ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:১১ পিএম
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:২৮ পিএম
প্রতিদিনের বাংলাদেশের প্রতিবেদকের সঙ্গে টেলিগ্রামে কথা হয় প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সদস্যের। স্ক্রিনশট থেকে নেওয়া।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি)। প্রথম ধাপে কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট দিয়ে শুরু হবে পরীক্ষা। ভর্তি পরীক্ষার আগের দিন বৃহস্পতিবার ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে দেওয়ার দাবি করেছে একটি চক্র।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চক্রের এক সদস্যের টেলিগ্রাম আইডিতে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থী সেজে প্রশ্নের বিষয়ে সাহায্য চান প্রতিদিনের বাংলাদেশের এক প্রতিবেদক। ওই টেলিগ্রাম আইডির নাম আহমেদ নিলয়। তার টেলিগ্রাম প্রোফাইল ইউজার নেম আপাতত গোপন রাখা হলো। তার টেলিগ্রাম বায়োতে লেখা রয়েছে, ‘প্রশ্ন ফাঁস করা শুধু আমার পেশা নয়, এটি আমার একটি নেশা।’
ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের বিষয়ে জানতে চাইলে মেসেজ দিয়ে তিনি জানান, প্রশ্ন পেতে হলে কিছু শর্ত মানতে হবে। শর্ত কী জানতে চাইলে তিনি জানান, দিতে হবে ৫০ হাজার টাকা। অগ্রিম দিতে হবে ২০ হাজার টাকা আর পরীক্ষার পর দিতে হবে ৩০ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে আজকে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার মধ্যে বিকাশ বা নগদ নম্বরে ২০ হাজার টাকা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটের প্রবেশপত্রের স্বচ্ছ ছবি দিলেই যুক্ত করা হবে গোপন গ্রুপে, যেখানে দেওয়া হবে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর।
কীভাবে তারা প্রশ্ন পাবেন সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন যেখানে ছাপানো হয় সেই প্রেসে আমাদের লোক থাকে, আমরা সেখান থেকে প্রশ্ন কালেক্ট করে নেই, শতভাগ কমন পড়বে। এত শিক্ষার্থীদের সাথে আমরা প্রতারণা করব না।’
দুজন প্রশ্ন নেওয়ার কথা বলে দর-কষাকষি শুরু হয় চক্রের সঙ্গে। প্রতিবেদক চক্রের সদস্যকে বলেন, তারা দুই বন্ধু প্রশ্ন নেবেন, তবে কিছু টাকা কম দেবেন। উত্তরে প্রতারক চক্রের সদস্য বলেন, ‘কত টাকা কম দিতে চান।’ জানানো হয় দুজনে মিলে ৫০ হাজার টাকা দিতে চাই আমরা। দর-কষাকষির একপর্যায়ে ৬০ হাজার টাকায় দুজনকে প্রশ্ন দেওয়ার জন্য রাজি হন তিনি। এক্ষেত্রে দুজন মিলে প্রথমে ৩০ হাজার এবং পরীক্ষার পর বাকি ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে রফা করা হয়। এর কমে তিনি প্রশ্ন দিতে পারবেন না বলে জানান।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার মধ্যে বিকাশ পার্সোনাল নম্বরে (০১.......৯৭) টাকা পাঠাতে বলা হয়। টাকা পাঠিয়ে প্রবেশপত্র পাঠাতে বলা হয়।
প্রতিদিনের বাংলাদেশের প্রতিবেদককে পাঠানো একটি মেসেজে বলা হয়, ‘গ্রুপের সকল শিক্ষার্থীর উদ্দেশ্য করে বলছি। প্রথমেই বলা হচ্ছে বিষয়টা গোপন রাখার জন্য। আশা করি কথাগুলো কেউ ভাইরাল করবে না। তোমাদের মধ্যে মোট ৩০ জন পরীক্ষার আগের রাতে শতভাগ সঠিক উত্তরসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটের প্রশ্ন পাবে। আমরা কন্ট্রাক্ট ডিল করে প্রশ্নটা কিনে নিচ্ছি কোনো একটা লিংক থেকে। আমাদের কোচিং সেন্টারের মোট ৭০ জন ছাত্র আর এই গ্রুপ থেকে মোট ৩০ জন ছাত্র নেওয়া হবে। সর্বমোট ১০০ জন প্রশ্ন পাবে। প্রশ্ন দেওয়া হবে পরীক্ষার আগের রাত ৩-৪টার মধ্য। তবে কিছু শর্ত সাপেক্ষে প্রশ্ন দেওয়ার জন্য বাছাই করা ৩০ জনকে আমাদের গোপন গ্রুপে যুক্ত করানো হবে। আর এই গোপন গ্রুপে প্রশ্ন দেওয়া হবে।’
সেখানে আরও বলা হয়, ‘শর্তের কোনও নড়চড় হবে না, যারা প্রশ্ন নিতে চাও, তারা এই শর্ত মেনে দ্রুত আমাকে টেলিগ্রামে মেসেজ দিয়ে রাখো।’
তারা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘কথাগুলো তোমাদের বলতাম না। তবে তোমাদের মধ্য কয়েকজনের অনুরোধে এ কথাগুলো বললাম। কেউ নিতে চাইলে অবশ্যই আমাকে টেলিগ্রামে মেসেজ দিবে। অবশ্যই টেলিগ্রামে মেসেজ দিবে, হোয়াটসএপে মেসেজ দিলে রিপ্লে পাবে না। আর কেউ টেলিগ্রামে কল দিবে না। শুধু মেসেজ/ ভয়েস মেসেজ দিবে। যারা গ্রুপ থেকে সাহায্য পেয়েছ তারা গ্রুপে যুক্ত হয়ে থাকো। আর যারা প্রশ্ন নিবে না তারা গ্রুপ থেকে বের হতে চাইলে বের হতে পারো।’
এ বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল ও উপউপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। তবে ‘কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট’ ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের বক্তব্য পাওয়া যায়।
অধ্যাপক জিয়া রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা জেনেছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য, উপউপাচার্য ও প্রক্টর মহোদয়কে জানিয়েছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আমরা ওই ব্যক্তির তথ্য জানিয়েছি। তারা দেখতেছে।’ প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের বিব্রত না হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।