ডেঙ্গু পরিস্থিতি
সেলিম আহমেদ
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৩ ১২:৩৮ পিএম
প্রতীকী ছবি
দেশের মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ ও ভবন, ফুলের টব নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের বিষয়টি নিশ্চিত করতে গত ৬ জুলাই নির্দেশনা দিয়েছিল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের প্রতি ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায় নিয়ে প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের জানানোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ৩১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই নির্দেশনা অনুসরণ করেনি বলে দেখা গেছে খোদ মাউশির মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন শাখার জরিপে। এ জরিপে দেখা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ ও ভবন, ফুলের টবসহ বিভিন্ন স্থানে পানি জমার কারণে এডিস মশা প্রজননের সুযোগ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৬ জুলাই ডেঙ্গু প্রতিরোধসংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়ার পর গত ২৭ জুলাই আরেক চিঠিতে মাউশি মাঠ পর্যায়ের পরিদর্শনকারী কর্মকর্তাদের সরেজমিনে পরিদর্শন করে ডেঙ্গু বিস্তার রোধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাসংক্রান্ত তথ্য পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশের আলোকে ইতোমধ্যে কর্মকর্তারা ২ হাজার ৩৫৬টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে মাউশিতে তথ্য পাঠিয়েছেন।
মাউশির মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন শাখা থেকে জানা গেছে, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ ও ভবনসমূহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নেই। ১৬৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ কিংবা ভবনের কোথাও পানি জমে আছে। পানি জমে থাকলেও ৫২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত তা নিষ্কাশনের উদ্যোগ নেয়নি। ২৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফুলের টব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নয়। ১৭টি প্রতিষ্ঠান ফুলের টব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ১১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এডিস মশার প্রজননের সুযোগ আছে, এমন স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়নি। এ ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায় নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন অবহিত করার কথা থাকলেও ২৮টি বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষক তা করেননি।
মাউশির মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন শাখার পরিচালক অধ্যাপক মো. আমির হোসেন বলেন, ‘যেসব বিদ্যালয়ে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে, সেগুলোতে পরিদর্শনকারী কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে তা সমাধানের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরাও কিছু নির্দেশনা দেব।’
এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাউশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ৫টি নির্দেশনা দিয়েছিল। কিন্তু মাউশির এসব নির্দেশনা অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মানেনি; যা খুবই দুঃখজনক। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই উচিত তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।’
তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু থেকে রেহাই পেতে হলে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও বাইরে ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে। বিশেষ করে শৌচাগারের কমোড ও প্যান পরীক্ষা করে দেখতে হবে, কোথাও পানি জমে আছে কি না। কারণ এখানেও মশার লার্ভা থাকতে পারে। পানির ট্যাংক, ওয়াসার মিটার, ছাদ এবং নিচতলার ফ্লোরগুলো ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে কোথাও কোনো জায়গায় পানি জমে আছে কি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও বাইরে সিটি করপোরেশন অথবা নিজ উদ্যোগে উড়ন্ত মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য ফগিং করতে হবে। কারণ উড়ন্ত মশা জ্যামিতিক হারে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটিয়ে থাকে।’