বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৩ ২১:১৩ পিএম
আপডেট : ২৩ জুন ২০২৩ ২২:০৮ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) ক্যাম্পাসে রাস্তার পাশে থাকা ল্যাম্পপোস্টগুলোর প্রায় অর্ধেকেরই আলো জ্বলে না। আবার কোনো কোনোটিতে আলো জ্বললেও সেই আলোর অবস্থা হ্যারিকেনের আলোর মতো। কোথাও কোথাও নেই কোনো ল্যাম্পপোস্ট। ফলে রাতের অন্ধকারে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, দ্রুত ল্যাম্পপোস্টগুলো ঠিক করা দরকার কিংবা নতুন ল্যাম্প লাগানো উচিত। তা না হলে যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে ক্যাম্পাসে বেড়ে চলেছে মাদকসেবীদের আড্ডা। এরই মধ্যে দ্রুতগতির গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে অজ্ঞাত ব্যক্তির আহত হওয়ার তথ্যও পাওয়া গেছে। বেড়েছে ছিনতাইকারীদের আনাগোনা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, ঈদের পরে ল্যাম্পপোস্ট সমস্যার সমাধান করা হবে। এরই মধ্যে তারা সংশ্লিষ্ট শাখাকে বিষয়টি জানিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম প্রবেশ গেট থেকে কৃষি অনুষদ পর্যন্ত রাস্তার পাশের ল্যাম্পপোস্টগুলোর বেশিরভাগই অকেজো। সন্ধ্যা হলেই এই রাস্তা চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। প্রথম গেটে প্রবেশের পর শেখ কামাল ভবন থেকে সয়েলের মোড় পর্যন্ত সাতটি ল্যাম্পপোস্ট লাইটের পাঁচটিই নষ্ট।
একই অবস্থা ছাত্রীদের হলে যাওয়ার রাস্তায়ও। ফজিলাতুন্নেছা হল থেকে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া পর্যন্ত ছয়টি লাইটের অর্ধেকই অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। ছাত্রীদের হলের রাস্তার বেশিরভাগই থাকে অন্ধকারে। চারদিকে এমন অন্ধকারের কারণে রাস্তায় চলতে ভয় পান ছাত্রীরা।
ক্যাফেটেরিয়া থেকে কৃষি অনুষদে যাওয়ার রাস্তায় একটিও লাইট নেই। একই দিকের কৃষি অনুষদের প্রবেশের রাস্তার লাইটটির প্রাণ যেন যায় যায়। নতুন লাইট লাগানোর অল্প দিনের মাথায় আবারও নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে অন্ধকারে ওই রাস্তায় অপরাধ কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ খোঁজেন বহিরাগতরা। কিছু শিক্ষার্থীও এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলেও জানা গেছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড গেট থেকে টিএসসি পর্যন্ত রাস্তায় তিনটি ল্যাম্পপোস্ট থাকলেও তার সবই অকেজো। টিএসসির দক্ষিণ পাশেও নেই ভালো আলোর ব্যবস্থা। এতে মৃদু আলোতে বসছে মাদকসেবীদের আড্ডা। দিনের বেলা পাওয়া যাচ্ছে মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম। অন্ধকারে প্রতি রাতে মাদকসেবীদের মাতলামি দেখা যায় টিএসসির সিঁড়িতে। আবার প্রশাসনিক ভবন থেকে শহীদ মিনার যাওয়ার রাস্তায় ৯টির দুটি এবং সেন্ট্রাল মসজিদ যাওয়ার রাস্তায় চারটির একটি, সেন্ট্রাল মসজিদ থেকে শেরেবাংলা হল এবং মাঠের পাশে ছয়টির দুটি লাইট অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে।
এদিকে আলোবিহীন ক্যাম্পাসে চলতে গিয়ে বহিরাগতদের বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোয় ঘটছে দুর্ঘটনা। গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে আহতও হয়েছেন এক ব্যক্তি। ক্যাম্পাসের আশপাশে ছিনতাইয়ের ঘটনায়ও আতঙ্কে আছেন শিক্ষার্থীরা। আলোক স্বল্পতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ক্যাম্পাসে যেকোনো সময় ছিনতাই বা এর চেয়েও বড় ধরনের অঘটন ঘটার আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সজীব হাসান বলেন, ’এক মাস আগে নষ্ট হয়েছে লাইটগুলো। অথচ এখনও নতুন লাইটের ব্যবস্থা করেনি। এ অবস্থায় রাতে হল থেকে বের হতে ভয় লাগে। কর্তৃপক্ষের দ্রুত এসব সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসা দরকার। বৃষ্টির দিনে অন্ধকারে রাস্তায় চলতেও অসুবিধা হয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক হারুন-উর-রশীদ জানান, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর অর্ধশতাধিক বহিরাগত মাদকসেবীকে ধরেছেন। ক্যাম্পাসের লাইট নিয়ে সমস্যা দেখার দায়িত্ব ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনের। তাদের নিয়মিত রিপোর্ট দেওয়া হয়। ঈদের পরে টিএসসি ও অক্সফোর্ড রোডে হ্যালোজেন লাইট লাগিয়ে দেওয়া হবে।
নিরাপত্তা শাখায় কর্মরত ইউনুস আলী বলেন, ’গত সপ্তাহে প্রধান প্রকৌশলীকে লাইট অকেজো হয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছে। সম্ভবত শিগগিরই ঠিক করে দেবে।’
প্রধান প্রকৌশলী মোমেনুল আহসান বলেন, ’লাইট অকেজোর বিষয়টি জানতে পেরেছি। লোক পাঠিয়ে দেখব কোথায় কোথায় নষ্ট হয়েছে।’