যৌন হয়রানির অভিযোগ
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:০৫ পিএম
শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় দিনের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ড. নাদির জুনাইদকে তিন মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। প্রবা ফটো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদকে তিন মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় দিনের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে নাদির জুনাইদকে সকল একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে ছুটিতে পাঠানো হয়।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সিদ্ধান্ত আসার পর বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ছুটির আদেশ শিক্ষার্থীদের পাঠ করে শোনানো হয়।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়রাম্যান অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহাম্মদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে এক শিক্ষার্থীর যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়ন এবং আরেক শিক্ষার্থীর যৌন হয়রানির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগের বিচার চেয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো সোমবার সকাল থেকে আন্দোলন করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা বিভাগের করিডোরে এসে জড়ো হতে থাকে। এ সময় তারা নাদির জুনাইদের বিচার চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। পরবর্তী সময়ে দুপুর ১টায় বিভাগে ড. নাদির জুনাইদের কক্ষ তালাবদ্ধ করে দেয়। এরপর আবারও ২টার দিকে বিভাগের ক্লাসরুম সিলগালা করে দেয় শিক্ষার্থীরা।
বেলা ২টা নাগাদ ৩ দফা দাবিতে স্মারকলিপি দিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে যায়। উপাচার্য কার্যালয়ে না থাকায় শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম, বিভাগের চেয়ারম্যান ও দুজন শিক্ষক আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা শিক্ষার্থীদের জানান বিকেল ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত আসবে।
একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহাম্মদ উপাচার্যের কাছে নিয়ে যান। তিনদফা দাবি গুলো হল- অভিযোগ তদন্তের জন্য দ্রুততম সময়ে তদন্ত কমিটি গঠন, ওই শিক্ষককে শাস্তির আওতায় আনা, তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত শিক্ষককে সকল একাডেমিক কাজ থেকে বিরত রাখা।
বিকাল ৩টায় শিক্ষার্থীরা বিভাগের করিডোরে গিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। বিকেল ৪টার কিছু সময় পরে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড. নাদির জুনাইদের কাছে পাঠানো একটি চিঠি আন্দোলনকারীদের পড়ে শোনান। চিঠিতে বলা হয়, ‘বিভাগের শিক্ষার্থীদের গতকাল রবিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে আপনাকে (অধ্যাপক নাদির জুনাইদ) সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য আজ থেকে তিন মাসের জন্য ছুটি দেওয়া হল।’
‘আপনার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের যথাযথ অনুসন্ধান ও তদন্ত করার জন্য বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করা হবে এবং সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর আগে গত শনিবার দুপুরে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের একজন শিক্ষার্থী বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এসময় লিখিত অভিযোগের সঙ্গে তিনি প্রমাণস্বরূপ কিছু কল রেকর্ড এবং স্ক্রিনশট সংযুক্ত করেন। ঐ শিক্ষার্থীর অভিযোগ দেওয়ার পর শনিবার রাতেই অনির্দিষ্টকালের জন্য বিভাগের সকল ক্লাস ও একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা। পরে রবিবার ওই শিক্ষককে ক্যাম্পাস থেকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবিতে আন্দোলন করেন তারা। এ দিকে রবিবার বিকালে প্রক্টর বরাবর আরও একজন শিক্ষার্থী নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ দেন।