× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আগামী বছরও পাঠ্যবই মিলবে না যথাসময়ে

সেলিম আহমেদ

প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৩ ০৯:৪৯ এএম

আপডেট : ০১ জুন ২০২৩ ১৪:০৭ পিএম

বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবই। ফাইল ফটো

বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবই। ফাইল ফটো

নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর বাকি আর মাত্র ছয় মাস। চলতি বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠদান শুরু হয়েছিল। এর ধারাবাহিকতায় আগামী বছর থেকে শুরু হবে প্রিপ্রাইমারি, দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। ফলে পাল্টে যাবে পুরোনো বই। অথচ এখন পর্যন্ত সব বই লেখার কাজ শেষ হয়নি। 

সবচেয়ে বাজে অবস্থা নবম শ্রেণির বইয়ে। এ শ্রেণির বই লেখার কাজ শুরু হয়েছে মাত্র ক’দিন আগে। ফলে বই প্রণয়নের কাজ শেষ হতে সেপ্টেম্বর পার হতে পারে। সম্পাদনায় লাগবে আরও অন্তত মাসখানেক। এরপর টেন্ডার, ছাপা-বাঁধাই সম্পন্ন করে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে পারা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। খোদ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সংশ্লিষ্টরাই এমন আশঙ্কা করছেন। 

অন্যদিকে গতবারের মতো এবারও এনসিটিবির নির্ধারিত দর থেকে কম দরে বই ছাপার কাজ নিয়েছে মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে আগামী বছরও নিম্নমানের বই সরবরাহের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছরের শেষ কিংবা আগামী বছরের প্রথম সপ্তাহেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই হিসেবে বছরের শেষদিকে এসে শুরু হবে নির্বাচনী ডামাডোল। ধুম লাগবে নির্বাচনী পোস্টারসহ অন্যান্য সামগ্রী ছাপার। পোস্টার ছাপতে গিয়ে বিঘ্ন হতে পারে বই ছাপার কাজ। এ ছাড়া শ্রমিক সংকটের কারণে বাঁধাই-সরবরাহেও ব্যাঘাত ঘটবে। আর কম দরে বই ছাপার কাজ নিলে ছাপার মান খারাপ হবে- এটাই স্বাভাবিক।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, চলতি বছর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠদান শুরু হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমের সঙ্গে পাল্টে যায় পাঠ্যবইও। কিন্তু সেই পাঠ্যবইয়ে নানা ভুলত্রুটি আর অসংগতি নিয়ে বছরের শুরুতে দেশজুড়ে বিতর্ক ওঠে। এরপর প্রত্যাহার করা হয় দুটি বই। আর বাকি বইগুলো দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদদের মাধ্যমে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করে ৪২১টি ভুলভ্রান্তি বের করে। এ ছাড়া বিতর্কিত ছবিসহ আরও কিছু সংশোধনী এনে আগামী বছর তা পরিমার্জনের সুপারিশ করে ওই কমিটি। ফলে এই দুই শ্রেণির বই নিয়ে আর কোনো চিন্তা নেই। ইতোমধ্যে এই দুই শ্রেণির বই ছাপার জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে টেন্ডার মূল্যায়নের কাজ। আর ৮ম শ্রেণির বইয়ের লেখার কাজ মোটামুটি শেষের পথে। চলছে বইয়ের ছবি আঁকার কাজ। এই শ্রেণির বইয়ের ছবি আঁকতে সময় লাগতে পারে আর দুই সপ্তাহ। 

এ প্রসঙ্গে এনসিটিবির প্রধান সম্পাদক সন্তোষ ঢালী বলেন, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বইয়ের কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। কিছুদিনের মধ্যে ছাপার কাজ শুরু হবে। আর অষ্টম শ্রেণির বইয়ের লেখা, সংশোধন ও ছবি আঁকার কাজ শেষের পথে। আশা করছি এনসিটিবির নির্দেশনা অনুযায়ী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বই ছাপার কাজ শেষ হবে। 

অন্যদিকে এখন পর্যন্ত প্রাথমিকের বই ছাপানোতে এগিয়ে আছে এনসিটিবি। প্রাথমিক পর্যায়ের সব শ্রেণির বইয়ের দরপত্র উন্মুক্ত করা হয়েছে। তবে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও প্রি-প্রাইমারির বই নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে হওয়ায় এসব বই লেখার কাজ চলছে। এনসিটিবি সদস্য (প্রাথমিক) মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, দ্বিতীয় শ্রেণির বইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ছবি আঁকার কাজ চলছে। তৃতীয় শ্রেণির বইয়ের পাণ্ডুলিপি শেষ পর্যায়ে আছে। 

