বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৩ ১০:২১ এএম
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২৩ ১১:৩২ এএম
গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি)। ফাইল ছবি
পারিবারিক, আর্থিক, মানসিকসহ বিভিন্ন হতাশাজনিত কারণে মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। এক জরিপে দেখা গেছে, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ৬৬ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাদের এ ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগ প্রকাশিত ‘শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা, বশেমুরবিপ্রবি, ২০২৩’-এর এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। জরিপের তথ্যমতে, বশেমুরবিপ্রবির ৬৬ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী মানসিক চাপ কিংবা পারিবারিক, অর্থনৈতিক এবং হতাশাজনিত কারণে আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগ ও অনুষদের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রয়োজনীয় মানসিক স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা যাচাইয়ের জন্য চলতি বছর এই জরিপ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মোট ৮টি অনুষদে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টি অনুষদের মধ্যে জীববিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি মানসিক ভোগান্তিতে রয়েছে। তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং হতাশার প্রবণতা ২০ শতাংশ। মানসিক সমস্যার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীরা, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং হতাশার প্রবণতা ১৯.৭ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে কলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং হতাশার প্রবণতা ১৫.৩ শতাংশ। বিজ্ঞান অনুষদের রয়েছে ১৩.২ শতাংশ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ১১ শতাংশ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ১০.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বা হতাশার মধ্যে রয়েছে। সবচেয়ে কম মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা কৃষি অনুষদ ও আইন অনুষদের শিক্ষার্থীদের।
সমীক্ষা অনুযায়ী মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৯.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। মানসিক চাপ সামলাতে ৮৩.২ শতাংশ শিক্ষার্থী অসহায় মুহূর্তে সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। এ সময় ৬৬.৬ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করার চিন্তাভাবনা করেন বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে।
শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতিতে ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থী মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করেন বলে সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কেন্দ্রীয়ভাবে ছাত্র পরামর্শদাতা থাকলেও শিক্ষার্থীরা এতে সন্তুষ্ট নয়। তাই চলতি মাসে মনোবিজ্ঞান বিভাগ থেকে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমাতে কাউন্সেলিং সেবা চালু করা হয়েছে। এরই মধ্যে তারা টেলি-কাউন্সেলিং সেবা চালু করেছে। যেখান থেকে শিক্ষার্থী মোবাইল ফোন ব্যবহার করে টেলি-কাউন্সেলিং সেবা নিতে পারবে।
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি নাসরিন নাহার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে মানসিকভাবে খুবই দুর্বল এবং ইমোশনাল। তাই তারা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। আর এটার কারণ হচ্ছে তারা মানসিকভাবে সুস্থ নয়। সেজন্য প্রথমে তাদের মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি।