বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:৩৪ পিএম
ছাত্র ইউনিয়ন নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার বিচারের দাবি জানিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশের) নেতারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। প্রবা ফটো
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মিছিলে ও পরবর্তীতে ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের ওপর হামলায় জড়িত ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের’ চিহ্নিত করে প্রশাসনিকভাবে আইনানুগ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশের) নেতৃবৃন্দ।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তুলে ধরেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে অভিযোগপত্রও জমা দেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্র ইউনিয়ন একাংশের সভাপতি রাগীব নাঈম। এ সময় তিন দফা দাবি তুলে ধরা হয়। তাদের দাবি হলো, সাবেক ছাত্রনেতা বিপুল চাকমাসহ চারজনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার বিচার করা, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মিছিলে ও পরবর্তীতে ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের ওপর হামলায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের চিহ্নিত করে প্রশাসনিকভাবে আইনানুগ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং ভাস্কর্য নীতিমালা পরিপন্থি কর্মকাণ্ড বন্ধ করা। পাশাপাশি আগামী ২০ ডিসেম্বর বিকাল ৩টার দিকে টিএসসি সঞ্জীব চত্বরে সন্ত্রাসবিরোধী আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ২২ ডিসেম্বর ৩টার দিকে পাহাড়ে সেনা শাসন হটাও ও সারা দেশে সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস দাবিতে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ করবে সংগঠনটি।
রাগীব নাঈম বলেন, গত ১১ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ির পানপছড়িতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ পিসিপির সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল চাকমা, পিসিপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সুনীল ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নেতা লিটন চাকমা ও ইউপিডিএফ সদস্য রুহিন বিকাশ ত্রিপুরাকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মশাল মিছিল ঘোষণা করা হয়। মশাল মিছিলের এক পর্যায়ে বিজয় একাত্তর হলের সামনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা উসকানিমূলক আচরণ প্রদর্শন করে। পরবর্তীতে উসকানিতে এড়াতে মিছিলের নির্ধারিত রাস্তা পরিবর্তন করে মসজিদের গেট দিয়ে বের হয়ে মিছিল শেষে মিলন চত্বরে সমাবেশের প্রাক্কালে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা হামলা করে। এতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মেঘমল্লার বসুসহ গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের ৩০ জন আহত হন। এতেও ক্ষান্ত না হয়ে রাজু ভাস্কর্য কালো কাপড়ে ঢেকে দেয় ছাত্রলীগ। নিজেরাই সন্তাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে ছাত্র ইউনিয়নকে সন্ত্রাসী সংগঠন অ্যাখ্যা দেয়।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘মিছিলে হামলার একদিন বাদে ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবসে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণের পর টিএসসি এলাকায় ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ চা খাওয়া শেষে নিজ নিজ কাজে ফেরার পথে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি মেঘ মল্লার বসু ও ঢাকা মহানগর সংসদের সহকারি সাধারণ সম্পাদক তাহমিদ তাজোয়ার শুভ্রের উপর শাহবাগে, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক মাঈনের ওপর মিলন চত্বর ও স্বোপার্জিত স্বাধীনতা সংলগ্ন রাস্তায়, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের নেতা শিহাবের ওপর স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে হামলা করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। শুধু হামলা করেই থামে না ছাত্রলীগ। তারপর ক্যাম্পাস শ্যাডোতে এম এন লারমার গ্রাফিতিসহ কলাভবন, টিএসসি এবং শামসুন্নাহার হলের দেয়ালে ছাত্র ইউনিয়নের দেয়াল লিখন সাদা রং দিয়ে ঢেকে দেয়।’
ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ১ ডিসেম্বর ভাস্কর্য নীতিমালার লঙ্ঘন করে টিএসসিতে মেট্রো স্টেশন স্থাপনের জন্য সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে মেট্রোরেলের ছবি সংবলিত একটি বিলবোর্ড স্থাপন করে ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানবীর হাসান সৈকত। ফলে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য বিলবোর্ডের আড়ালে সম্পূর্ণ ঢেকে যায়। ভাস্কর্যটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকা সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের নেতৃবৃন্দ ছাত্রলীগ নেতা তানবীর হাসান সৈকতকে বিলবোর্ডটি সরাতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাতে সাড়া না দিলে নেতৃবৃন্দ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবগত করে এবং অবিলম্বে বিলবোর্ড সরানোর আহ্বান জানান। কিন্তু টানা ১২ দিন পার হলেও ছাত্রলীগ এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেটি সরানোর কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি।