জবির নতুন ক্যাম্পাস
ইউছুব ওসমান, জবি
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৩ ১১:৪৭ এএম
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৩ ১২:০৫ পিএম
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন সুধির নামের এক ব্যক্তি। রবিবার তাকে ক্ষেতে সার দিতে দেখা যায়। প্রবা ফটো
রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জে ২০০ একর চমিতে চলছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের কাজ। কাজে ধীরগতি থাকলেও এই প্রকল্পকে ঘিরে থেমে নেই বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পকেট ভারীর কাজ। ভূমি উন্নয়ন ও মাটি ভরাট প্রকল্পের দরপত্রের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার সুযোগ নিয়ে ওই জমি চাষাবাদের জন্য ইজারা এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে পুকুরে মাছ চাষের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এমনকি দীর্ঘ সময় ধরে এই ফায়দা লুটতে প্রভাব খাটিয়ে ভূমি উন্নয়ন ও মাটি ভরাট প্রকল্পের দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্নে সময়ক্ষেপণেরও অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কেরানীগঞ্জের তেঘোরিয়া ইউনিয়নে জবির নতুন ক্যাম্পাসে সীমানা প্রাচীর ও বৃত্তাকার লেক নির্মাণের কাজ শেষের পথে। তবে প্রথম ধাপের প্রকল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমি উন্নয়ন ও মাটি ভরাটের কাজ এখনো শুরুই হয়নি। এই সুযোগে ওই জমিতে চলছে চাষাবাদ। বিঘার পর বিঘা জমি দখলে নিয়ে চাষ করা হয়েছে সরিষা, ঘাস, সবজিসহ বিভিন্ন ধরণের ফসল। নতুন ক্যাম্পাসের পুকুর দখলে নিয়ে চলছে মাছ চাষ। অনুমতি না থাকলেও এসব চাষাবাদ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। আর অবৈধভাবে এই জমি ইজারা দিয়ে অর্থ আত্মসাতের জন্য মাটি ভরাটের কাজ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল কাদের ওরফে কাজী মনির, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি কর্মকর্তা কামাল হোসেন ও আনোয়ার হোসেনসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এর সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা স্থানীয় প্রভাবশালীদের এসব জমি চাষাবাদের ব্যবস্থা করে দিয়ে নগদ টাকা ও ফসলের ভাগ নিয়ে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরে অবৈধভাবে মাছ চাষাবাদ করছেন সিলেক মিয়া ও আব্দুর রহমানসহ কয়েকজন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। যাদের থেকে মাছ বিক্রির টাকার একটি অংশ এব চাষ করা মাছের ভাগ নেন কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরসহ অন্যরা।
এসব জমিতে চাষাবাদকারী ও স্থানীয়দের সিঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি মৌসুমে জমিতে পানি শুকিয়ে গেলে নির্দিষ্ট কয়েকজনকে দেওয়া হয় চাষাবাদের অনুমতি। অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের নগদ অর্থ এবং ফসলের ভাগ দিলেই মেলে ক্যাম্পাসের জমিতে চাষাবাদের সুযোগ। এমনকি কেউ ফসলের ভাগ না দিলে লোকজন দিয়ে জমি থেকেই ফসল তুলে নিয়ে যান এসব কর্মকর্তারা। ঠিকমতো ভাগ বাটোয়ারা না পেলে পরের মৌসুমে তাদের চাষাবাদের সুযোগ দেওয়া হয় না।
জমি দখল করে সরিষা ও সবজি চাষ করা রিনা মল্লিক নামের এক নারী বলেন, ‘আমি কামাল আর আনোয়ারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সবজি আর সরিষা চাষ করেছিলাম। কাজী মনির এসে জিজ্ঞাসা করে এসব কে করেছে। আমি করেছি জানালে সে ফসলের ভাগ চায়। অনেক টাকা খরচ হয়েছে জানালে পরে লোকজন নিয়ে এসে সব সবজি আর শাক কেটে তুলে নিয়ে যায়। ঠিকমতো ভাগ দিলেই তারা এখানে চাষ করতে দেয়।’
প্রায় ১০ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করা সুধির নামের এক ব্যক্তি সার দিচ্ছিলেন ক্ষেতে। তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি কাজী মনিরের কাছ থেকে জমি নিয়ে সরিষা বুনেছি। তিনি আমার কাছে সরিষার ভাগ চেয়েছেন। ঠিকমতো ভাগ না দিলে পরেরবার আবার আরেকজনকে দিয়ে দেবে। অনেকের কাছ থেকে নগদ টাকা নিয়ে এখানে চাষ করতে দেয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এসব জমি অবৈধভাবে ইজারা দিয়ে এবং চাষাবাদ করে দীর্ঘদিন ফায়দা লুটতে প্রভাব খাটিয়ে নতুন ক্যাম্পাসের ভূমি উন্নয়ন ও মাটি ভরাটের কাজের দরপত্র প্রক্রিয়া আটকে রেখেছেন এসব কর্মকর্তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর এবং পরিকল্পনা ও ওয়ার্কস দপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তাও এর সঙ্গে জড়িতে। দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় মাটি ভরাটের কাজও করা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাদের ওরফে কাজী মনির প্রতিবেদকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না। আপনারা যা তথ্য-প্রমাণ পেয়েছেন লিখে দেন। এতে আমার কিছুই হবে না। আপনারা আমার কিছুই করতে পারবেন না।’
সম্পত্তি কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলেন, ‘এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। কেউ নিজেদের স্বার্থের জন্য আমার নাম বলেছে। আমি এমন কোনো কাজ করিনি।’
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আরেক অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেনও। তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। আমি এমন কোনো কাজ করিনি। আমার নামে কেউ মিথ্যা কথা ছড়িয়েছে।’
এ বিষয়ে নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের তদারকি কমিটির সদস্য এবং শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, ‘এমন চাষবাদের ঘটনা আগেও ঘটেছে। এবারের বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের পরিচালক সৈয়দ আলী আহমেদ কোনো কথা বলতে না চেয়ে প্রতিবেদককে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামানের বক্তব্য জানতে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন। এরপর বারবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।