বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৩ ১৭:৩৫ পিএম
আপডেট : ১৮ জুন ২০২৩ ১৭:৫৩ পিএম
সংগৃহীত ফটো
রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) আর গণরুম থাকছে না। আবাসিক হলগুলোকে দীর্ঘদিন ধরে চলা গণরুম ব্যবস্থা থেকে বের করে আনতে উদ্যোগ নিচ্ছে প্রশাসন। সর্বশেষ কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের গণরুম খালি করার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণরুম ব্যবস্থা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
প্রতিটি হলে শিক্ষার্থীদের গণরুমে গাদাগাদি করে ৫০-৬০ জনকে একত্রে থাকতে হতো। এতে স্বাভাবিকভাবে পড়াশোনা করতে না পারাসহ নানা ছোঁয়াচে রোগ ও অসুবিধায় ভুগতেন শিক্ষার্থীরা।
সর্বশেষ তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার (১৪ জুন) কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের গণরুমে (১০৯) থাকা শিক্ষার্থীদের সিঙ্গেল রুম দেওয়ার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছোট-বড় গণরুম বিলুপ্ত করা হয়। তবে এখনও কয়েকটি চারজনের রুমে থাকছেন ৫-১২ জন করে। তবে তাদেরও সিঙ্গেল সিটে তুলে দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত আলোচনা এবং সিটের খোঁজ চালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এর আগে গণরুম ব্যবস্থা থেকে বের হতে নতুন ভর্তি হওয়া জুনিয়রদের (৮১তম ব্যাচ) নতুন হলে সিঙ্গেল সিটে তুলে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পর্যায়ক্রমে ৮০তম ব্যাচকেও হলটির বিভিন্ন রুমে সিঙ্গেল সিটে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু বিপত্তি বাধে ৭৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের। তাদেরও নতুন হলে সিট দেওয়ার কথা থাকলেও নানা কারণে দীর্ঘদিন সিঙ্গেল সিট দিতে দেরি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তবে ৩১ মে রাতে শেখ হাসিনা হলের ৭৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা দুই কার্যদিবসের মধ্যে সিঙ্গেল সিটের দাবিতে অবস্থান নিলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এক সপ্তাহের মধ্যে সিঙ্গেল সিট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হলে ফেরানো হয় ছাত্রীদের।
শেখ হাসিনা হলের ৭৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা আগে এক রুমে ১০-১২ জন থাকতাম। সিঙ্গেল সিটের জন্য হলগেটে দাবি জানালে ৭ দিনের মধ্যেই সিঙ্গেল সিটের ব্যবস্থা করে দেন প্রশাসন।
ছাত্রীদের দাবির পরদিনই নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা হলের ৭৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের সঙ্গে দেখা করলে ৭ দিনের মধ্যেই সিঙ্গেল সিটের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা হলের ৭৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাকিব প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা আগে এক রুমে ৯ জন থেকেছি। জুনের ১ তারিখ প্রশাসনের সঙ্গে সিটের ব্যাপারে কথা বললে ওই দিনই হলের প্রাধ্যক্ষ আমাদের বড় ভাইদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং ৭ দিনের মধ্যেই আমাদের সিটের ব্যবস্থা করে দেন। তবে এখন চারজনের রুমে পাঁচজন করে আছি।’
তবে শেরেবাংলা হলের ৭৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আতিক ইকবাল জানান, অন্যান্য সব হল থেকে গণরুম এবং এক সিটে দুজন করে থাকা শিক্ষার্থীদের সিঙ্গেল সিট দিলেও আমাদের কোনো সুরাহা হয়নি। আমরা এখনও এক রুমে (১০১) ১২ জন করে থাকছি। আমাদের হলে শুধু আমরাই এভাবে থাকছি। প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেও কোনো সুফল মেলেনি। কয়েকবার যাওয়ার ফলে আমাদের অস্থায়ীভাবে স্টাফরুমে থাকতে বলেছিল। আমরা কয়েকজন সেখানে থাকতে রাজি হয়েছিলাম। তবে পরে অজানা কারণে আর উঠতে দেয়নি।’
নজরুল হলের শিক্ষার্থী জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘আমরা চারজনের রুমে ছয়জন থাকি। আমাদের অন্য লেভেলমেটরা সিঙ্গেল সিট পেয়েছে। তবে আমাদের বড় ভাই এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উদ্যোগ নিচ্ছে সিঙ্গেল সিটের জন্য, কিন্তু সিট কম থাকায় হয়ে উঠছে না। আশা করি শিগগিরই সিঙ্গেল সিট পাব।’
এসব বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. অলোক কুমার পাল বলেন, ‘আমাদের নৈতিক দায়িত্ব আমাদের শিক্ষার্থীদের সঠিক আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। যেখানে সিট ফাঁকা ছিল খোঁজ নিয়ে সেখানে শিক্ষার্থীদের তুলে দিয়েছি। এখনও যারা সমস্যায় রয়েছেন তাদের দ্রুত তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’