খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:৪২ পিএম
আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:৫৯ পিএম
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার দক্ষিণ গাড়পাড়া উচ্চবিদ্যালয়। প্রবা ফটো
দিনাজপুরের খানসামায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ১৩ শিক্ষার্থী এক বছরেও দুই বিষয়ের পাঠ্যবই পায়নি। সহপাঠীদের কাছ থেকে ধার করা বই ও গাইড কিনে পড়ালেখা করে মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নবম থেকে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে তারা। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ গাড়পাড়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।
এ ঘটনায় ওই বিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান শিক্ষক চিত্তরঞ্জন রায়কে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে খানসামা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার।
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বিকালে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মনজুরুল হক সই করা এক চিঠিতে তাকে শোকজ করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ২০২৩ সালে আপনার বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ১৩ শিক্ষার্থীকে আংশিক পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করেননি বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। ওই ১৩ শিক্ষার্থী বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। এ বিষয়ে আপনার সুস্পষ্ট জবাব তিন কর্ম দিবসের মধ্যে উক্ত দপ্তরে প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা হল।
বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মনজুরুল হক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে। সেই সঙ্গে তার কাছে সংরক্ষিত বইগুলো দ্রুত শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করতে বলা হয়েছে।
সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ গাড়পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের দশম শ্রেণির ১৩ শিক্ষার্থী বাংলা দ্বিতীয় পত্র ও কৃষি শিক্ষা পাঠ্যবই এত দিনেও হাতে পায়নি। এ জন্য প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করেছেন অভিভাবক ও সচেতন সমাজ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দশম শ্রেণির একাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানায়, প্রধান শিক্ষককে বইয়ের কথা বলতে গেলে তিনি ধমক দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বই আছে, বের করতে সময় লাগবে।’ একাধিকবার বইয়ের কথা জানানোর পরও তিনি ব্যস্ততাসহ বিভিন্ন অজুহাত দিতেন। এভাবে বছর চলে যাচ্ছিল, এবং বিভিন্ন পরীক্ষা চলে আসছিল। বাধ্য হয়ে তারা গাইড বই কেনাসহ অন্য সহপাঠীদের বই নিয়ে পড়ালেখা করেছেন।
ডন চন্দ্র রায় নামে এক অভিভাবক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, নবম থেকে দশম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা উঠল কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা বই দুইটা পেল না। শিক্ষার্থীরা কীভাবে পড়বে? এ বছরে তাদের যে ক্ষতি হয়ে গেল সেটা কীভাবে পূরণ হবে। শিক্ষকদের এমন উদাসীনতা আসলেই মেনে নেওয়া যায় না। এ জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ও নজরদারি প্রয়োজন।’
শিক্ষার্থীদের বই না পাওয়ার বিষয়ে জানতে দক্ষিণ গাড়পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চিত্তরঞ্জন রায়ের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি এই প্রতিবেদকে বলেন, ‘বই নাই, বই খুঁজতে হবে। গোডাউনে আছে মনে হয়, না হলে পুরাতন বই দিব।’
বই না দিয়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন কীভাবে করলেন, জানতে চাইলে তিনি কল কেটে দেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তাজউদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিষয়টি অবগত হয়েছি। দ্রুত সময়ে শিক্ষার্থীদের বই প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বই প্রদানে গাফিলতি থাকলে জড়িতদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গত বছরের এসএসসি পরীক্ষায় এই স্কুলের ১২ জন শিক্ষার্থী মানবিক বিভাগ থেকে অংশগ্রহণ করে ৫ জন উত্তীর্ণ হয়। নেই বিজ্ঞান বিভাগের কোনো শিক্ষার্থী। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ অধিকাংশ শিক্ষক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় ভয়ে অভিভাবকেরা স্কুলের বেহাল অবস্থা ও শিক্ষকদের এমন উদাসীনতার প্রতিবাদ করতে পারে না।