বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৩ ২২:৪১ পিএম
আপডেট : ০২ জুন ২০২৩ ২২:৪১ পিএম
জাবি শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়। প্রবা ফটো
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করাসহ তিন দফা দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালন করছেন সামিউল ইসলাম প্রত্যয় নামে এক শিক্ষার্থী। তিনি ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের (৪৯তম ব্যাচের) ও মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র।
প্রত্যয়ের তিন দফা দাবি হলো- গণরুম বিলুপ্তি, মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্রদের অবিলম্বে হল ত্যাগ ও গণরুম-মিনি গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের সিট সুনিশ্চিত করা।
গত বুধবার (৩১ মে) সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনশন পালনের ঘোষণা দেন তিনি। সর্বশেষ তথ্যমতে ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে শুক্রবার (২ জুন) সন্ধ্যা পর্যন্ত হলের সামনের মাঠে অবস্থান করতে দেখা গেছে তাকে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রত্যয়।
এর আগেও একই দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলেন তিনি। দাবি আদায়ে উপাচার্য, প্রক্টর, প্রভোস্টের কাছে কয়েক দফায় লিখিত আবেদন করে আসছিলেন তিনি।
গত ঈদের ছুটির আগে বৈধ সিটের দাবিতে হল অফিসে সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করলে হল প্রশাসন থেকে এ ব্লকের ৪৪৭ নং রুম বরাদ্দ দেওয়া হয় তাকে। একই কক্ষে ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সবুজ (৪৩ ব্যাচ) অবস্থান করছেন। কিন্তু সবুজ তাকে গত ২৫ এপ্রিল কক্ষ থেকে বের করে দেয় বলে অভিযোগ প্রত্যয়ের। এরপর ২৬ এপ্রিল থেকে তিনি এই কর্মসূচী শুরু করেন। হলের বাইরে মাঠেই বিছানা পেতে রাত্রি কাটাচ্ছেন তিনি।
তবে রুমমেট সবুজের দাবি, তিনি প্রত্যয়কে বের করেননি। প্রত্যয় নিজেই কক্ষ থেকে বের হয়ে গেছে। প্রত্যয়ের বিরুদ্ধে রুমে গাঁজা সেবনের অভিযোগ তোলেন সবুজ। অন্যদিকে তিন বছর আগেই ছাত্রত্ব শেষ হওয়া সবুজের হলে অবস্থান নিয়ে আপত্তি তোলেন প্রত্যয়।
প্রত্যয়ের দাবি, হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করে যাচ্ছেন। এ জন্য প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তার আবেদনও করেন তিনি। এদিকে প্রত্যয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলমান। আন্দোলনের পাশাপাশি গত বৃহস্পতিবার বিভাগের পরীক্ষায়ও অংশগ্রহণ করেছেন তিনি।
প্রত্যয় বলেন, ‘বিগত দেড় বছর ধরে প্রশাসনকে এই দাবিগুলো জানিয়ে আসছি। কোনো ফল না পাওয়ায় অনশন করতে বাধ্য হয়েছি।’
মীর মশাররফ হোসেন হলের নবনিযুক্ত প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘আমরা তার দাবিগুলোর সঙ্গে একমত। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তার দাবিগুলো সমাধানের আশ্বাস দিয়েছি। তবে সে আমাদের আশ্বাসে আশ্বস্থ না হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলেছে।’
এদিকে হলের বিদায়ী প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমি বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছি। আমি আমার দায়িত্বের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছি। আগামী রবিবার নতুন প্রভোস্ট দায়িত্ব বুঝে নেবেন। কাজেই আমি বিষয়টি তার দায়িত্বে দিয়ে দিয়েছি। আশা করছি প্রশাসন যথার্থ ব্যবস্থা নেবে।’
এদিকে আন্দোলনরত প্রত্যয়ের সঙ্গে কথা বলতে ঘটনাস্থলে আসেন প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান। তাকে শরবত খাইয়ে অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেন তিনি। তবে প্রত্যয় অনশন ভাঙতে রাজি হননি।
প্রক্টর বলেন, ‘আমরা তাকে দাবি মেনে নেওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্থ করেছি। তাকে রুমে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তার বাসায়ও ফোন করেছি। কিন্তু সে কোনকিছুতেই মানছে না। আমি মেডিকেলে ফোন করেছি। ডাক্তার এসে তার স্বাস্থ্যপরীক্ষা করবেন।’
এ ব্যাপারে প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, ‘আমি তার দাবিগুলোর সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক হলে এমন সমস্যা কোনভাবেই কাম্য নয়। আমি বিষয়টি নিয়ে প্রভোস্টসহ হল কর্তৃপক্ষের সকলের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা কখনোই চাই না বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুম থাকুক। আশা করছি আমরা খুব শিগগিরই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারব।’