বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:১৮ পিএম
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০০:০৮ এএম
জাবিতে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায়’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। প্রবা ফটো
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামীকে বেঁধে রেখে নারীকে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায়’ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে কর্মসূচি থেকে ঘটনার পেছনে যারা ইন্ধনদাতা তাদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবিও উঠেছে।
রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক আলী বলেন, ‘জাবিতে এই ধরনের ঘটনার পেছনে যারা ইন্ধন দিচ্ছে তাদের জাতির সামনে উপস্থাপন করতে হবে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের মা-বোনদের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছিল সেই নির্যাতনের প্রতিচ্ছবি শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছি। এটি কখনও একটি স্বাধীন দেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র হতে পারে না। এ ঘটনার পেছনে যারা ইন্ধন দিচ্ছে তাদের বের করে জাতির সামনে আনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন হল প্রভোস্ট অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন। ‘ভুক্তভোগীরা’ যখন আশুলিয়া থানায় গেছে তখন তাদের সাভার থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আইনি মারপ্যাঁচে তাদের ভোগান্তিতে ফেলা হয়েছে। অতীতের ঘটনাগুলোর যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতো তাহলে এই নরপশুরা আবার এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটাতে পারত না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক আগাছার উপদ্রব হয়েছে। আগাছাগুলো গাছের মতো হয়ে শেকড় ছড়িয়েছে। এই আগাছার যদি উৎখাত করা না হয়। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবারও নারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা শঙ্কিত উল্লেখ করে দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী অদিতি ইসলাম বলেন, ‘আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে এই ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি এর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আমরা ছাত্রসমাজ তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলব।’
সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে আশুলিয়া থানায় রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ৬ জনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে। এজাহারে বলা হয়েছে, ওই নারী ও তার স্বামী আশুলিয়ায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে একই বাসায় পাশাপাশি কক্ষে ভাড়া থাকতেন আসামি মামুনুর রশিদ।
শনিবার মোবাইল ফোনে ওই নারীর স্বামীকে মামুন জানান, তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলে তার পরিচিত মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কিছুদিন থাকবেন। পরে তিনি তাকে ক্যাম্পাসে এসে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। ওই নারীর স্বামী ক্যাম্পাসে গিয়ে হলের একটি কক্ষে মুস্তাফিজ ও মুরাদের সঙ্গে পরিচিত হন।
একপর্যায়ে মামুন ওই নারীর স্বামীকে জানান, সাভারের একটি ইলেকট্রনিকসের দোকানে তারা কিছু টাকা পাবেন। তবে দোকানদার টাকা দিতে চাচ্ছেন না। তিনি এর বদলে পণ্য নেওয়ার কথা বলছেন। বিষয়টি জানিয়ে, বাদীর স্বামীকে বাসার জন্য টিভি, ফ্রিজসহ অন্যান্য জিনিসপত্র নিতে বলেন। প্রস্তাব দেন, দোকান থেকে জিনিস নিয়ে নগদ টাকা তাকে দিতে।
ওই নারীর স্বামী তার স্ত্রীকে নিয়ে দোকানে যাবেন। তাই স্ত্রীকে ফোন করে জাহাঙ্গীরনগর আসতে বলেন এবং আসার সময় বাসা থেকে মামুনের জন্য কিছু কাপড় নিয়ে আসতে বলেন। এরপর অভিযুক্ত মোস্তাফিজ ও মামুন মিলে ওই নারীর স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে আটকে রাখেন।
পরে অভিযোগকারী নারী ক্যাম্পাসে এলে তার কাছ থেকে কাপড় নিয়ে কক্ষে রেখে আসতে যান মামুন। এরপর মামুন কক্ষ থেকে ফিরে এসে ওই নারীকে বলেন, তার স্বামী হলের অন্য গেট (জঙ্গলের দিক) দিয়ে আসবেন। পরে তাকে হল সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করেন মোস্তাফিজ ও মামুন।
ওই নারী বলেন, ‘মামুন ভাই আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতেন। তিনি আমার স্বামীর মাধ্যমে ফোন দিয়ে আমাকে তার রেখে যাওয়া জিনিসপত্র বাসা থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যেতে বলেন। আমি তার জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে যাই।
‘এরপর মামুন আমার স্বামীকে তার জিনিসপত্রগুলো নিয়ে হলে রেখে আসতে বলে। স্বামী চলে গেলে তারা আমাকে হলের সামনে থেকে পাশের জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যায়। তার সাথে মোস্তাফিজুরও ছিল। তখন তারা আমাকে জোর করে ধর্ষণ করে।’
ঘটনার বিচারের দাবিতে প্রথমে তারা আশুলিয়া থানায় এবং পরে সাভার মডেল থানায় যান। পরে পুলিশ তিনজনকে ক্যাম্পাস থেকে আটক করে। এর মধ্যে সাভার থানা এলাকা থেকে ধর্ষণে অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করা হয়। রবিবার সকালে মামলা হলে তাদের গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।