× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

ফের বেপরোয়া ছাত্রলীগ, নির্বিকার প্রশাসন

সুবল বড়ুয়া, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৩ ১০:৩৬ এএম

আপডেট : ০৩ জুন ২০২৩ ১০:৪২ এএম

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক। ফাইল ফটো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক। ফাইল ফটো

জামায়াত-শিবিরের শক্ত ঘাঁটি খ্যাত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) এখন ছাত্রলীগের একক আধিপত্য। অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর শক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একেবারেই নগণ্য। গ্রুপ-উপগ্রুপের সংঘর্ষ, খুনোখুনি, দলাদলি ও গ্রুপিংয়ে এই ছাত্রলীগ এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গলার কাঁটায়’ পরিণত হয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, প্রভোস্ট অফিস ভাঙচুরসহ ক্যাম্পাসজুড়ে অসুস্থ রাজনীতির কারণে বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে শাখা ছাত্রলীগ। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির কারণে এই সংকট দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই রেজাউল হক রুবেলকে সভাপতি ও ইকবাল হোসেন টিপুকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এর তিন বছর পর গত বছরের ৩১ জুলাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ৩৭৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে ৬৯ জন সহ-সভাপতি, ১২ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ১১ জন সাংগঠনিক সম্পাদক রাখা হয়। 

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির মেয়াদ এক বছর। কিন্তু চার বছর পার হলেও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। এ কারণে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ হয়। 

গত বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার দুপুরে বগিভিত্তিক গ্রুপ সিক্সটিনাইন ও সিএফসি গ্রুপের মধ্যে পৃথক সংঘর্ষে অন্তত ২৪ জন আহত হওয়ার পাশাপাশি ক্যাম্পাসটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এর মধ্যে সিএফসি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল এবং সিক্সটিনাইন গ্রুপের নেতৃত্বে সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু। সিক্সটিনাইনের কর্মীরা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী এবং সিএফসির কর্মীরা শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীর তথ্যানুযায়ী, বুধবার রাত ১০টার দিকে চবি ছাত্রলীগের উপ-প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক ও শাটলের বগিভিত্তিক সিক্সটিনাইন গ্রুপের অনুসারী মাহফুজ আল মামুন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ঢাকা হোটেলে খাবার খেতে যান। এ সময় সেখানে চেয়ারে বসা নিয়ে সিএফসি গ্রুপের কয়েকজন অনুসারীর সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। পরে সিএফসির কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শাহ আমানত হল ও সিক্সটিনাইনের কর্মীরা শাহজালাল হলের সামনে অবস্থান নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এ সময় উভয়পক্ষের অন্তত ৯ জন কর্মী আহত হন। প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশের চেষ্টায় রাত ১২টার দিকে সংঘর্ষ থামে। তবে রাতভর ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে।

এদিকে বুধবার রাতের সংঘর্ষের জের ধরে পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে শাহ আমানত হল ও শাহজালাল হলের সামনে আবারও দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। দুপক্ষই ছুড়তে থাকে ইটপাটকেল। এ সময় দুপক্ষের অনেকের হাতে দেশীয় অস্ত্র ও মাথায় হেলমেট দেখা যায়। একটি ককটেলও বিস্ফোরিত হয়।

তবে দুপুর ১টা থেকে বেলা প্রায় ৩টা পর্যন্ত পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি সংঘর্ষস্থলে থাকলেও অনেকটা নির্বিকার অবস্থায় ছিল। তারা ঘটনাস্থলে থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। অনেকটা দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিল। কেননা, ছাত্রলীগের দুপক্ষের শত শত নেতাকর্মী সংঘর্ষে জড়ায়। একে অপরকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন। তবে বেলা ৩টার পর যখন জেলা পুলিশের স্পেশাল ফোর্স ও র‌্যাব ঘটনাস্থলে আসে, তখন প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ সদস্যদেরও তৎপর হতে দেখা যায়। 

চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিশাল জায়গা। কিছু ঘটনা আসলে ঘটে যায়। আর কিছু হলেই ছাত্রলীগের নাম চলে আসে। অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যেহেতু বর্তমান চবি ছাত্রলীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ, সেক্ষেত্রে নতুন কমিটি গঠন করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন কি না? এ প্রশ্নের উপযুক্ত জবাব না দিয়ে রুবেল জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এখন ছাত্রলীগের দখলে। সেটি বেদখলে হতে দেওয়া যাবে না।

বারবার সংঘর্ষ হওয়া প্রসঙ্গে চবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘মারামারিতে না জড়াতে কর্মীদের বারবার বলে থাকি। কিন্তু এরপরও বারবার সংঘর্ষ বেধে যায়। এবারের সংঘর্ষের বিষয়টি তদন্ত করছি। তদন্তে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে প্রশাসনের নির্বিকার থাকার বিষয়টি মানতে নারাজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নুরুল আজিম শিকদার। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বিকার ছিল না। আমরা সবাই তো ঘটনাস্থলে ছিলাম। ইটপাটকেল পড়ে আমি ও আরেক সহকারী প্রক্টর পায়ে আঘাত পেয়েছি। দুপক্ষের শত শত ছাত্র যখন ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়; তখন আমাদের পর্যাপ্ত ফোর্স ছিল না। তাই দুপক্ষের মাঝখানে থেকে পুলিশসহ প্রক্টরিয়াল বডি মানবঢাল তৈরি করে সংঘর্ষ থামানোর চেষ্টা করেছি। এ ছাড়া তারা সবাই তো আমাদের সন্তানতুল্য ছাত্র।’

শাখা ছাত্রলীগের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান যে কমিটি আছে সেটি মেয়াদোত্তীর্ণ। সেখানকার বেশকিছু শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকাণ্ড নজরে এসেছে। তাদের মনে রাখা উচিত, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কখনও সংঘাত বরদাশত করে না। তাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা