ঢাবির জগন্নাথ হল
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:৩১ এএম
আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০০:০৬ এএম
কথা কাটাকাটির জেরে ভাংচুর করা হয়েছে হলের একটি কক্ষের জানালার কাঁচসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র। প্রবা ফটো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে গত শনিবার ভোর ৪টা পর্যন্ত দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি মহড়ায় হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় হল শাখা ছাত্র সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) উৎপল বিশ্বাসের কক্ষ ভাংচুর করা হয়। উৎপল বর্তমানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি। এর আগে তিনি জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ও ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীদের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বনেন্দ্বর জের ধরে এ ঘটনা ঘটে। হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি জয়ন্ত ঘোষ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লিয়ন বালা ও সবুজ কুমার, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব বিশ্বাস ও গণেশ ঘোষ এবং উপদপ্তর সম্পাদক ঋভূ মন্ডল ইনানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সম্প্রতি জয়ন্ত, লিয়ন ও ঋভূ গ্রুপ পরিবর্তন করে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈকতের সঙ্গে রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ নিয়ে অন্য তিনজনের সঙ্গে তাদের বিরোধের সূত্রপাত।
এ প্রসঙ্গে ঋভূ মণ্ডল বলেন, রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ভালো হওয়ার জন্য সৈকত ভাইয়ের সঙ্গে রাজনীতির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শুক্রবার রাত ১২টার দিকে সৈকত ভাইকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর কথা ছিল। হল শাখা ছাত্রলীগের কেউ স্বতস্ফূর্তভাবে আমাদের সঙ্গে চাইলে আসতে পারেন বলেও আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু জয়ন্ত, সবুজ ও রাজিব তাতে বাধা দেয়। তারা হলের সভাপতি কাজল দাস ও সাধারণ সম্পাদক অতনু বর্মণের সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে রড, লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের মারধর করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের এক পর্যায়ে নিজেদের বাঁচাতে একটি গ্রুপের নেতাকর্মীরা হলের সন্তোষচন্দ্র ভট্টচার্য ভবনের ৪০০২ নম্বর কক্ষে যান। উৎপল ওই কক্ষে থাকেন। তিনি বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করেন। তবে তাতে লাভ হয়নি। এক পর্যায়ে তার কক্ষের জানালার কাঁচ ভাংচুর করা হয়। এ সময় ভেতরের আসবাবপত্রও তছনছ করা হয়।
হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব বিশ্বাস অবশ্য বলছেন, গ্রুপ পরিবর্তন নিয়ে কোনও বিবাদ হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি উৎপল রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ৯ বছর ধরে ৪০০২ নম্বর কক্ষটি দখল করে একা থাকছেন। এছাড়া হলের আরও চারটি কক্ষ দখল করে বহিরাগতদের কাছে ভাড়া দিয়েছেন। অথচ আবাসন সংকটে বৈধ ছাত্ররা কষ্ট করে গণরুমে থাকছেন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রাজিব জানান, শুক্রবার রাতে দখল করা কক্ষ নিয়ে কথা বলতে গেলে উৎপল আমাদের মারধর করেন। পরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে সেখানে গেলে ওই কক্ষে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। তখন উৎপল সেখান থেকে সরে যান।
তবে উৎপলের দাবি, কক্ষ দখল বা ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। তার রাজনৈতিক সুনাম নষ্ট করতে একটি পক্ষ এ ধরণের ভিত্তিহীন অভিযোগ ছড়াচ্ছে। কক্ষ ভাংচুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে দুই গ্রুপের বিবাদ মেটানোর চেষ্টা করেছিলেন। ঘটনার সময় তিনি কক্ষের বাইরে ছিলেন। এ সময় এক গ্রুপের ধাওয়া থেকে বাঁচতে অন্য গ্রুপের কয়েকজন ওই কক্ষে গিয়ে আশ্রয় নেয়। অন্য গ্রুপটি তখন ওই কক্ষে হামলা চালালে কিছু আসবাবপত্র এলোমেলো হয়ে যায়। পরে এ ঘট্না ভিন্নখাতে নিতে এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, খবর পেয়ে রাতেই (শুক্রবার) ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পক্ষকে থামানোর উদ্যোগ নিয়েছি। রাজনৈতিক সৌহার্দে্য অভাবে এ ঘটনা ঘটেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কক্ষ ভাংচুরের বিষয়ে লিখিত পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান তিনি।
কক্ষ দখলের অভিযোগ নিয়ে প্রাধ্যক্ষ বলেন, বিষয়টি শুনেছি। এ নিয়ে আবাসিক শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখা হবে। শিক্ষার্থীরা যেখানে গাদাগাদি করতে থাকেন সেখানে বহিরাগতদের হলে থাকার কোনও সুযোগ নেই।