায় ভর্তি করাব। এর মধ্যে রোজার মাস শুরু হয়েছে। ঈদের পর অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা। এ ছাড়াও বাচ্চাদের ভর্তি বাতিল হওয়ার পর স্কুলে যেতে পারছে না। তারা এক ধরনের ট্রমাটাইজ (মানসিক যন্ত্রণা) হয়ে গেছে। অনেক বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে হাসপাতাল ভর্তি হয়েছে। বন্ধুদের সঙ্গে স্কুলে যেতে না পেরে অনেক পড়াশোনা করতে চাচ্ছে না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে আমরা আপনাদের (সাংবাদিকদের) সামনে এসেছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্য।
অভিভাবক মমতাজুর রায়হান বলেন, ‘সব জায়গায় বলা হচ্ছে এই বাচ্চাদের নাকি প্রভাব দিয়ে অবৈধভাবে, টাকার বিনিময়ে ভর্তি হয়েছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ প্রথম শ্রেণিতে কেন্দ্রীয় লটারির মাধ্যমে ভর্তির যোগ্যদের তালিকা করা হয়। সেই তালিকা স্কুল কর্তৃপক্ষকে পাঠায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। তাই ভর্তিতে কোনো অনিয়ম করার সুযোগ নেই এটা সবাই জানে। তারপরও আমাদের ওপর অভিযোগ আনা হচ্ছে যা খুবই দুঃখজনক। একদিকে বাচ্চাদের ভর্তি বাতিল অন্যদিকে মিথ্যা অভিযোগ মেনে নিতে পারছে না অভিভাবকরা। এর সঠিক ব্যাখ্যা দিতেই আজকের সংবাদ সম্মেলন করছি।’
পেশায় তিনি একজন ডাক্তার জানিয়েছে তিনি বলেন, ‘আমরা যারা এখানে এসেছি সবাই স্ব স্ব পেশায় সুপ্রতিষ্ঠিত। যখন বলা হচ্ছে টাকার বিনিময়ে বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছে এটা কোনোভাবেই আমরা মানতে পারছি না। মাউশি ও ভিকারুননিসার ভুলের খেসারত দিচ্ছে আমাদের কোমলমতি বাচ্চারা। যেই বাচ্চারা ভেবেছিল দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এ স্কুলে পড়বে সেখানে তারা এখন সে স্কুলেই যেতে পারছে না। বাসায় বসে কান্নাকাটি করে। স্কুল ড্রেস পরে বসে থাকে। এখন সে কোথায় পড়বে? তার স্কুলের ছাড়পত্র মিলবে না। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আমরা আছি।’
অভিভাবক ইঞ্জিনিয়ার আরিফ হোসাইন বলেন, ‘অনলাইন আবেদনে ৫টি স্কুল পছন্দ করার সযোগ পায়। সেক্ষেত্রে প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট দেখা সম্ভব না। এমনকি মাউশির সার্কুলারেও এ সংক্রান্ত কোনো আদেশ ছিল না। ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে জন্মগ্রহণকারী অন্যান্য শিক্ষার্থীরা যদি দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১ম শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারে তবে এই ১৬৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য কেন ভিন্নতা হবে?’
সংবাদ সম্মেলনে সৌমিত্র দে তপু, রওশন আরা আফরোজ, রাহাত আহমেদসহ অর্ধশতাধিক অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন।