রাবি শাখা ছাত্রলীগ
রাজশাহী অফিস ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:২০ পিএম
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:০৭ পিএম
নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদকের হলের কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রবা ফটো
দীর্ঘ সাত বছর পর নানা আলোচনার মধ্যে ঘোষিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা হিল গালিবের হলের কক্ষ।
রবিবার (২২ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে নতুন কমিটি অবাঞ্ছিত ঘোষণা দিয়ে এই উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেন পদবঞ্চিতরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার সকালে পদবঞ্চিত একাধিক নেতা ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন শতাধিক সমর্থক। পরে তারা মাদার বখশ হলের ২১৫ নম্বর কক্ষে ভাঙচুর চালায়। এই কক্ষে নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক গালিব থাকেন। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের সামনে দলবদ্ধ হয়ে অবস্থান নেন। নতুন কমিটিকে বিতর্কিত অ্যাখ্যা দিয়ে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা দিয়ে স্লোগান দেন তারা। নতুন কমিটির নেতা বা তাদের সমর্থক– যাকেই তারা চোখের সামনে পেয়েছেন তাকেই মারধর করা হয়েছে।
ঘটনা তদন্তে ইতোমধ্যে মাদার বখশ হলের পক্ষে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। মাদার বক্শ হলের প্রাধক্ষ্য ড. মো. শামীম হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ঘটনার পরপরই আমি সেখানে যাই। আমার সঙ্গে সহকারী প্রক্টর, হলের হাউজ টিউটররা ছিলেন। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর আগে শনিবার রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে রাবি শাখার কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুকে সভাপতি ও আসাদুল্লা-হিল-গালিবকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বিগত কমিটির গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক এবং আসাদুল্লা-হিল-গালিব প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। রাবি শাখা ছাত্রলীগের সর্বশেষ ২৫তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর। এর তিন দিন পর ১১ ডিসেম্বর কমিটি পেয়েছিল রাবি ছাত্রলীগ।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা জায়, পদবঞ্চিতদের আন্দোলনের নেতৃত্বে আছেন সদ্যবিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য সাকিবুল হাসান বাকী, রাজশাহী শহর ছাত্রলীগ নেতা অনিক মাহমুদ বনি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হল শাখার নেতা নিয়াজ মোর্শেদসহ পদবঞ্চিত অনেক নেতাকর্মী। তা ছাড়া নতুন কমিটিতে পদ পেয়েছেন এমন অনেককেও পদবঞ্চিতদের আন্দোলনে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে একজন মোহাম্মদ শাহিনুল ইসলাম সরকার ডন। তিনি নতুন কমিটির সহসভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ শাহিনুল ইসলাম বলেন, ‘পদ পেয়েছি, কিন্তু আমি এই কমিটি মানি না। কমিটির অধিকাংশ নেতা সমালোচিত। কমিটির সভাপতি বাবু– সে ছাত্রদলের রাজনীতি সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। তার রাজশাহী শহরে একটা সেলুনের দোকান ছিল। সে নিজে চুল কাটত। এখন শুনছি সে ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছে।’
জানতে চাইলে সদ্য কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চিন্তাভাবনা করেই এ কমিটি দিয়েছেন। যারা কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে তাদের ব্যক্তিস্বার্থ রয়েছে।’
বিভেদ ভুলে শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করা আহ্বান জানান তিনি।
তবে পদবঞ্চিতদের আন্দোলনে থাকা সাবেক কমিটির সহসভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকনের অভিযোগ– নতুন কমিটির সভাপতি ছাড়াও সাধারণ সম্পাদকও সমালোচিত। তার পরিবার জামায়াত-বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
লিংকন বলেন, ‘গালিব বিবাহিত। তার ছাত্রত্ব নাই। সে ড্রপ আউট হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এমন সমালোচিত কমিটি ও কমিটির নেতাদের আমরা মানি না। আমরা এই কমিটি দ্রুত বাতিল চাই।’
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গালিব। তা ছাড়া পদবঞ্চিত আন্দোলনকারীদের বহিরাগত দাবি করেছেন তিনি।
গালিব বলেন, ‘তারা বহিরাগত। আমাদের অভিভাবক রাজশাহী সিটি মেয়র ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এ বিষয়ে অবগত আছেন। তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।