বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:২২ পিএম
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:৪৩ পিএম
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘নয়েজ ফ্যাক্টরিকে’ তৃতীয়বারের মতো নিষিদ্ধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তারা জানিয়েছেন, সংগঠনটির বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতা, ধর্ম অবমাননা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলাসহ বেশকিছু অভিযোগের তদন্ত করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সংগঠনের নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রশাসন কোনো ব্যক্তির দায় সংগঠনের ওপর চাপিয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
গত ২৩ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের দপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি নিষিদ্ধের কথা জানায়। এতে বলা হয়, নয়েজ ফ্যাক্টরির বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলে প্রায় এক বছর। তদন্ত কমিটির বিস্তারিত প্রতিবেদন এবং সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কারণ দর্শানোর জবাব পাওয়ার পর শৃঙ্খলাবোর্ড এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে তদন্তে আত্মপক্ষের সুযোগ পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন নয়েজ ফ্যাক্টরির সভাপতি মঈন খান। তিনি বলেন, ‘তদন্ত প্রক্রিয়া এক বছরের বেশি সময় দীর্ঘায়িত করা হলেও আমাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। কোনো নোটিস ছাড়াই সংগঠনের নিবন্ধন বাতিলের ঘোষণা আসে। আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের নির্দিষ্ট প্রমাণ দেখানো হয়নি।’
নিষেধাজ্ঞার পক্ষে-বিপক্ষে সরব হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও পাঁচটি সাংস্কৃতিক সংগঠনও নিজেদের ফেসবুক পেজে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানায়।
পরিসংখ্যান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী হাসান সোহান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘প্রশাসন একটা সংগঠনকে তখনই নিষিদ্ধ করে, যখন সেই সংগঠনটি তার জন্য হুমকি হয়ে যায়, যখন সেই সংগঠনটিকে স্বেচ্ছাচারী হিসেবে চালানো যায় না।’
ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোস্তাক আহমদ বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি বা ক্লাবকে সাসপেন্ড করলে সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট আইন অনুসারে হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন্তু নয়েজ ফ্যাক্টরির ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা স্পষ্ট আইনের লঙ্ঘন।’
আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রুবেল হোসেন বলেন, ‘নয়েজ ফ্যাক্টরি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীতের সংগঠন। শিক্ষার্থীদের পরিচালিত শিক্ষার্থীদের কল্যাণের জন্যই এই সংগঠন। যেহেতু এটা শিক্ষার্থীদের সংগঠন, সেহেতু কর্তৃপক্ষ চাইলেই নিজ থেকে বন্ধ বা বাতিল করতে পারে না।’ তবে নয়েজ ফ্যাক্টরি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি মহল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশাসনকে বিতর্কিত করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালক মো. শরীফ হাসান লিমন বলেন, ‘ব্যক্তির কর্মকাণ্ডের কারণে সংগঠনের কার্যক্রম ও নিবন্ধন বাতিল করিনি। বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে নয়েজ ফ্যাক্টরির বেশকিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে অভিযোগ আসে। অভিযোগের সত্যতা যাচায়ে তদন্ত করা হয়। শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়া হয়। সবকিছু যাচাই করে নয়েজ ফ্যাক্টরির নিবন্ধন ও কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছে।’
এর আগে ২০০৯, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে নয়েজ ফ্যাক্টরিকে নিষিদ্ধ করা হয়। পরে কিছু শর্তে কার্যক্রম পরিচালনার মৌখিক অনুমতি পায় সংগঠনটি।
ছাত্রবিষয়ক পরিচালক শরীফ হাসান বলেন, ‘আগের তিনবার আমাদের দপ্তরের হস্তক্ষেপে নিষিদ্ধ হলেও এবার শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে শৃঙ্খলাবোর্ডে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’