বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:১৮ পিএম
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:৩৬ পিএম
বাঙালির জনসংস্কৃতিতে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটির অন্য রকম এক আবেদন রয়েছে। বিপ্লব-বিদ্রোহে বাঙালি এ গানের কাছে আশ্রয় খোঁজে। এবার ‘পিপা’ সিনেমায় এ গানই নতুন সুরে হাজির করেছেন ভারতের অস্কারজয়ী সংগীতশিল্পী এ আর রহমান। এরপরই তার বিরুদ্ধে সুর বিকৃতির অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
এরই মধ্যে আলোচনায় এসেছে ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবির নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়। বলা হচ্ছে, নিজ নামের বিশ্ববিদ্যালয়েই কবি নজরুল উপেক্ষিত-অবহেলিত।
বাল্যকালে কবি নজরুল প্রথম এসেছিলেন ত্রিশালে। জাতীয় কবির সেই স্মৃতিবিজড়িত স্থানে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। কবির সম্মানে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতেই অবহেলিত কবি নজরুল। তার একমাত্র ভাস্কর্যটি পড়ে আছে অবহেলায় আর অসম্পূর্ণ অবস্থায়।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে শুরু হওয়া নজরুল ভাস্কর্য নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের জুন-জুলাইয়ে। তবে নির্ধারিত সময়ের দুই বছর পর অসম্পূর্ণ অবস্থাতেই ২০২১ সালের ২৫ মে কাজী নজরুল ইসলামের ১২২তম জন্মবার্ষিকীতে উদ্বোধন করা হয় নজরুল ভাস্কর্যটি। অসম্পূর্ণ ভাস্কর্যের নিচের অংশ সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে এবং লালগালিচা ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়টির তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান এটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীণা হলের পেছনে অবস্থিত নজরুল ভাস্কর্যটির বেদি নির্মাণকাজ এখনও অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। এই অবস্থাতেই কাজ গুটিয়ে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুতিয়া করপোরেশন। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে কাজ। অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বারবার দাবি করলেও বাজেটের দোহাই দিয়ে বারবার এড়িয়ে গেছে কর্তৃপক্ষ। দুটি ভাস্কর্যের বেদি নির্মাণের জন্য প্রাথমিক ব্যয় ৪২ লাখ টাকা ধরা হলেও তা বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ১২ লাখ টাকা। এতকিছুর পর এখনও কেন কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে বা আদৌ কাজ শেষ হবে কি না- এ নিয়ে রয়েছে ব্যাপক ধোঁয়াশা।
এ ছাড়া এই ভাস্কর্যের পাশেই গড়ে ওঠা খুপরি দোকান বিনষ্ট করছে ভাস্কর্যের সৌন্দর্য। নজরুল ভাস্কর্যের পাশেই রয়েছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা- জয় বাংলা ভাস্কর্য। দুই ভাস্কর্যের মাঝে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি দোকান। দোকানগুলোর খাবারের ঠোঙা, কাগজ, প্লাস্টিক এবং উচ্ছিষ্ট ময়লায় ছেয়ে যায় ভাস্কর্যের চারদিক। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব ময়লায় যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে তেমনি নষ্ট করছে ভাস্কর্যের সৌন্দর্য।
প্রকল্পের কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই কেন কাজ বন্ধ করা হলো? জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুতিয়া করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী জিএম নুরুল করিম স্বপন বলেন, ‘আমার কাজ শেষ। বিভিন্ন কাজ বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এখনও আমি দশ লাখ টাকা পাব। তারা আমাকে টাকা পরিশোধ করছে না। আমি ওখানে ঢালাই করেছি, ইট লাগিয়ে দিয়েছি। বাকি কাজ বিশ্ববিদ্যালয় যাকে দিয়ে করাতে চায়, তাকে দিয়েই করাক। আমার টাকাটা দিয়ে দিলেই হয়।’
কাজ শেষ হয়নি- বললে তিনি বলেন, ‘আমার যতটুকু কাজ করার কথা ছিল, ততটুকু শেষ।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের পরিচালক প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘পয়সা পেলে করব। এখন টাকা নাই, করা যাচ্ছে না। মন্ত্রণালয়ের স্থগিতাদেশের বিষয়ে কিছু জানি না। এখন বাধা হচ্ছে বাজেট। বাজেট পেলে কাকে দিয়ে করাব সেটা দেখা যাবে। আমরা চেষ্টা করছি।’
বাজেট বৃদ্ধি করার পরেও বাজেট সংকটে আটকে আছে নজরুল ভাস্কর্যের সম্পূর্ণতা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীণা হলের প্রভোস্ট কল্যাণাংশু নাহা বলেন, ‘এক্ষেত্রে কোনো কারণে যদি কোনো ধরনের বাজেট সংকটও থেকে থাকে, তাহলে সেটাকে ম্যানেজ করা উচিত। একটা কাজে বাজেট বর্ধিত করার সুযোগ থাকে, তবে সেটা যখন দ্বিগুণ- তিনগুণ হয়ে যায়- তাহলে সমস্যা। এখানে ঠিকাদারকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। যেকোনো কাজ নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন করতে না পারা যেমন ঠিকাদারের দোষ, তেমনি কাজটি ঠিকভাবে আদায় করে নিতে না পারা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলের দোষ।’
বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘এই কাজটি শুরু হয়েছে আমি আসার আগেই। কাজটি কেন সম্পন্ন করতে পারেনি সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। যে কাজ শেষ করতে পারবে না সেটি শুরু করবে কেন? আমি এই কাজের স্থবিরতা সম্পর্কে অবগত আছি। সামনের বছরই এটির কাজ শেষ করতে চাই।’
ভাস্কর্যের পাশে গড়ে ওঠা দোকানগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন ‘আমরা জয় বাংলা এবং নজরুল ভাস্কর্যের মধ্যবর্তী স্থানটিকে একটি গ্রিন জোনে পরিণত করব। ভাস্কর্যের সৌন্দর্য বিনষ্ট করবে এমন কোনো কিছুই সেখানে রাখা হবে না। জায়গাটির সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য এরই মধ্যে আমি একটি কমিটি করে দিয়েছি।’