ভিকারুননিসায় যৌন নিপীড়নের অভিযোগ
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:৩৫ পিএম
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:৫২ পিএম
শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারের স্থায়ী বরখাস্ত ও শাস্তির দাবিতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। প্রবা ফটো
যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার গণিত শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারকে চাকরিচ্যুত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দেওয়ার দাবিতে প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখিয়েছে শিক্ষার্থীরা। গত রবিবার দুপুর ১২টার দিকে লালবাগের পিলখানা রোডে স্কুলের সামনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। পরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয়। এদিকে ওই দিন সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মুরাদ হোসেন সরকারকে চাকরিচ্যুত করা না হলে কঠোর আন্দোলনের পাশাপাশি আইনি পদক্ষেপে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অভিভাবকদের একটি অংশ।
মুরাদ হোসেন সরকার প্রতিষ্ঠানটির আজিমপুর দিবা শাখার গণিতের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। ২০১০ সাল থেকে তিনি এখানে পাঠদানের পাশাপাশি আজিমপুর এলাকার একটি ফ্ল্যাটে কোচিং সেন্টার খুলে ছাত্রী পড়াতেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘ভালো সম্পর্ক’ তৈরি করে ওই কোচিংয়েই তাদের যৌন হয়রানি করে আসছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে সম্প্রতি। গত ৭ ফেব্রুয়ারি কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে মুরাদ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। এ নিয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি সামনে আসে। গত শনিবার এক অফিস আদেশে মুরাদকে আজিমপুর শাখা থেকে প্রত্যাহার করে বেইলি রোডে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। একই সঙ্গে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।
কিন্তু শিক্ষার্থীরা তার স্থায়ী বহিষ্কার ও বিচারের দাবিতে রবিবার ক্যাম্পাসের গেটে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘মুরাদ হোসেন সরকার, জেলে যাওয়া দরকার’, ‘মুরাদের আস্তানা, ভিকারুননিসায় থাকবে না’, ‘এক দফা এক দাবি, মুরাদ তুই জেলে যাবি’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়।
একাদশ শ্রেণির বাণিজ্য শাখার একজন শিক্ষার্থীর দাবি, ‘উনাকে স্থান পরিবর্তন করে অন্য জায়গায় সংযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দাবি হচ্ছে উনাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা। একেবারে প্রজ্ঞাপন দিয়ে বহিষ্কার করা, যাতে আর কোথাও শিক্ষকতার নাম করে বা কোচিং ব্যবসার নাম করে এমন কাজ না করতে পারে।’ চতুর্থ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘এই শিক্ষকদের কাছে আমাদের মেয়েরা কোচিং করে। আমরা তাদের বিশ্বাস করে পড়াতে দিয়েছি। কিন্তু তারা যদি এ বিশ্বাস না রাখে তাহলে আমরা অসহায় হয়ে যাই।’
আরও পড়ুন: বদলি নয়, মুরাদের স্থায়ী বরখাস্ত চায় ভিকারুননিসার শিক্ষার্থীরা
আজিমপুর ক্যাম্পাসের দিবা শাখার প্রধান শাবনাজ সনিয়া কামাল বারবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিচার বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলেও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকে। শাবনাজ সনিয়া কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আগে কোনো দিন কোনো মেয়ে অভিযোগ দেয়নি। এবার বিভিন্ন লেখালেখির মাধ্যমে সবাই মুখ খুলছে। আমাদের কাছে কিছু মেয়ে এসেছে। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, এত দিন বল নাই কেন? তারা বলল, লোকলজ্জার ভয়ে বলেনি। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনার দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’
মানববন্ধন শুরুর প্রায় দুই ঘণ্টা পরে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী এসে শিক্ষার্থীদের বিচারের আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা আমার মেয়ের মতো। আমি তোমাদের ভালো চাই সব সময়। আজ আমরা মিটিং করতে পারব না। আমরা তদন্ত কমিটির সদস্যসহ মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেব। আইনগতভাবে সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত নেব আমরা।’
পরে আরও ঘণ্টাখানেক বিক্ষোভ চালিয়ে বেলা ৩টার দিকে আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দেয় শিক্ষার্খীরা।
শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে অভিভাবকদের একটি অংশ শিক্ষক মুরাদের বিচারের দাবিতে রবিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে। এ সময় তারা মুরাদকে চাকরিচ্যুত না করলে কঠোর আন্দোলনের পাশাপাশি আইনি পদক্ষেপে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তারা তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিয়ে চিন্তিত যেসটা শতভাগ নিরপেক্ষ হবে কি না। তবুও তারা অপেক্ষা করছেন কর্তৃপক্ষ কী সিদ্ধান্ত নেয় তা দেখার জন্য।
আরও পড়ুন: ভিকারুননিসার শিক্ষক মুরাদ দুই দিনের রিমান্ডে
এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, অভিযোগ ওঠা শিক্ষকের পক্ষে কিছু শিক্ষার্থীকে দেখা যাচ্ছে কেন? জবাবে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘মুরাদ হোসেনের পক্ষেও কিছু শিক্ষার্থী কথা বলছে। উনি সব শিক্ষার্থীর সাথে তো এমন করেননি। তো যাদের সাথে করেননি তারা তো উনাকে ভালো হিসেবেই চেনে। তাই তারা মানতে পারছে না।’