× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

উপাচার্যের ইচ্ছাই যেখানে নিয়ম ছিল

সেলিম আহমেদ

প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৩ ১৪:১০ পিএম

সলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়।

সলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়।

সিন্ডিকেটের অনুমোদন ছাড়াই একক ক্ষমতাবলে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ীভাবে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে জাকির হোসেনকে নিয়োগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আহসান উল্লাহ। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়টির নিয়ম অনুযায়ী ভিসির একক নিয়োগের কোনো ক্ষমতা নেই। তা ছাড়া জাকির হোসেনের শিক্ষাগত যোগ্যতাও এই পদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে তার নেই কোনো অভিজ্ঞতা; এ ছাড়া শিক্ষা কার্যক্রমের একটি পর্বে রয়েছে তৃতীয় বিভাগ। তাই বেআইনিভাবে নিয়োগ দেওয়া জাকিরকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শুধু জাকির হোসেন নয়, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উপ-রেজিস্ট্রার, সহকারী পরিচালক, সেকশন অফিসার, সহকারী প্রোগ্রামার, অডিট অফিসার, অফিস সহকারী, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, ফটোমেশিন অপারেটর, নিরাপত্তাপ্রহরীসহ একাধিক পদে নিয়োগ দিয়েছেন সাবেক উপাচার্য ড. আহসান উল্লাহ। তার ইচ্ছাই ছিল ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগজনিত সব নিয়মের উৎস। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) এক তদন্তে বিষয়গুলো প্রমাণিত হয়েছে। 

এমন প্রেক্ষাপটে সাবেক উপাচার্য আহসান উল্লাহর এসব কাজের কঠোর সমালোচনা করেছে তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, যৌন নিপীড়ন ও জামায়াতে ইসলামীর রুকন হিসেবে সাংগঠনিক তৎপরতা পরিচালনা ইত্যাদি বিষয়েও তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছে।

সম্প্রতি ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়টির নিয়োগে নানা অনিয়মের বিষয় অনুসন্ধান করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এই তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ। এরপর গত ১৯ জুন অনিয়মের কারণে নিয়োগপ্রাপ্তদের অব্যাহতি ও অপসারণ এবং এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে শূন্য হওয়া পদগুলোতে নতুন নিয়োগের সুপারিশ করে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চিঠি পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মাহমুদুল আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘প্রতিবেদনে প্রমাণিত অভিযোগগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে সুপারিশের আলোকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করতে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসাগুলো তত্ত্বাবধান করে। ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি এ প্রতিষ্ঠানের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আহসান উল্লাহ। পরে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদেও নিয়োগ পান তিনি। এই মেয়াদ শেষ হয় চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি। গত ৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আবদুর রশীদকে। 

ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১৩-এর ধারা-১২-তে উল্লেখিত উপাচার্যের ক্ষমতা ও দায়িত্বের মধ্যে অস্থায়ী ভিত্তিতে বা কোনোভাবে জনবল নিয়োগের কোনো উল্লেখ না থাকার পরও তৎকালীন উপাচার্য ড. আহসান উল্লাহ আইনের তোয়াক্কা না করে মো. জাকির হোসেনকে ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সহকারী রেজিস্ট্রার পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেন। পরে ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের তোয়াক্কা না করে এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন না নিয়ে তাকে একক ক্ষমতাবলে স্থায়ী নিয়োগ দেন তিনি। নিয়োগটিকে ‘পুরোপুরি আইনত অবৈধ’ বলে মন্তব্য করেছে তদন্ত কমিটি। তাকে এই পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে মন্ত্রণালয়। 

একইভাবে নিয়ম না মেনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বিএনপি সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ওসমান ফারুকের আত্মীয় ড. মো. আবু হানিফাকেও। এই পদের জন্য ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু আবু হানিফার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা ছাড়া যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এই আবেদনের কোনো কাগজপত্র এবং আগের প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্রও পাওয়া যায়নি। তার নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের সুপারিশের মূল কপি নেই। নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের সুপারিশের যে ফটোকপি রয়েছে, তা টেম্পারিং করা বলে মনে করছে তদন্ত কমিটি।

