বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৩ ১৭:২৮ পিএম
আপডেট : ১৩ জুন ২০২৩ ১৮:২৩ পিএম
ফাইল ফটো
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোনো প্রার্থনাকক্ষ বা মন্দির। ফলে তাদের পূজা করতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ, ক্যাফেটেরিয়ার দোতালায় কিংবা প্রশাসনিক ভবনের নিচে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উম্মুক্ত স্থানে বসে প্রার্থনার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ফলে বিষয়টি আবারও আলোচনায় আসে।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের নিকট দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রার্থনাকক্ষ বা মন্দিরের জন্য রুম বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরস্বতী পূজা, দীপাবলি, হোলিসহ জন্মাষ্টমী, রাধাষ্টমী, প্রত্যেক মাসে সনাতন শিক্ষার্থীরা মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে একাদশী পালনের আয়োজন করে থাকে। একই সঙ্গে সাপ্তাহিক প্রার্থনায় বসে ঈশ্বরনাম করা, ধর্মকথা আলোচনা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। এসব আয়োজনে নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় বিপাকে পড়তে হয় তাদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র শীল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিনিয়ত মানসিক চাপের মধ্যে থাকতে হয়। বিজ্ঞান বলে, প্রার্থনার মাধ্যমে মানসিক সুস্থতা ও মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছরেও প্রার্থনার জন্য মন্দির পায়নি কুবির সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি মন্দির করে দিয়ে আমাদের মনের মন্দিরে স্থান করে নেবেন।’
নৃবিজ্ঞান বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সুস্মিতা পাল বলেন, ‘ক্যাম্পাসে আসার পর আমি রথের মেলায় অংশগ্রহণ করি; যেটা কীনা আমার ক্যাম্পাস থেকে অনেকটা দূরে। তখন একজন সনাতনী হিসেবে প্রথম অনুভব করি যে, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে সনাতনীদের জন্য কোনো মন্দির নেই। বলা হয়ে থাকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বারো মাসে তেরো পার্বণ। গত দীপাবলিও ঝড়ের কারণে মুক্তমঞ্চ থেকে ক্যাফেটেরিয়ার ১২ নম্বর রুমে উদযাপন করি, প্রশাসনও সেদিন উপস্থিত ছিল। কিন্তু সনাতনীরা আর কত দিন মুক্তমঞ্চে,ক্যাফেটেরিয়াতে দৌঁড়াদৌড়ি করবে?
তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তিরই নিজ সংস্কৃতি ও ধর্মীয় চর্চা প্রয়োজন। আর এই মন্দির স্থাপনের দাবি সেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই। প্রশাসন যদি একটু এই বিষয়ে নজর দেয় তাহলে হয়তো শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘব হবে।’
পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ধ্রুব বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সনাতনী কমিউনিটির অনেক দিন থেকেই ইচ্ছে ছিল যে, আমরা সাপ্তাহিক এক দিন হলেও সবাই একত্রে বসে প্রার্থনা করব। কিন্তু মন্দির না থাকায়, প্রার্থনা করা সম্ভব হচ্ছিল না। তারপরও সবার একান্ত ইচ্ছার ফলে আমরা খোলা আকাশের নিচেই আমাদের সাপ্তাহিক প্রার্থনা চালু করেছি। যদি প্রশাসন আমাদের জন্য কোন একটা ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে আমরা সুন্দরভাবে আমাদের প্রার্থনা করতে পারব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমার কাছে এর আগে এসেছিল।তাদের আমি বলেছি আমাদের এখন রুম সংকট। রুমের সংকট কেটে গেলে শিগগিরই তাদের জন্য একটা প্রার্থনাকক্ষের ব্যবস্থা করে দিব। এই বিষয়টা আমাদের নজরে আছে।’