সিলেট অফিস
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:২৮ এএম
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ১০:৪৭ এএম
এবার শিক্ষার্থীদের অনুরোধে ‘প্রতীকী ক্লাস’ নিলেন সিলেট লিডিং ইউনিভার্সিটির চাকরিচ্যুত শিক্ষক স্থপতি রাজন দাশ। সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণের মুক্তমঞ্চে গতকাল বুধবার (অক্টোবর) বিকাল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ক্লাস নেন তিনি। এতে ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের আন্দোলনরত প্রথম বর্ষ থেকে পঞ্চম বর্ষের ৬০ শিক্ষার্থী অংশ নেন। বৈধ উপাচার্যের মাধ্যমে বরখাস্তের চিঠি বাতিলের পরও তাকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের অনুরোধে তিনি এই প্রতীকী ক্লাস নিতে সম্মত হয়েছেন বলে জানান রাজন দাশ।
স্থপতি রাজন দাশ বলেন, ‘চাকরিচ্যুতির বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ইউনিভার্সিটির বৈধ উপাচার্য ড. কাজী আজিজুল মাওলার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ই-মেইলে বরখাস্ত বাতিল করেন। এরপরও আমি ইউনিভার্সিটিতে যেতে পারছি না। ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে অবৈধ উপাচার্যের নির্দেশে তার সাঙ্গোপাঙ্গরা শারীরিকভাবে বাধা দেয়। শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাকে সমর্থন করে যাচ্ছে। যেহেতু ১৫ বছর ধরে তাদের ক্লাস নিচ্ছি, তাই তাদের অনুরোধ রাখতে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নিলাম।’
শিক্ষার্থীরা জানান, স্থাপত্য বিভাগের প্রতিভাবান শিক্ষক রাজন দাশ ও সৈয়দা জেরিনা হোসেন। গুণী এই দুই শিক্ষকের কাছ থেকে অনেক কিছু জানার আছে। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে তাদের পুনর্বহাল করা হোক। সজিব হোসেন ও নুসরাত জাহান নামে দুই শিক্ষার্থী বলেন, নিশ্চয়ই এই দুই শিক্ষকের অনেক গুণাবলি রয়েছে, যার কারণে শিক্ষকদের পক্ষে আন্দোলন হচ্ছে। আমরা স্যার ও ম্যাডামকে ক্লাসে চাই।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. কাজী আজিজুল মাওলা ইউজিসির অনুমোদন নিয়ে গত ৪ অক্টোবর একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগ দিতে ১৫ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে যান। উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ট্রেজারার বনমালী ভৌমিক। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়েই ১২ অক্টোবর স্থাপত্য বিভাগের দুই শিক্ষক রাজন দাশ ও সৈয়দা জেরিনা হোসেনকে বরখাস্ত করেন তিনি। রাজন দাশের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও সৈয়দা জেরিনা হোসেনের বিরুদ্ধে বার্ধক্যতার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে এই আদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী হয়নি বলে দাবি করেছেন বরখাস্ত শিক্ষক রাজন দাশ। তিনি বলেন, কারণ দর্শানোর নোটিস তিনি ১১ অক্টোবর পেয়েছেন। নোটিসে উল্লেখ ছিল তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে হবে। নোটিস পেয়েই তিনি ওইদিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নোটিসের জবাবের জন্য ১০ দিন সময় চেয়েছেন। কিন্তু তাকে পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ দেওয়া হয়নি। নোটিস গ্রহণের এক দিনের মধ্যে তড়িঘড়ি করে বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকতা করছেন সৈয়দা জেরিনা হোসেন। মেধাবী এই শিক্ষককেও বয়সের দোহাই দিয়ে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এদিকে দুই শিক্ষকের চাকরিচ্যুতির বিষয়টি জানার পর বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গত রবিবার সারা দিন ক্লাস বর্জন করে ক্যাম্পাসে আন্দোলন করেন। একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ট্রেজারারের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন সিলেটের সম্মিলিত নাগরিক সমাজ। গত মঙ্গলবার বিকালে সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সম্মিলিত নাগরিক সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন হয়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও সম্মিলিত নাগরিক সমাজের নেতারা অবিলম্বে এই দুই শিক্ষককে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন।
এসব বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বনমালি ভৌমিককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। মেসেজ দিলেও তিনি উত্তর দেননি।