আবু হানিফা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিভিন্ন মেয়াদে কয়েক দফায় রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক রেজিস্ট্রার রোশন খান তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন, আবু হানিফার কাছে উপাচার্য ড. আহসান উল্লাহ সব গোপনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ অফিসিয়াল কাগজপত্র সংরক্ষণ করতেন। তাই ওই টেম্পারিংয়ের দায় আবু হানিফার ওপরও বর্তায় বলে মনে করছে তদন্ত কমিটি। আবু হানিফাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবিলম্বে অপসারণের সুপারিশ করেছে মন্ত্রণালয়।

বিশ্ববিদ্যালয়টির আরেক সহকারী রেজিস্ট্রার ফাহাদ আহমদ মোমতাজী ও সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) জিয়াউর রহমানসহ আরও কয়েকজনকে কয়েকটি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রেও অনিয়ম পেয়েছে তদন্ত কমিটি। ফাহাদ আহমদ মোমতাজীর ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের অনুমোদন ছাড়াই অভিজ্ঞতার শর্ত শিথিল করেছেন সাবেক উপাচার্য ড. আহসান উল্লাহ। আর সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে প্রযোজ্য অভিজ্ঞতা না থাকার পরও নিয়োগ পেয়েছেন জিয়াউর রহমান।

এ ছাড়াও ২০১৮ সালের ২৪ মে প্রকাশিত সংশোধিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এবং ২০১৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ১০ম সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সেকশন অফিসার, সহকারী প্রোগ্রামার, অডিট অফিসার, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, ফটোমেশিন অপারেটর, অফিস সহায়ক ও নিরাপত্তাপ্রহরী পদে নিয়োগের নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের সুপারিশের মূল কপি না থাকায় এবং সুপারিশের ফটোকপি টেম্পারিং করার বিষয়টি কমিটির কাছে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ও ন্যূনতম নির্ধারিত যোগ্যতা সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদিত না হওয়ায়, মেধাক্রমে থাকার পরও বাদ দেওয়ায়, নিচের সিরিয়াল নম্বরধারীকে নিয়োগ দেওয়ায়, মেধাতালিকা না মানায় এবং যে পদের জন্য আবেদন করা হয়েছে সেই পদের বাইরে অন্য কোনো পদে নিয়োগ দেওয়ায় আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে।

এসব নিয়োগ বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য (রাষ্ট্রপতি) ও কমিশনের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করে নিয়োগ কমিটি গঠন করতে এবং সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদিত ন্যূনতম নির্ধারিত যোগ্যতা অনুযায়ী উন্মুক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব পদে প্রয়োজনের ভিত্তিতে নতুন করে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি। এ ছাড়া শিক্ষক পদের বিষয়ে কমিশনের অনুমোদন না থাকায় ওই পদে অস্থায়ীভাবে দেওয়া নিয়োগ অবৈধ বলে সেগুলো বাতিলের সুপারিশও করেছে মন্ত্রণালয়। 

যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আহসান উল্লাহ বলছেন, তার সময়ে সব নিয়োগই যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে সিন্ডিকেটের অনুমোদন নিয়েই হয়েছে। নিয়োগে কোনো অনিয়ম হয়নি। ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইউজিসি যেসব অনিয়মের কথা বলছে, তা সঠিক নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য ড. মুহাম্মাদ আবদুর রশীদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ আমরা পেয়েছি। তবে এ বিষয়ে আমি একা সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। আগামী সিন্ডিকেট সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। সেখানে আলাপ-আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ 

কবে নাগাদ সিন্ডিকেট সভা হতে পারে,Ñ এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আশা করছি ২৮ আগস্ট সিন্ডিকেট সভা হবে।’

ইউজিসির সদস্য ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়টির নিয়োগে অনেক অনিয়ম হয়েছে। অনিয়ম করে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের বাদ দেওয়ার জন্য আমরা সুপারিশ করেছি।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা