মানববন্ধনে রাবি অধ্যাপক
রাজশাহী অফিস
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৩ ১৯:২৩ পিএম
আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৩ ১৯:৫৭ পিএম
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে নতুন মোড়ক দিয়ে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে দাবি করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকিব বলেছেন, ’সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে যাতে ক্ষমতাসীনদের কেউ সমালোচনা করতে না পারে। যে রাষ্ট্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করা হয়, সেটা অন্তত সভ্য রাষ্ট্র নয়।’
বুধবার (৩০ আগস্ট) রাবির শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ব্যানারে মানববন্ধনটির আয়োজন করা হয়। রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আবদুল মজিদ অন্তরের সঞ্চালনায় অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকিব বলেন, ‘খুবই ন্যক্কারজনকভাবে এ ঘটনাগুলো ঘটছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মাইদুল ইসলামকে হয়রানি ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী পিএইচডি শিক্ষার্থীর ফেসবুকের একটি পোস্টের জবাব দেওয়া হয়েছে তার ষাটোর্ধ্ব মাকে বন্দি করার মাধ্যমে। এ ঘটনাগুলো জঘন্যতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। একটা ঘটনায় দেশের সাধারণ নাগরিক বললে কাজ হয় না, কিন্তু বিদেশি দাদারা বললে তখন সরকার মুখে যাই বলুক না কেন সঙ্গে সঙ্গে কাজ হয়ে যায়, যা সরকারের আরেকটি ন্যক্কারজনক বৈশিষ্ট্য।’
আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতেখারুল আলম মাসুদ বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে সাইবার নিরাপত্তা আইন নামে যে কালো আইন করা হয়েছে, সে আইনে এক বছর ধরে চরম অবিচারের স্বীকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা। এই আইনের শিকার হয়ে দুই বছর আগে মুশতাক নামক একজন লেখককে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সরকারের সমালোচনা করা আমাদের গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার। আজকে শুধু খাদিজাই নয়, ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজনকে শোকজ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েরও একজন শিক্ষককে ফেসবুকে একটি পোস্টের কারণে রেজিস্ট্রারের দপ্তর থেকে শোকজ করা হয়েছে। আমাদের একটাই দাবি, আমরা অবিলম্বে এই সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল চাই। একই সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী খাদিজাকে মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে বিরোধী পক্ষকে জিম্মি করে রাখা হচ্ছে উল্লেখ করে লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক পারভেজ আজহারুল হক বলেন, ‘প্রায় এক বছর ধরে খাদিজাকে নির্বিচারে আটকে রাখা হয়েছে। শুধু খাদিজাই নয়, এমন অসংখ্য তরুণ শিক্ষার্থী যারা সরকার দলের বিপক্ষে কথা বলছে তাদের জিম্মি করে রাখা হচ্ছে কারাগারে। এই আইনের আওতায় দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড প্রদান করা হচ্ছে। আমি এই আইন বাতিলসহ আইনে যারা দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছে তাদের সুবিচারসহ খাদিজাকে অবিলম্বে মুক্তির দাবি করছি।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম মাসুদ রেজা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহম্মদ মাহমুদ জামান কাদেরী, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাকিব হাসান, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের সভাপতি মেহেদি হাসান মুন্না, ছাত্র অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি রায়হান আলী প্রমুখ।
অনলাইনে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচার এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবরে খাদিজাতুল কুবরা এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় পৃথক দুটি মামলা করে পুলিশ। গত বছরের ২৭ আগস্ট নিউমার্কেট থানার মামলায় মিরপুরের বাসা থেকে খাদিজাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অনলাইনের যে অনুষ্ঠানে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচারের অভিযোগ আনা হয়েছে, সেই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন খাদিজা। তখন তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন।