× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অনুসন্ধান

ভুয়া প্রতিষ্ঠানের খপ্পরে পড়ে অর্ধকোটি টাকা গচ্চা

নাঈম ইসলাম, শেরপুর

প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৩৬ পিএম

আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:১৫ পিএম

শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। প্রবা ফটো

শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। প্রবা ফটো

চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্কুল ও কলেজ ওয়েবসাইট তৈরি বা হালনাগাদকরণের নির্দেশনা দিয়ে আদেশ জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। নির্দেশনায় বলা হয়, কিছুসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইট নেই এবং অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের থাকলেও তা হালনাগাদ নেই। আর এ তথ্যানুযায়ী শেরপুরের বিভিন্ন স্কুল, কলেজের ওয়েবসাইট নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে প্রতিদিনের বাংলাদেশ। এতে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। 

অনুসন্ধানে দেখা যায়, নির্দেশনা অনুযায়ী ডাইনামিক ওয়েবসাইট করতে গিয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকা গচ্চা গেছে শেরপুরের প্রায় দুই শতাধিক স্কুল-কলেজের। ভুয়া প্রতিষ্ঠান থেকে কাজ করানোয় ওয়েবসাইটগুলো অচল হয়ে পড়ে আছে। ২০১৫ সালের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় ওয়েবসাইট তৈরি করলে প্রায় ৫০ লাখ টাকা বা তারও বেশি গচ্চা গেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর। 

জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, শেরপুরে মাধ্যমিক স্কুল ১৮০টি ও কলেজ রয়েছে ৩০টি। আবার সম্প্রতি ওয়েবসাইট তৈরি ও হালনাগাদে মাউশি থেকে নির্দেশনা দেওয়া হলে নামসর্বস্ব বিভিন্ন আইটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। তবে এবার প্রতারণার ফাঁদে না পা দিয়ে; অনুমোদিত ও বিশ্বস্ত আইটি প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা নেওয়ার পরামর্শ জানিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা। আর আইটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাচাই-বাছাই না করে চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে অল্প টাকায় মানহীন কাজ করিয়েছিল প্রতিষ্ঠানগুলো। এবার সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান সংশ্লিষ্টদের।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মাউশির পরিচালক অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী সই করা গত ১৯ আগস্টের একটি নির্দেশনা নিয়ে স্কুল ও কলেজে যাচ্ছে বিভিন্ন নামে-বেনামের আইটি প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে একটি ডোমেইন কিনে, পূর্ব তৈরি ফ্রেম (রেডি টেমপ্লেট) ব্যবহার করে মাত্র এক দিনেই ওয়েবসাইট ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে। অথচ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠান পরিচিতি, পাঠদানের অনুমতি ও স্বীকৃতি, শ্রেণি ও লিঙ্গভিত্তিক শিক্ষার্থীদের তথ্য, রুটিন, নোটিস, পাঠ্যসূচি ও ফল সংগ্রহের ব্যবস্থা থাকার কথা থাকলেও তার কিছুই থাকছে না এসব নামমাত্র ওয়েবসাইটে। আবার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জানেই না আইটি কোম্পানির মূল মালিক কে বা কারা। কারণ তারা তৃতীয় একটি দালাল শ্রেণির মধ্যস্থতায় কাজ করিয়েছিলেন। পরে মূল মালিক বা ৩য় পক্ষ কাউকেই পাশে পাননি। অদক্ষ এসব আইটি উদ্যোক্তাদের কারণে এবারও টাকা গচ্চা যাওয়ার শঙ্কায় স্থানীয় শিক্ষকরা। 

এদিকে, গত ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওয়েবসাইটের ঠিকানা মাউশি দপ্তরে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়ার পর থেকেই ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক থেকে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট করে দেওয়ার বিজ্ঞাপনও দেওয়া হচ্ছে। আইটি উদ্যোক্তারা বলছেন, বিটিসিএলের নির্দেশনা ও মূল্য অনুযায়ী সরকার নিবন্ধিত একটি ডোমেইনের মূল্য যেখানে দুই হাজার টাকার ওপরে, সেখানে এত কম টাকায় মানসম্মত ওয়েবসাইট তৈরি সম্ভব না। 

আইটি সেবা প্রধানকারী প্রতিষ্ঠান ‘বিডি আইটি জোন’র প্রধান নির্বাহী ইফতেখার পাপ্পু বলেন, নামসর্বস্ব বহু আইটি কোম্পানি যাদের নিজেদেরই ওয়েবসাইট নেই; এমন অনেক কোম্পানির লোক বিভিন্ন স্কুল-কলেজে গিয়ে স্মার্টভাবে বুঝিয়ে ওয়েবসাইট করে দিয়েছে। আমরা আরও দেখেছি, সরকারি প্রজ্ঞাপন নিয়ে শিক্ষকদের বোকা বানিয়ে স্কুল-কলেজ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে ওইসব ভুয়া প্রতিষ্ঠান পরবর্তীতে আর সেবা দেয়নি। এবার যাতে কেউ প্রতারিত না হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের শিক্ষকদের আরও সচেতন হতে হবে।

শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চলতি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচির মলাটে প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের ঠিকানা দেওয়া থাকলেও তা অচল। ঝিনাইগাতী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ডাইনামিক ওয়েবসাইটও অচল। শুধু এই দুটিই নয়; শেরপুরের ২১০টি স্কুল ও কলেজের মধ্যে দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট এখন অচল। অথচ ২০১৫ সালে মাউশির এক পরিপত্র অনুযায়ী সব প্রতিষ্ঠান প্রধান তাদের ওয়েবসাইট নির্মাণ করেছিলেন।

শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা এ্যানি সুরাইয়া মিলোজ বলেন, ওই সময় নির্দেশনা অনুযায়ী একটি ওয়েবসাইট করা হলেও দক্ষ জনবল না থাকায় ওয়েবসাইটের হালনাগাদ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ডোমেইন রিনিউ করা যায়নি। এজন্য ওয়েবসাইট চলমান ছিল না। আমরা চলতি বছর নির্দেশনা অনুযায়ী আবারও ওয়েবসাইটের নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। 

সানজিদা মীরা, পড়াশোনা করছে শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। কথা হয় তার বাবা প্রকৌশলী আব্দুর রশিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, স্কুল-কলেজের নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকলে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায়। যার কারণে সরকার ওয়েবসাইট করার নির্দেশ দিয়েছিল। সুবিধার মধ্যে হচ্ছে শিক্ষার্থী হাজিরা, রুটিন ও ফল দেখা যাবে ঘরে বসেই। বেতনও দেওয়া যাবে অনলাইনে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও যাবতীয় তথ্য পাওয়া যাবে এক ক্লিকেই। তবে দুঃখজনক ব্যাপার, এসব ওয়েবসাইট এখন কাজ করে না। শিক্ষকদেরকে আইটি কোম্পানি ঠকিয়েছে। এসব কোম্পানির বিচার হওয়া দরকার। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা