বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৪ ১৫:৩০ পিএম
আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৪ ১৫:৩২ পিএম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হল কক্ষের দরজা লাগিয়ে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পাঁচ ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে। বুধবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম রোকেয়া হলের ৩২৩ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই ওই হলে কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা হলে প্রবেশ করেন বলেও অভিযোগ করেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে হল গেটে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করেন তারা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ নেত্রী কর্তৃক হুমকি ও মেয়েদের হলে ছাত্রলীগ নেতাদের প্রবেশের সুষ্ঠু বিচার এবং সঠিক প্রক্রিয়ায় আবাসন ব্যবস্থার দাবি জানান। তারা বলেন, ‘যেখানে আমাদের মা-বোনদের হলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না, সেখানে ছাত্রলীগ নেতারা কীভাবে প্রবেশ করে? তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?’
হুমকির ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি তামান্না আক্তার তন্বী, রহমতুন্নেছা হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা আশরাফী ওরফে রিমি, ছাত্রলীগ কর্মী লামিয়া ইসরাত, নওরীন শৈলী ও রিয়া। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। অপরদিকে অভিযোগকারী শিক্ষার্থী হলেন রোজিনা আক্তার। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তিনি।
জানা গেছে, গত তিন মাস আগে বিশেষ সুপারিশে আবাসিকতা ছাড়াই হলের ৩২৩ নম্বর কক্ষে ওঠেন ছাত্রলীগ কর্মী লামিয়া ইসরাত। কিন্তু হলে ওঠার তিন মাস হলেও তিনি ওই কক্ষে অবস্থান করেন মাত্র দুই থেকে তিন দিন। ছাত্রী হলের প্রচলিত নিয়মানুযায়ী কেউ নিয়মিত কক্ষে না থাকলে কোনো অতিথি রাখতে পারবেন না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে নিজের আসনে দুজন পরীক্ষার্থীকে থাকতে দেন লামিয়া। তবে কক্ষে থাকাকালীন ওই দুই অতিথির (পরীক্ষার্থী) সঙ্গে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অসদাচারণ করেন বলে লামিয়ার কাছে অভিযোগ করেন তারা (পরীক্ষার্থী)।
এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেদিন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ছাত্রলীগ নেত্রী ফাতেমা আশরাফী, নওরীন শৈলী ও রিয়াকে নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করেন লামিয়া। কক্ষের দরজা লাগিয়ে দিয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে মারধরের হুমকি দিয়ে শাসাতে থাকেন তারা। এসময় তিনি চিৎকার-চেচামেচি করলে আশেপাশের কক্ষ থেকে কয়েকজন ছাত্রী ঘটনাস্থলে এসে প্রতিবাদ করতে থাকেন। এ সময় ছাত্রলীগ নেত্রীদের সঙ্গে যোগ দেন তামান্না আক্তার তন্বী। তখন শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগ নেতাদের দিয়ে পেটানোর হুমকি দিয়ে কক্ষ ত্যাগ করেন তারা। এ ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই হলে কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী হলে প্রবেশ করেন। এ সময় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন হলের আবাসিক ছাত্রীরা। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন বলে অভিযোগ আবাসিক শিক্ষার্থীদের।
এই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে রোকেয়া হলের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেণ হলের প্রায় অর্ধশত আবাসিক ছাত্রী। এ সময় তারা ছাত্রলীগ নেত্রী কর্তৃক হুমকি-ধামকি ও মেয়েদের হলে ছাত্রলীগ নেতাদের প্রবেশের সুষ্ঠু বিচার এবং সুষ্ঠু আবাসন ব্যবস্থার দাবি জানান। আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা ‘হলে কেন নিয়ম নাই, বৈধভাবে সিট চাই’ স্লোগান দেন।
অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে হলের আবাসিক শিক্ষক দুলাল চন্দ্র কবিরাজসহ আরও বেশ কয়েকজন আবাসিক শিক্ষক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা তাদের দাবিতে অনড় থেকে কর্মসূচি চালিয়ে যান। একপর্যায়ে সেখানে আসেন হল প্রাধ্যক্ষ জয়ন্তী রাণি বসাক। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর আসেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব। তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হলে প্রবেশকারী ছাত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিলে হলে চলে যান শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী রোজিনা আক্তার বলেন, ‘এ ঘটনার পর আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও নিরাপত্তা চাই। কারণ আমার পরিণতিও বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মতো হতে পারত।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগ কর্মী লামিয়া ইসরাত ফোন দেওয়া হলেও কেউ একজন ফোন ধরে বলেন, ‘লামিয়া আপু তো এখানে নাই, বাইরে গেছে।’
এদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ নেত্রী তামান্না আক্তার তন্বী।
আরেক অভিযুক্ত নওরীন শৈলী বলেন, ‘আমি আমার বান্ধবী লামিয়ার হলে ফ্রেশ হওয়া জন্য গিয়েছিলাম। সেখানে লামিয়ার সঙ্গে ওর রুমমেটের একটা ঝামেলা হয়েছিল। কিন্তু এ ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত না।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।
জানতে চাইলে প্রাধ্যক্ষ জয়ন্তি রাণি বসাক বলেন, ‘ঘটনাটি তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করছি, তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার আসল সত্যতা উঠে আসবে।’
সার্বিক বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘ঘটনা তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’