বশেমুরবিপ্রবি
বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা
প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৪ ১৬:৫০ পিএম
আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৪ ১৭:০৩ পিএম
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষার্থীসংখ্যা ১০ হাজার। তাদের পাঠদানের জন্য মোট শিক্ষক রয়েছেন ৩১৪ জন। এর মধ্যে শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন ১১০ জন। এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষক না থাকায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়টির (বশেমুরবিপ্রবি) অধিকাংশ বিভাগের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আন্তর্জাতিক গড় অনুপাতের ন্যূনতম মানদণ্ড ধরা হয় ১:২০। অর্থাৎ প্রতি ২০ শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন শিক্ষক। সেখানে বশেমুরবিপ্রবিতে বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত রয়েছে ১:৫০। অর্থাৎ প্রতি ৫০ শিক্ষার্থীদের জন্য মাত্র ১ জন শিক্ষক।
বিশ্ববিদ্যালয়টি পাঁচটি বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে বাড়তে থাকে বিভাগ ও আসনসংখ্যা। সাবেক উপাচার্য ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন আহমেদ তার সময়কালে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিক্ষা আনুষঙ্গিক সেবা ছাড়াই পাঁচ বিভাগের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করেন মোট ৩৪ বিভাগ। এতে প্রতি শিক্ষাবর্ষে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলেও ছিল না পর্যাপ্ত শিক্ষক। পরবর্তী সময়ে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও নৈতিকতা স্খলনের অভিযোগে তিনি পদ হারালেও কাটেনি এই সংকট।
পরবর্তী সময়ে ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক একিউএম মাহবুব যোগদানের পর থেকে রিজেন্ট বোর্ড ও ইউজিসির একাধিক সভায় শিক্ষক সংকট সমাধানের কথা উত্থাপন করেন। এতে কয়েকবার শিক্ষক নিয়োগের অনুমোদন পেলেও মেলেনি উত্থাপিত নিয়োগের অনুমোদন। পরবর্তী নানা সময়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে কয়েক বিভাগে অস্থায়ীভাবে খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে তা বিভাগ ও শিক্ষার্থী অনুপাতে নেহাত কম। শিক্ষা ছুটিতে থাকা ওই শিক্ষকদের পাঠদানের ঘাটতি পূরণে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন ৬৫ শিক্ষক পাঠদান করে যাচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এক বিভাগের শতকরা ৪০ ভাগ শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে থাকার নিয়ম থাকলেও বর্তমানে এ সংক্রান্ত কোনো বিধিবিধান নেই। তবে চাকরিতে যোগদানের দুই বছর শেষে পিএইচডি ও এমফিল করতে শিক্ষা ছুটি পাওয়ার বিধান বর্তমানে কার্যকর রয়েছে। এতে পিএইচডি করার জন্য পাঁচ বছর ও এমফিল বা স্নাতকোত্তর করার জন্য সর্বোচ্চ দুই বছরের সময়সীমা রয়েছে। তবে সময়সীমা শেষে বিদেশ থেকে ফিরছেন না অনেক শিক্ষক। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান করা শিক্ষকদেরও নির্ধারিত ক্লাসের পাশাপাশি অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হচ্ছে। ফলে একাধিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠুভাবে পাঠগ্রহণ ব্যাহত হচ্ছে।
বিভিন্ন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছু বিভাগের ৫০ থেকে ৭০ ভাগ শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন।
এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২৪ শিক্ষকের মধ্যে ১৫ জন, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৬ শিক্ষকের মধ্যে ৩ জন, রসায়ন বিভাগের ১২ শিক্ষকের মধ্যে ৮ জন, মার্কেটিং বিভাগের ৮ শিক্ষকের মধ্যে ৬ জন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১০ শিক্ষকের মধ্যে ৫ জন, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ৮ শিক্ষকের মধ্যে ৪ জন, ফার্মেসি বিভাগের ১২ শিক্ষকের মধ্যে ৬ জন, পরিবেশবিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৭ শিক্ষকের মধ্যে ৪ জন, পরিসংখ্যান বিভাগের ১৪ শিক্ষকের মধ্যে ৭ জন এবং অ্যাপ্লায়েড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১২ শিক্ষকের মধ্যে ৬ জনই শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন।
এর মধ্যে অ্যাপ্লায়েড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. নুরুন্নবী, পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. পিয়ার হোসেন, ফার্মেসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উম্মে হাফসা আশা ও গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. নুরুল আনোয়ার এরই মধ্যে নিজেদের চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়ে রেজিস্ট্রার দপ্তর বরাবর আবেদন করেছেন।
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার মো. দলিলুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষা ছুটিতে থাকা শিক্ষকদের মধ্যে যাদের ছুটি শেষ হয়েছে, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার জন্য আদেশ করা হয়েছে। না ফিরলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এর মধ্যে যারা অব্যাহতির আবেদন করেছেন, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সব দেনা পাওনা মেটানো শেষে অব্যাহতি প্রদান করব।’
উপাচার্য অধ্যাপক একিউএম মাহবুব বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম থেকেই শিক্ষক সংকট সমাধানের চেষ্টা করে আসছি। ইতোমধ্যে ইউজিসি ও রিজেন্ট বোর্ডে আলোচনা করে বেশকটি বিভাগে স্থায়ী ও খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি। তা ছাড়া শিক্ষা ছুটিতে থাকা শিক্ষকরা না ফিরলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’