জাবিতে নারী ধর্ষণ
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:১৮ পিএম
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৪৭ পিএম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবি ও অব্যাহত নারী নিপীড়নের প্রতিবাদে বিক্ষোভ-মিছিল করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছয়টি বাম ছাত্রসংগঠন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ায় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিক্ষোভ-মিছিল শেষে বিক্ষোভকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ-হিল-গালিব ও তার অনুসারীদের সঙ্গে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের বাগবিতণ্ডা হয়।
বিক্ষোভ-মিছিল থেকে ‘জাবিতে ধর্ষক কেন, শেখ হাসিনা জবাব চাই’, ‘ধর্ষক তৈরির কারখানা জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও’, ‘শিক্ষা-ছাত্রলীগ, একসাথে চলে না’, ‘আমার বোন ধর্ষণ কেন, শেখ হাসিনা জবাব চাই’, ‘ছাত্রলীগের কালো হাত, জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও’, ‘রুখে দিতে ধর্ষণ, রাবি করো গর্জন’ প্রভৃতি স্লোগান দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে নাগরিক ছাত্র ঐক্যের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মুন্না বলেন, ‘বিক্ষোভ-মিছিলের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বাধা সৃষ্টি করেন। যে দেশে গণতন্ত্রের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই, সে দেশে তো তারা বাধা দেবেই; এ বিষয়ে তাদের লাইসেন্সও রয়েছে। সরকারের কাছ থেকেই তারা এই অধিকার পেয়েছে।’
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন রাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব হোসেন বলেন, ‘ধর্ষণের প্রতিবাদে আমরা বিক্ষোভ-মিছিল করছিলাম। এ সময় আমাদের বিক্ষোভ-মিছিলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাধা দেয়। আমরা এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা মনে করি, ধর্ষণের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন, এটি সামনে আরও বেগবান হবে। ছাত্রলীগের বাধাকে উপেক্ষা করে আমাদের কার্যকলাপ সামনে এগিয়ে যাবে।’
ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি রায়হান আলি বলেন, ‘‘কোন দেশ আছে যে সরকারপ্রধানকে প্রশ্নের মুখোমুখি করা যাবে না। ‘শেখ হাসিনার কাছে জবাব চাই’—এমন স্লোগান নাকি আমরা দিতে পারব না। ২০২০ সালে সিলেটের এমসি কলেজে ধর্ষণ, ২০১৮ সালে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ধর্ষণের ঘটনা আমরা দেখেছি। কিন্তু এগুলোর একটারও বিচার হয় না। এদের সঙ্গে জড়িত কারা? ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরাই এসব কাজে লিপ্ত। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলেই আমাদের বাধা দেওয়া হয়।’’
অভিযোগের বিষয়ে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, ‘কিছু ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মী আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রীর নামে কটূক্তিমূলক কথা এবং ছাত্রলীগের নামে বিতর্কিত স্লোগান দিচ্ছিলেন। ক্যাম্পাসে সরকার ও ছাত্রলীগের নামে স্লোগান দিতে নিষেধ করেছি। ব্যক্তির দায় কখনও সংগঠন নেবে না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের যে সকল নেতাকর্মী ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ইতোমধ্যেই ব্যবস্থা নিয়েছে এবং তাদের সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের কাছে আমি অনুরোধ জানিয়েছি, এ ক্যাম্পাস আমার-আপনার সবার, ক্যাম্পাসকে স্থিতিশীল রাখতে আমাদের ভূমিকা রাখতে হবে।’
শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলসংলগ্ন জঙ্গলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর শাখা ছাত্রলীগের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমানকে রবিবার ভোরে সাভার থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।