× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বাহারি অতিথি পাখির কলতানে মুখর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

আব্দুল্লাহ আল নোমান, আশুলিয়া (ঢাকা)

প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৮:৫০ পিএম

আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:০৪ এএম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়য়ের জলাশয়গুলোতে এখন দেখা মিলছে বাহারি অতিথি পাখি। প্রবা ফটো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়য়ের জলাশয়গুলোতে এখন দেখা মিলছে বাহারি অতিথি পাখি। প্রবা ফটো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছরের মতো এবারও ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে শুরু করেছে বাহারি প্রজাতির অতিথি পাখি। সুদূর সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া ও নেপাল থেকে আগত এসব অতিথি পাখি ক্যাম্পাসের লাল শাপলায় পূর্ণ লেকের পানিতে জলকেলিতে মেতে উঠেছে। আকাশও দখলে তাদের, ডানা মেলে উড়ছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) ক্যাম্পাসের জলাশয়গুলোতে অতিথি পাখির এমন বিচরণ চোখে পড়ে।

অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতে হালকা শীতে ক্যাম্পাসে এসব পরিযায়ী পাখির আসা শুরু হয়। মাঘের শেষ পর্যন্ত থাকে তাদের এই পদচারণা। ক্যাম্পাসের গাছপালায় ঢাকা সবুজ প্রকৃতি আর পাখির খাদ্য ও বসবাস উপযোগী জলাশয়গুলোও যেন বরণ করে নেয় অতিথি পাখিদের। তাই শীতকালে এই জলাশয়গুলোকেই নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিয়েছে তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরের পেছনের লেক, পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের সামনের লেক, সুইমিং পুলসংলগ্ন জয়পাড়া লেক ও ওয়াইল্ডলাইফ রেসকিউ সেন্টারের সঙ্গে জলাশয়গুলোতে অতিথি পাখিরা ভিড় জমায়।

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, এবার ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের অভ্যন্তরের লেকে সবচেয়ে বেশি পাখি এসেছে। ট্রান্সপোর্ট-সংলগ্ন লেকে প্রথম দিকে কিছু পাখি এলেও সেগুলো পরে আল বেরুণী হলের বর্ধিতাংশ-সংলগ্ন লেকে শিফট করেছে। পাখির নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে একটি ফেস্টুন ব্যতীত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে আর কোনো সচেতনতামূলক কার্যক্রম চোখে পড়েনি। ছোট ছোট কিছু বোর্ড দেখা গেলেও সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উদ্যোগে লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য বছর লেক পরিষ্কার করা হলেও এবার পাখি আসাকে কেন্দ্র করে নতুন করে কোনো পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম করা হয়নি। 

ছুটির দিনগুলোতে অতিথি পাখিদের দেখতে লেকের পাড়ে ছুটে আসে দর্শনার্থীরা। খুব কাছ থেকে এসব পাখি দেখে মুগ্ধ হয় তারা। রাজধানীর মুগদা থেকে ঘুরতে আসা আবির হোসেন বলেন, ’ঢাকায় তো অতিথি পাখি দূরে থাক, সচরাচর পাখিই দেখা যায় না। তাই এখানে ভাইয়ার কাছে এসেছি অতিথি পাখি দেখার জন্য। লেকের মধ্যে ফুটে থাকা শাপলার মধ্যে পাখিরা এসে বসে, ওড়াওড়ি করে, ডানা ঝাপটায়, ভালোই লাগে দেখতে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোতে ১৯৮৬ সালে প্রথম পরিযায়ী পাখিরা আসতে শুরু করে। আগে দেশি-বিদেশি মিলে ১৯৫ প্রজাতির পাখির দেখা মিলত। তবে এখন দেশি প্রজাতির সংখ্যাই বেশি। সাধারণত শীতের পুরোটা সময় জলময়ূর, ছোট সরালি, গার্গিনি, চিতা টুপি, বামুনিয়া, মুরহেন, খঞ্জনা, পিনটেইল, কোম্বডাক, পচার্ড, লাল গুড়গুটি, জলপিপি, শামুকভাঙা, নাকতা, মানিকজোড়, খোঁপাডুবুরি, ছোট পানকৌড়ি প্রভৃতি পরিযায়ী পাখি ক্যাম্পাসের লেকে ও জঙ্গলে আসে। তবে এ বছর দেশীয় সরালিসহ মাত্র তিন থেকে চারটি প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে।

পাখি বিশেষজ্ঞ ও জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘এ দেশে যখন আরামদায়ক ঠান্ডা, তখন শীতপ্রধান দেশগুলোতে রক্ত জমিয়ে দেওয়ার মতো ঠান্ডা পড়ে। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার ফলে সেখানকার পানি ও মাটি বরফ-তুষারে ঢেকে যায়। এমন বৈরী পরিবেশে প্রচণ্ড খাদ্যসংকটে অস্তিত্ব রক্ষায় প্রতিবছর হিমালয়ের উত্তরে অবস্থিত শীতপ্রধান সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, নেপালসহ হিমালয় অঞ্চলের দেশগুলো থেকে পাখিরা হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে ছুটে আসে বাংলাদেশের মতো তুলনামূলক উষ্ণ আর আরামদায়ক দেশগুলোতে। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল হওয়ায় বাংলাদেশে প্রতিবছর অসংখ্য প্রজাতির পাখির আগমন ঘটে। দেশের যেসব স্থানে অতিথি পাখির বিচরণ ঘটে, তার মধ্যে অন্যতম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। শীতের রেশ কেটে গেলেই বসন্তের সময়টাতে এসব পরিযায়ী পাখি আবারও তাদের চিরচেনা ভূমিতে ফিরে যায়।’

২০১৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। তবে সম্প্রতি বছরগুলোতে ক্যাম্পাসের লেকগুলো অতিথি পাখিদের থাকার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। লেকপাড়ে জনকোলাহল আর যানবাহনের শব্দে পাখি থাকার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এজন্য কয়েক বছর ধরে অতিথি পাখি কম আসতে শুরু করেছে। এখনোই পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত না করা গেলে অতিথি পাখি আসা অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে বলে অনেকে মনে করে। তারা মনে করে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত দ্রুত সময়ের মধ্যে লেকের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকরণে যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা