× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিশ্ব শিক্ষক দিবস

আশ্বাসেই দিন পার শিক্ষকদের

সেলিম আহমেদ

প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:২৩ পিএম

আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:১৮ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

চলতি বছরের জুলাইয়ে বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে বসেন শিক্ষকরা। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) ডাকে টানা ২১ দিন অবস্থানের পর প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে ক্লাসে ফেরেন তারা। মাধ্যমিক শিক্ষকদের সেই আন্দোলনটি দেশজুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেললেও তাদের সেই দাবি বাস্তবায়নে নেই কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি। শুধু বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক নয়; পদোন্নতি, নতুন পদ সৃষ্টি, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনসহ নানা দাবিতে গত কয়েক দিন থেকে জোরালো আন্দোলন করছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

সর্বশেষ গত সোমবার দিনভর কর্মবিরতি পালন করেন তারা। দাবি আদায় না হলে আগামী ১০, ১১ ও ১২ অক্টোবর টানা তিন দিন ‘সর্বাত্মক কর্মবিরতি’ কর্মসূচি পালনেরও হুমকি দিয়েছেন তারা।

এভাবেই সারা বছর জাতীয়করণ, এমপিওকরণ, স্থায়ীকরণ, পদোন্নাতি, পদ সৃষ্টি, বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ নানা বৈষম্য দূর করার জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের নির্যাতন-নিপীড়ন, প্রাপ্ত মর্যাদা না দেওয়া, যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকাসহ স্বাধীনতার এত বছর পরও শিক্ষা আইন না হওয়ায় শিক্ষার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। বিভিন্ন পরিসংখ্যানও বলছে, মর্যাদা ও বেতনের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের শিক্ষকদের অবস্থান সবার নিচে। তাই জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এ শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর কথা বলা হয়েছিল। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারও বিগত তিনবারের নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রণয়ন ও উচ্চ বেতন নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সেসব প্রতিশ্রুতি আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষা পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থার অগ্রগতির সঙ্গে জড়িত। সব জায়গাকেই প্রভাবিত করে শিক্ষা। আর মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের জন্য সবার আগে প্রয়োজন দক্ষ ও মেধাবী শিক্ষক। কিন্তু শিক্ষকতা পেশায় যুগোপযোগী বেতন কাঠামো ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় মেধাবীরা শিক্ষকতায় আকৃষ্ট হচ্ছেন না। তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো তৈরি এবং মর্যাদা বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

এমন বাস্তবতায় আজ বৃহস্পতিবার সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’। এবারের শিক্ষা দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ‘কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার জন্য শিক্ষক : শিক্ষক স্বল্পতা পূরণ বৈশ্বিক অপরিহার্যতা’।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২২ সালের জরিপ অনুযায়ী, দেশে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে শিক্ষক আছেন ১৪ লাখের বেশি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেনগুলোতে ৭ লাখ ৬২ হাজার ৭০৯ জন আর মাধ্যমিক থেকে উচ্চশিক্ষা স্তরে ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫৫ জন। 

বাংলাদেশের শিক্ষকদের বেতন স্কেল

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়) শিক্ষক-কর্মচারীরা ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী সব সুযোগ-সুবিধা পান। স্কেলভিত্তিক পূর্ণ বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসাভাতা, উৎসব বোনাসের পাশাপাশি বার্ষিক পাঁচ শতাংশ প্রবৃদ্ধিও পান।

আর বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন স্কেলও সরকারিদের সমানই। তবে তা কেবল মূল বেতনে। বাকি সব ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা তারা সরকারি চাকরিজীবীদের মতো পান না। এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা শুরুতে ১১তম গ্রেডে ১২ হাজার ৫০০ টাকা মূল বেতনের সঙ্গে এক হাজার টাকা বাড়িভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান।

আর সরকারি প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা এখনও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। তারা ১৩তম গ্রেডে ১১ হাজার টাকার স্কেলে বেতন পান সর্বসাকল্যে ১৯ হাজার টাকা। প্রতিবেশী ভারতে প্রাথমিকের এই পদমর্যাদার শিক্ষকদের বেতন বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩০ হাজার টাকা।

দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম বেতন বাংলাদেশে

বাংলাদেশে একজন প্রভাষকের মূল বেতন স্কেল ২২ হাজার টাকা, সহকারী অধ্যাপকের ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা, সহযোগী অধ্যাপকের ৫০ হাজার টাকা এবং অধ্যাপকের ৬৪ হাজার ৬০০ টাকা। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে তুলনা করলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা বেতনের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে। ভারতসহ পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রভাষকের পদ নেই। সহকারী অধ্যাপকই শুরুর ধাপ। বেতন তুলনা ও ক্যারিয়ার সংস্থানবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘স্যালারি এক্সপ্লোরার’-এর তথ্য মতে, ভারতে একজন সহকারী অধ্যাপকের মূল বেতন ৪৭ হাজার ৩০৪ রুপি, সিনিয়র স্কেল প্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপকের ৫৬ হাজার ৪৮০ রুপি, সহযোগী অধ্যাপকের ১ লাখ ৭ হাজার ৭৪৮ রুপি এবং অধ্যাপকদের ১ লাখ ১৬ হাজার ৭০ রুপি। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন আরও বেশি।

বিভিন্ন দেশে শিক্ষকদের সামাজিক মান ও বেতন

শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা নিয়ে ২০১৩ সালে গবেষণা করে ভার্কি ফাউন্ডেশন। গবেষণায় দেখানো হয়, এশিয়ার দেশগুলোর সমাজ কাঠামোয় বিশেষ করে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরে শিক্ষকদের বৃহৎ সম্মানের চোখে দেখা হয়। তবে পশ্চিমা দেশগুলোয় শিক্ষকদের মর্যাদা এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় কম।।

জরিপে দেখা গেছে, শিক্ষকদের সামাজিক সূচকে ১০০ পয়েন্টের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা দেশ চীনের সূচক ১০০, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে গ্রিস (সূচক ৭৩ দশমিক ৭), তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে তুরস্ক (সূচক ৬৮), খারাপ সূচকে সবচেয়ে এগিয়ে ইসরায়েল (সূচক ২), দ্বিতীয় (ব্রাজিল ২ দশমিক ৪), তৃতীয় চেক প্রজাতন্ত্র (১২ দশমিক ১)।

শিক্ষক নেতারা যা বলছেন

কর্মকর্তার সংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় দুটি ক্যাডারের একটি হলো শিক্ষা। এই ক্যাডারে মোট ১৬ হাজার ১৩২টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১৩ হাজারের কিছু বেশি। তাদের অধিকাংশই সরকারি কলেজের শিক্ষক। কিছু সদস্য মাউশিসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত।

বিসিএস শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনার পরও শিক্ষা ক্যাডারে দাবিগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বিষয়টি আমাদের জন্য হতাশার। আমরা বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছি। শিক্ষক দিবসের আগে শিক্ষকরা রাজপথের আন্দোলনে- বিষয়টি দুঃখজনক। 

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আমরা রাজপথ ছেড়ে ক্লাসে গিয়েছি। কিন্তু আমাদের দাবির প্রতি এখনও অনড় রয়েছি। ভবিষ্যতে যদি আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সমন্বয় না ঘটে, তাহলে আবার রাজপথে যেতে হবেÑ সেই প্রস্তুতিটা আমরা রাখছি। আমাদের সাফ দাবি, শিক্ষাব্যবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্য দূর করতে হবে।

মাদ্রাসা জেনারেল টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন অর রশিদ বলেন, বেসরকারি সব শিক্ষকের দাবিই একটি। আমাদের মূল দাবি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয়করণ। তবে জাতীয়করণ যেহেতু বিশাল একটি বিষয়Ñ এটি বাস্তবায়ন করতে হয়তো সরকারের একটু সময় লাগতে পারে। তার আগে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উৎসব ভাতা, চিকিৎসা ভাতা ও বাসাভাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের মতো দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। আশা করছি এই শিক্ষক দিবসে আমাদের দীর্ঘদিনের দাবিটি প্রধানমন্ত্রী মেনে নেবেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা