র্যাগিং বর্বর ও ফৌজদারি অপরাধ, চিরতরে বন্ধ করতে হবে : ইউজিসি
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:২৩ পিএম
আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:৫৬ পিএম
র্যাগিংকে বর্বর ও ফৌজদারি অপরাধ উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তা যেকোনো মূল্যে চিরতরে বন্ধ করতে উপাচার্যদের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর।
তিনি বলেন, শিক্ষাঙ্গনে র্যাগিং বা বুলিং বর্বর এবং ফৌজদারি অপরাধ। র্যাগিংয়ে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শিক্ষর্থীরা যেন সুন্দর ও চমৎকার পরিবেশে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ইউজিসি অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের তথ্য অধিকার ও কর্মপরিকল্পনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কমিশনের জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার বিভাগের পরিচালক ড. শামসুল আরেফিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ইউজিসি সদস্য ও বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের ও সচিব ড. ফেরেদৌস জামান।
প্রফেসর আলমগীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং হবে একটা সময়ে এটা কল্পনাতীত ছিল। এখন সংবাদপত্রে র্যাগিংয়ের খবর প্রায়ই প্রকাশিত হচ্ছে। এটা দুঃখজনক ও বর্বরোচিত ঘটনা। ২০ থেকে ২৫ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো র্যাগিং ছিল না। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহমর্মিতা ও সৌজন্যবোধ ছিল। ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় থাকত। বিশ্ববিদ্যালয় হল মুক্তবুদ্ধি চর্চার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট স্থান। ক্যাম্পাসে র্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা মানসিক সমস্যায় ভুগছে। এ অবস্থা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং বন্ধে ইউজিসি জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করবে।
উপাচার্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষার্থীদের প্রবেশ শুরু হয়েছে। এসব শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রোভোস্ট, প্রক্টর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা যেন সুদৃষ্টি দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি র্যাগিং, নিপীড়ন ও নির্যাতন ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যেত এবং এর ব্যবস্থা নিত তাহলে আবরার ও ফুলপরির মতো ঘটনা ঘটত না।
ইউজিসির এ সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সজাগ থাকা এবং র্যাগিংবিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। র্যাগিং যুক্ত ব্যক্তিরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেক প্রতিভাবান, সৃজনশীল ও নান্দনিক। তারা সবসময় র্যাগিং বর্বরতার বিরুদ্ধে। তাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং চিরতরে বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রফেসর আলমগীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তথ্য গোপনের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সব শিক্ষার্থীর কণ্ঠস্বর যাতে প্রতিফলিত হয় সেদিকে নজর দিতে হবে।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্পর্শকাতার জায়গা, কাজেই এখানে এমন পরিবেশে তৈরি করতে হবে যেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে।
তিনি ওয়েবসাইটে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর প্রোফাইল তৈরি, শিক্ষকদের গবেষণা, দেশ-বিদেশে তাদের অবস্থানের তথ্য যুক্ত করার পরামর্শ দেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে লিঙ্গ বৈষম্য কমানো ও মুক্তিবদ্ধি চর্চার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করার আহ্বান জানান।
প্রফেসর আবু তাহের বলেন, তথ্য অধিকার আইন দেশের একমাত্র আইন যেখানে তথ্য দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে এই তথ্য না দিলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও আইনে বলা আছে।
তিনি ব্যতিক্রমী বিষয় ছাড়া সব তথ্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার আহ্বান জানান। এ ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট হালনাগাদ করা এবং যাবতীয় তথ্য ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশে অনুরোধ করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্য সেবাবক্স স্থাপনের অনুরোধ করেন এবং তথ্য অধিকার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বাপরোপ করেন।
কমিশনের উপপরিচালক ও তথ্য অধিকার আইনের ফোকাল পয়েন্ট মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে রিসোর্সপার্সন ছিলেন কমিশনের উপপরিচালক ও বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির ফোকাল পয়েন্ট বিষ্ণু মল্লিক।
প্রশিক্ষণে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অধিকার আইনের ফোকাল/বিকল্প পয়েন্ট ও ইউজিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ অংশগ্রহণ করেন।
