বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৮:৪৯ পিএম
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ০০:১৭ এএম
কুবির শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে খাবার বিতরণের টোকেন নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি হয়েছে। প্রবা ফটো
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘বিশেষ খাবারের’ টোকেন বণ্টনের দায়িত্ব নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে মারামারি হয়েছে।
শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকাল ৪টার দিকে মারামারি হয়। এর আগে দুপুর ২টার দিকে দায়িত্ব বণ্টন নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ছাত্রলীগের শান্ত গ্রুপের সদস্য-বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম আবর্তনের আবাসিক শিক্ষার্থী রবিউল আলম রিয়াজ ও আলভীর ভূইয়াসহ একই গ্রুপের একাধিক সদস্য, হলের আরেক ছাত্রলীগ নেতা এনায়েত উল্লাহ গ্রুপের সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম আবর্তনের আবাসিক শিক্ষার্থী রবিন দাসকে ‘মারধর’ ও ভবনের চারতলা থেকে ‘ফেলে দেওয়ার’ চেষ্টা করেন।
পরে হলের প্রভোস্ট, আবাসিক শিক্ষক ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে এখনও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে মারধরের শিকার এনায়েত গ্রুপের সদস্য রবিন দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গণমাধ্যমে কথা বলতে রাজি হননি।
শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল শাখা ছাত্রলীগের উপ- নাট্য বিষয়ক সম্পাদক ও শান্ত গ্রুপের সদস্য মো. রবিউল আলম রিয়াজ বলেন, ‘ছাত্রলীগের নির্দেশে মহান বিজয় দিবসের প্রোগ্রাম শেষ করে আসার পর প্রশাসন থেকে খাবারের ব্যবস্থা করলে আমরা সেখানে অংশগ্রহণ করি। তখন কিছু দুষ্কৃতিকারী বিপরীত সংগঠনের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের হলের প্রভোস্ট স্যারের উপর চড়াও হয় এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে। প্রশাসন তাদের থামায় এবং আমরা যে যার রুমে চলে যাই। কিছুক্ষণ পর আমি আর আমার বন্ধু আলভীর ওয়াসরুমের দিকে ফ্রেস হতে যেতে চাইলে রবিন দাস ভাই আমাদের টিজ করতে করতে এক সময় গায়ে হাত তুলে। একইসঙ্গে অনেকগুলো ছেলে এসে আক্রমণ করতে থাকে। আমার মনে হয়েছে এটা পরিকল্পিত। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল শাখা ছাত্রলীগের উপ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ও শান্ত গ্রুপের সদস্য এইচ এম আলভীর ভূঁইয়া বলেন, ‘দুপুরে খাবার বিতরণ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় ১৩ ব্যাচের রবিন দাসের সঙ্গে। এ ঘটনার পর আমি এবং রিয়াজ বাইরে যাওয়ার সময় হলের চতুর্থ তলায় ওয়াশরুমে আবার কথা কাটাকাটি হয় ১৩ তম আবর্তনের রবি ভাইয়ের সঙ্গে। তারপর ১২তম আবর্তন এবং ১৩তম আবর্তনের ভাইরা এসে রিয়াজকে মারধর করে। তখন রিয়াজ পঞ্চম তলায় আমার রুমে চলে আসে। পরে আবার তারা পঞ্চম তলায় এসে আমাদের উপর আক্রমণ করে। হামলাকারীদের মধ্যে ছিল সোহাগ, ওয়াকিল, রাব্বি, রবি, এমদাদ।’
এ ব্যাপারে শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘আমি ক্যাম্পাসে নেই, তবে ঝামেলা হয়েছে শুনেছি। এটি আসলে ছাত্রলীগের কোনো ঝামেলা না। এটি সিনিয়র-জুনিয়রের ঝামেলা। এটিকে ছাত্রলীগের সঙ্গে না জড়ানোই ভালো। আমি কথা বলছি, যেন নিজেদের ঝামেলা নিজেদের মধ্যে শেষ করে ফেলা হয়।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাউল হক শান্ত বলেন, ‘হলের সিনিয়র জুনিয়র নিয়ে ঝামেলা। অভ্যন্তরীণ ঝামেলার মধ্যেই ওদের দুইটা গ্রুপ হয়ে যায়। ব্যাপারটা রাজনৈতিক তেমন কিছু না। যারা ঝামেলা করেছে দুইপক্ষেই আমার অনুসারী আছে। বাকবিতণ্ডার কারণে ঘটনা এতদূর গড়িয়েছে। প্রক্টর স্যারসহ আমরা বসে ব্যাপারটা সমাধান করবো।’
এ বিষয়ে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘যারা মারামারির ঘটনা ঘটিয়ে তাদের দুই গ্রুপই নিজেদের মধ্যে সমাধান করার জন্য সময় চেয়েছে। তাছাড়া হলের সিসিটিভি ক্যামেরার সাহায্যে তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর দেওয়া হবে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবে।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘যেহেতু হলের অভ্যন্তরীণ বিষয় এ ব্যাপারে প্রভোস্ট স্যার, যে ধরনের সহযোগিতা চাইবেন প্রক্টরিয়াল বডি সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।’