× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রাবিতে ছাত্রলীগের উপস্থিতিতে ‘নাটকীয়তার’ গণইফতার

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৪ ২২:৫৮ পিএম

আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৪ ০০:১৭ এএম

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বুধবার আয়োজিত গণইফতারে যোগ দেওয়া শিক্ষার্থীরা। প্রবা ফটো

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বুধবার আয়োজিত গণইফতারে যোগ দেওয়া শিক্ষার্থীরা। প্রবা ফটো

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে ইফতার পার্টির আয়োজন নিষেধ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গণইফতার’ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৩ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে অনুষ্ঠানটি হয়। তবে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নাটকীয়তায় পূর্ণ ছিল গণইফতার অনুষ্ঠানটি।

এই কর্মসূচির আয়োজককে একাধিকবার ডেকে একান্তে কথা বলা, আয়োজক শিক্ষার্থী ‘শিবির কর্মী’ কি-না দেখতে তার মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করা, অনুষ্ঠানস্থলে দুই শিক্ষকের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ানো- এর সবই করেছেন ছাত্রলীগের ওই নেতারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, আসর নামাজের পর থেকে রাবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানস্থল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে জড়ো হতে থাকেন। তবে এসময় সেখানে হাজির হয়ে ওই শিক্ষার্থীদের চলে যেতে বলতে থাকেন মাদার বখস্ হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা তামিমসহ কয়েকজন নেতাকর্মী। পাশেই উপস্থিত ছিলেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব। কিছুক্ষণ পর সেখানে আসেন সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু।

শিক্ষার্থীদের চলে যেতে বলার বিষয়ে পৌনে ছয়টার দিকে আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, ‘আমরা কাউকে সরিয়ে দেইনি।’

এসময় তিনি গণইফতারের আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী জায়েদ এইচ জোহাকে খুঁজতে থাকেন। বলেন, ‘এটার আহ্বায়ক জোহা কোথায়? একসঙ্গে ইফতার করার জন্য আমরা তাকে ডেকেছিলাম। সে কোথায়? এই আয়োজনের জন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা কারো থেকে প্রশাসন থেকে অনুমতি নেয়নি।’

এসময় অনুষ্ঠানস্থলে আসেন জোহা। তাকে মুক্তমঞ্চের পেছনে নিয়ে একান্তে কথা বলেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। কথা শেষে সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব ইফতার হবে বলে ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গণইফতার নামে কর্মসূচির বিষয় দেখেছি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবগত না, ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোও অবগত না। আমরা এখানে এসে জটলা দেখতে পেয়েছি। এই আয়োজনের আহ্বায়ক জোহার সঙ্গে কথা বলে আমরা রাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ইফতারে অংশগ্রহণ করেছি; যাতে ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না ঘটে। সেজন্য ক্যাম্পাসের পাহারাদার হিসেবে আমরা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এই ইফতার কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছি।’

তিনি দাবি করেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল- ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা নোমানীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। সেই উপলক্ষে তারা আজ ক্যাম্পাসে কোনো একটা কর্মসূচি পালন করবে। সেটা নামে-বেনামে হতে পারে।’

‘এই আয়োজনের আহ্বায়ক জোহা শিবিরের সঙ্গে জড়িত আছে কিনা জানি না। তার সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, সে জড়িত না। তার সঙ্গে হয়তোবা ইফতারের পরে আরও কথা হবে। আপাতত ধর্মপ্রাণ মুসল্লি হিসেবে আমরা সবাই একসঙ্গে ইফতার করবে। ইফতার শেষে তার সঙ্গে কথা বলব,’ যোগ করেন এই ছাত্রলীগ নেতা।

এরপর জোহাকে পাশে বসিয়ে ইফতার করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ইফতারে বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

ইফতার শেষে ঘটনা আবার নাটকীয় মোড় নেয়। সবাইকে নামাজে যেতে বললেও জোহার সঙ্গে কথা বলতে চান ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

এসময় তাকে অন্যত্র নিয়ে কথা বলতে চাইলেও শহীদ মিনার প্রাঙ্গণেই কথা বলতে ছাত্রলীগ নেতাদের অনুরোধ করেন জোহা। তবুও একাধিকবার তাকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন ছাত্রলীগ নেতারা।

এসময় অনুষ্ঠানস্থলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান এবং সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক মনি ফেরদৌস। এই দুই শিক্ষক নামাজ শেষে জোহার সঙ্গে কথা বলার জন্য বলেন ছাত্রলীগ নেতাদের। এসময় ওই দুই শিক্ষকের সঙ্গে কিছুটা বাকবিতণ্ডায় জড়ান নেতাকর্মীরা।

একপর্যায়ে জোহা বলেন, ‘আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ ফিল করছি।’

তখন ওই দুই শিক্ষক ছাত্রলীগ নেতাদের বলেন, ‘তোমরা পরে...কাল বা পরশুওতো ওর (জোহা) সঙ্গে কথা বলতে পারবা। ওকে যেতে দাও।’

কিন্তু তাকে যেতে না দিয়ে আবারও জোহার সঙ্গে একান্তে কথা বলেন তারা। এরপর সবার সামনে নিয়ে এসে জোহাকে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি আমাদের সঙ্গে যাবা কিনা?’

জোহা বলেন, ‘যাবো ভাই।’

তখন উপস্থিত শিক্ষক বলেন, ‘তাকে (জোহা) আমরা তোমাদের জিম্মায় দিলাম। তার যেন কিছু না হয়।’

পরে জোহাকে শেরে বাংলা হলের পিছনে নিয়ে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে ‘জিজ্ঞাসাবাদ’ করেন শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে একটি রিকশা ডেকে তাকে তার মেসে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তারা।

পরে সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওকে শিবির সন্দেহে এনেছিলাম। ওর মোবাইলে মেসেঞ্জার ঘেঁটে দেখলাম, সবই ছাত্রশিবির সম্পর্কে... কিছু লেখাবার্তা বা ছাত্রলীগ বাধা দিচ্ছে, ইফতারে অমুক-তমুক... মানে একেকজনের একেকরকম তথ্য দেওয়া।’

‘ওয় (জোহা) শিবির করে, এমন কোনো তথ্য নাই ওখানে। কিন্তু গণইফতার কর্মসূচি নামে একটা গ্রুপে আছে; সেখানে ছাত্রলীগ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কনভারসেশন আছে। যেমন: ছাত্রলীগ ইফতার করতে দিচ্ছে না, মানে ওকে ইনফরমড করছে সবাই যে, এটা হচ্ছে... এটা হচ্ছে। এগুলো দেখে, ওকে ছেড়ে দিয়েছি’ বলেন তিনি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল সংগঠন ধর্মীয় ইস্যুকে ব্যবহার করে সাধারণ স্টুডেন্টের ইমোশনকে ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করতেছে। তাই আমি ও আমার সাধারণ সম্পাদক সেখানে উপস্থিত হয়ে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে ইফতার করেছি; যেন কোনো প্রতিক্রিয়াশীল সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে না পারে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা