ইউছুব ওসমান,জবি
প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:৪৬ পিএম
আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:০১ পিএম
বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দেড় যুগ পেরিয়ে ইতোমধ্যেই ১৯ বছরে পদার্পণ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। তবে দীর্ঘ এ সময়ে অনেক ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড রক্ষা করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি। এমনকি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নেই ছাত্র-শিক্ষককের অনুপাতেও।
বিশ্বের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক শিক্ষার্থীদের গড় আন্তর্জাতিক অনুপাতের নূন্যতম মানদণ্ড ধরা হয় ১:২০। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য থাকবেন একজন করে শিক্ষক। আন্তর্জাতিক এই মানদন্ডের অনুপাত বজায় নেই জবিতে।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রকাশিত ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত ১:২৪। প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৩৬টি বিভাগ ও ২টি ইন্সটিটিউটের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখতে পেরেছে মাত্র ১৪টি বিভাগ ও ১টি ইন্সটিটিউট। বাকি ২২টি বিভাগ ও একটি ইনস্টিটিউট মানদন্ড রাখতে পারেনি।
ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৩৬টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নরত মোট শিক্ষার্থী রয়েছেন ১৫ হাজার ৯৬০ জন এবং শিক্ষক রয়েছেন ৬৭৮ জন। যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মানদণ্ডের অনুপাত ১:২৪। অর্থাৎ প্রতি ২৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছেন মাত্র ১ জন শিক্ষক।
আন্তর্জাতিক এই মানদণ্ডের বাইরে থাকা বিভাগগুলোর মধ্যে কলা অনুষদের ৮টি, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ৪টি, বিজ্ঞান অনুষদের ১টি, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ৭টি, আইন অনুষদের ২টি বিভাগ এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলোর মধ্যে আইন বিভাগ এবং ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগ এই মানদণ্ডে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে। আইন বিভাগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৪০। বিভাগটিতে ৫৫৪ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন ১৪ জন। অনেক শিক্ষক শিক্ষা ছুটি নিয়ে বাইরে থাকায় এই অবস্থা বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৩৯। প্রতি ৩৯ জনের জন্য রয়েছেন একজন শিক্ষক।
এ মানদণ্ড বজায় রাখতে পারেনি বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের কোনো বিভাগ। এর মধ্যে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১:৩৭, মার্কেটিং বিভাগে ১:৩১, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে ১:৩৬ ফিন্যান্স বিভাগে ১:৩২।
এ ছাড়াও কলা অনুষদের বাংলা বিভাগ, ইতিহাস বিভাগ, ইংরেজি বিভাগ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, দর্শন বিভাগ, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, সংগীত বিভাগ ও নাট্যকলা বিভাগ, বিজ্ঞান অনুষদের পরিসংখ্যান বিভাগ,সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অর্থনীতি বিভাগ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, সমাজকর্ম বিভাগ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, লোক প্রশাসন বিভাগ ও ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটেই নেই যেসব বিভাগে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত। তবে মানদণ্ডে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে লাইফ এন্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের ফার্মেসি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ। এই বিভাগ দুইটিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:১০।
এদিকে শিক্ষক সংকট নিরসনে বেশ কয়েকটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও অনেকগুলো নিয়োগবোর্ড স্থগিত রয়েছে। কয়েকটি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ সিন্ডিকেটেও আটকে রয়েছে। এসব বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হলে এই মানদণ্ডে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কিছুটা উন্নতি করবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এস এম মাসুম বিল্লাহ বলেন, ইতোমধ্যে দুইজন শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে আইন বিভাগে। অনেকেই শিক্ষা ছুটিতে আছেন। নানা দেশ থেকে তারা উচ্চশিক্ষা নিয়ে ফিরবেন। আমরা শিক্ষার্থীদের প্রতি আন্তরিক। ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগে দুজন শিক্ষক নিয়োগ হতো কিন্ত সে সময় প্রয়াত উপাচার্য স্যার অসুস্থ থাকায় বোর্ড বসেনি। আশা করছি নতুন উপাচার্য মহোদয় দ্রুতই এর একটা ব্যবস্থা নেবেন।
জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতির নবনির্বাচিত সভাপতি অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:২৪ হলেও এইটা সকল বিভাগের ক্ষেত্রে নয়, কোনো কোনো বিভাগে শিক্ষক সংকট আছে, আবার কোনোটিতে নেই। আবার অনেক বিভাগের শিক্ষক, ছুটিতেও আছেন। তবে, শিক্ষার গুণগতমান বজায় রাখতে হলে সংকট পূরণের জন্যে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, আমাদের শিক্ষক নিয়োগের যে বোর্ডগুলো আটকে রয়েছে সেগুলো জাতীয় নির্বাচনের আগে করা সম্ভব না। নির্বাচনের পরে উপাচার্যের অনুমতিক্রমে দ্রুতই বোর্ডের আয়োজন করা হবে।