কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
কামরুল হাসান, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:০৩ পিএম
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৩ ২২:১৯ পিএম
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অসম্পন্ন সীমানা প্রাচীরের কাজ। প্রবা ফটো
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পর ২০২২ সালে সীমানা প্রাচীর নির্মাণকাজ শুরু হয়। কার্যাদেশ পাওয়ার এক বছরের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও দেড় বছরেও তা শেষ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে আরও ৯ মাস।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি, নিচু জায়গায় সঠিক সময়ে মাটি ভরাট না করা, যথাযথ তদারকির অভাবসহ নানা জটিলতায় আটকে আছে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ। সীমানা প্রাচীরের কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় ক্যাম্পাসে অবাধে প্রবেশ করছে বহিরাগতরা। ঘটাচ্ছে মাদক সেবন, গভীর রাতে আড্ডা, বেপরোয়াভাবে বাইক রাইডিং এবং ইভটিজিংয়ের মতো ঘটনা। এমনকি শিক্ষকদের কক্ষ থেকে পরীক্ষার খাতা ও নথিপত্র, শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল, একাডেমিক ভবন থেকে চেয়ার, টেবিল, নির্মাণাধীন স্থান থেকে রড, সিমেন্ট চুরির মতো ঘটনাও ঘটছে।
জানা যায়, ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫০০ মিটার দীর্ঘ সীমানা প্রাচীর নির্মাণ প্রকল্পটির কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সোহেল এন্টারপ্রাইজ। ২০২২ সালের ৩১ মার্চ সীমানা প্রাচীর নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের মার্চ মাসে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ আরও ৯ মাস বাড়িয়ে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ সমাপ্তির আর ২ মাস বাকী থাকলেও সীমানা প্রাচীর নির্মাণকাজ এখন বন্ধ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জি বলেন, শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দ্রুতসময়ে সীমানা প্রাচীরের কাজ শেষ করা প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকার সীমানায় বড় পুকুর থাকায় সেখানে কোনো ধরনের কাজ শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। একই অবস্থা নতুন বিজ্ঞান ভবনের পেছনের অংশেও। জলাবদ্ধতার কারণে সেদিকেও কোনো কাজ শুরু হয়নি। কেন্দ্রীয় মসজিদের পেছনের দিকে পিলারের কাজ শেষ হলেও বাকী কাজ অসম্পূর্ণই রয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু জায়গায় ইটের গাঁথুনি দেওয়া হলেও এখনও বাকী আছে প্লাস্টারের কাজ। এদিকে ক্যাম্পাসের পূর্ব দিকে চারুদ্বীপ এলাকায় রয়েছে অনেক স্থানীয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তাদের বসবাস। তাদের যাতায়াতের জন্য সেখানেও কিছু জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, ‘যেসব শিক্ষক-কর্মকর্তা এখন প্রশাসনের বিভিন্ন দায়িত্বে রয়েছেন তাদের কারও বাড়ি, কারও বা জমি রয়েছে চারুদ্বীপের জায়গাটিতে। তারা প্রশাসনের দায়িত্বে থাকাকালে চারুদ্বীপের এই ফাঁকা জায়গাটি বন্ধ হবে বলে মনে হয় না।’
কাজ আটকে থাকার বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার রাকিব হাসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার বেশ কিছু জায়গায় পুকুর এবং জলাবদ্ধতার কারণে আমাদের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ আটকে আছে। নিচু এবং পানি থাকা জায়গায় মাটি ভরাট করে দেওয়া প্রকল্প অফিসের কাজ। মাটি ভরাট করে দিলে আমরা দ্রুতই কাজটি শেষ করতে পারব।’
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. জোবায়ের হোসেন বলেন, ‘সীমানার কিছু অংশ বেশি নিচু জায়গায় হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত জলাবদ্ধতা এবং সেসব জায়গায় মাটি নেওয়ার কোনো রাস্তা না থাকায় মাটি ভরাট করতে দেড়ি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তারা কাজটি তদারকি করছেন। আগামী ডিসেম্বরে কাজটি সমাপ্ত হবে বলে আশা করছি।’
দায়িত্বরত এক নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম জহিরুল হাসান বলেন, ‘আগের ঠিকাদার চুক্তি অনুযায়ী মাটি ভরাটের কাজ শেষ করেছে। নতুন করে একটি প্রকল্পের ঠিকাদারকে বলা হয়েছে মাটি ভরাট করে দেওয়ার জন্য। শুনেছি সেও করতে চাচ্ছে না। মাটি কে ফেলবে না ফেলবে এটি ঠিক করা আমার দায়িত্ব নয়। এটি প্রকল্প পরিচালক বলতে পারবে। আমার কাজ হচ্ছে কার্যক্রম শুরু হলে সেটির তদারকি করা।’