বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:৫৮ পিএম
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল ছবি
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচির কারণে স্থবিরতার মুখে পড়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা শঙ্কায় ক্লাস হয়ে পড়েছে অনিয়মিত। স্থগিত করা হচ্ছে বিভিন্ন বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা।
চলমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দিষ্ট একাডেমিক সিদ্ধান্ত না থাকায় ধোঁয়াশার মধ্যে আছেন শিক্ষার্থীরা। নির্ধারিত সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করতে না পারায় সেশনজটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, অবরোধের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় আশেপাশের এলাকায় বসবাসকারী শিক্ষার্থীরা উপস্থিত থাকলেও দূরবর্তী এলাকার শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছে না। শিক্ষার্থীদের বহনকারী দুরপাল্লার বাস বন্ধ রেখে ক্লাস-পরীক্ষা চালু রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক শিক্ষার্থী।
চলমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দিষ্ট একাডেমিক সিদ্ধান্ত না থাকায় হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কিছু বিভাগ ক্লাস-পরীক্ষা চালু রাখলেও অধিকাংশ বিভাগ ধাপে ধাপে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত করছে। পরীক্ষা নিয়ে স্পষ্ট সিদ্ধান্তসহ অনলাইনে ক্লাস এবং ছুটির দিনগুলোয় পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম বলেন, অবরোধের মধ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে হামলা হয়েছে। এসবের মধ্যে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেয়া যায় না। অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা আর ছুটির দিনে পরীক্ষা নিলে, তা সবার জন্যই নিরাপদ।
দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রিফাত আহমেদ বলেন, দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা সবাই জানি, আমাদের প্রশাসনও জানেন। বাস বন্ধ রেখে ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছেন যেটা কখনই কাম্য নয়। আবার কোনো কোনো বিভাগে হুট করে পরীক্ষা স্থগিত হচ্ছে। ধোঁয়াশার মধ্যে না রেখে সুষ্ঠু পদক্ষেপ নিবে প্রশাসন, এমনটাই দাবী আমাদের।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জেষ্ঠ শিক্ষকরা মনে করেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাসে আগুন দেয়াসহ হামলা-ভাংচুরের ঘটনা ঘটায় শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা নিরাপদ নয়। তাই চলমান পরীক্ষাগুলো রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকা সাপেক্ষ ছুটির দিনগুলোয় নেয়া যেতে পারে। ক্লাস শেষ হয়েছে এমন বিভাগগুলো ছুটির দিনে একসঙ্গে পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে সমন্বয়ের আহ্বানও জানান তার। যদিও ভোগান্তি এড়াতে কয়েকটি বিভাগ ইতোমধ্যে ছুটির দিনে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্তও গ্রহন করেছে।
এদিকে ৩১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের বহনকারী রজতরেখা এবং স্বপ্নচূড়া বাসে হামলার ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। অবরোধের কারণে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ও সমাজবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিভাগে অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিভাগ শুক্রবার ও শনিবার পরীক্ষার বিকল্প তারিখ হিসেবে রেখেছে।
এ বিষয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আছমা বিনতে ইকবাল বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই আমরা সেমিস্টার ফাইনাল স্থগিত করেছি। সামনের পরীক্ষাগুলো নিবো কি-না সেটা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে। শনিবার সাধারণত অবরোধ থাকছে না। ছুটির দিনগুলোয় পরীক্ষা নেবায় জন্য প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা শনিবার পরীক্ষা নেয়ার কথা ভাবছি।
ছুটির দিনগুলোতে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) জহুরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের ভালোর জন্যই আমরা সিদ্ধান্ত নেই। পরীক্ষার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো সিদ্ধান্ত নিবে। একাডেমিক কমিটির অনুমোদনে আর শিক্ষার্থীরা চাইলে ছুটির দিনে পরীক্ষা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বাঁধা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, বিভাগগুলো যদি ছুটির দিনে পরীক্ষা নেয় তাহলে অবশ্যই বাস চলবে। এটা নিয়ে কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তবে একটা দুইটা বিভাগের জন্য তো আর বাস চলবে না। ডীন এবং বিভাগের চেয়ারম্যানরা মিলে যদি একযোগে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাহলে বাস চলবে।