নবম শ্রেণির বই ছাপায় বেশি বিলম্বের আশঙ্কা 

আগামী শিক্ষাবর্ষে নবম শ্রেণিতে দেওয়া হবে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে ১৩টি নতুন বই। এই বইগুলো লেখার জন্য ইতোমধ্যে করা হয়েছে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি। গত রবিবার থেকে এই কমিটি শুরু করেছে বই লেখার কাজ। বই লেখা শেষে যাচাই-বাছাই করতে আগামী সেপ্টেম্বরের শেষদিক পর্যন্ত সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। লেখা শেষ হলে সম্পাদনা করতে সময় লাগবে আরও অন্তত এক মাস। এরপর টেন্ডার আহ্বান, টেন্ডার যাচাই, চুক্তিসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে দুই মাসে বই ছাপা-বাঁধাই শেষে বছরের প্রথম দিন কোনোভাবেই সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা। 

পুস্তক প্রকাশক সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সব প্রক্রিয়া শেষ করে নভেম্বরে যদি পাণ্ডুলিপি দেওয়া হয়, তাহলে কোনোভাবেই জানুয়ারির প্রথমদিন বই দেওয়া সম্ভব হবে না। 

একই আশঙ্কা প্রকাশ করে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সময় কম থাকায় নির্দিষ্ট সময়ে বই ছাপিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তারপরও আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া। 

নির্ধারিত দর থেকে ৩৫ শতাংশ কম দরে কাজ নিচ্ছেন মুদ্রণকারীরা, মান নিয়ে শঙ্কা আগামী শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বইয়ের জন্য দুশ লটে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। এতে একটি সঙ্ঘবন্ধ চক্র বেশি কাজ নেওয়ার জন্য এনসিটিবির নির্ধারিত দর থেকে কম ধরে টেন্ডার দিয়েছে। গত বছরও এই চক্রটি একই কায়দায় কাজ নিয়েছিল। তবে তারা কাগজ সংকট, পাল্পসহ নানা সংকটের অজুহাত তুলে নিম্নমানের কাজ দিয়েছিল। এবারও কাজ পেতে কম দর দেওয়ায় আগামী শিক্ষাবর্ষে নিম্নমানের বই সরবরাহের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে কয়েকজন প্রেস মালিক এই নিম্নমানের বই ছাপার জন্য এনসিটিবিকে দায়ী করছেন। তাদের ভাষ্য, গত বছরসহ অতীতে যারা নিম্নমানের বই দিয়েছিল, তাদের কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। এই আশকারা পেয়ে তারা মাথায় উঠেছে। তবে এনসিটিবি বলছে, চলতি শিক্ষাবর্ষে নিম্নমানের বই ছাপানোর দায়ে তিন মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত ও ১১ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে। 

এনসিটিবি সূত্র জানায়, এবার মাধ্যমিকের বই প্রতি ফর্মা (৮ পৃষ্ঠা) প্রাক্কলন করা হয় ৩ টাকা ১০ পয়সা। এর বিপরীতে মুদ্রণকারীরা ১ টাকা ৮০ পয়সা থেকে শুরু করে ২ টাকা ধরে টেন্ডার দিয়েছে। যা প্রাক্কলিত দরের চেয়ে গড়ে ৩০-৩৫ শতাংশ কম। এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, বেশি কাজ বাগিয়ে নিতে পরিকল্পিতভাবে কম দরে টেন্ডার দিয়েছে সঙ্ঘবন্ধ মুদ্রণকারী চক্রটি। বিষয়টি এখন দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির কাছে রয়েছে। সেখান থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন পাবে। 

সংশ্লষ্টি একাধিক কর্মকর্তা ও প্রেস মালিক জানান, গত বছর তারা কম দামে কাজ নিয়ে নিম্নমানের বই ছাপিয়েছে। বই ছাপাতেও অনেক দেরি হয়েছে। সারা দেশে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিতে মার্চ পর্যন্ত সময় লেগেছে। আগামী বছরের জন্য তারা গতবারের থেকেও কম দরে কাজ নিয়েছে। এই দামে কাজ নিয়ে তারা কীভাবে মানসম্পন্নভাবে বই ছাপবে, তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। এ ছাড়া আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচনী পোস্টারসহ অন্যান্য ছাপার কাজ বেশি থাকায় কাগজের দাম বাড়বে। এখনও ডলারের দাম কমেনি। তাহলে তারা কীভাবে ভালো বই ছাপবে?

তারা আরও বলেন, এনসিটিবির উচিত প্রাক্কলন দর থেকে কম দরে কেউ টেন্ডার দিলে বাজার দর যাচাই করা। যদি যাচাই করে মনে হয় এই দরে তারা মানসম্মত বই ছাপতে পারবে না তাহলে রি-টেন্ডার করা উচিত। মানসম্মত দরে কাজ দিলে মানসম্মত বই আদায় করা সম্ভব হবে। 

বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, বাজারে কাগজ-কালি, শ্রমিকের মজুরি বেশি। ডলারের দামও না কমায় বিদেশ থেকে কাগজ, পাল্প আমদানি সম্ভব হচ্ছে না। তাই এই কম দরে কাজ নিয়ে গুণগত মান বজায় রেখে বই দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। 

এ প্রসঙ্গে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, দরপত্রের কম দর নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। কারণ কম দর দিয়ে কাজ নিলে অসাধু মুদ্রণকারীরা নিম্নমানের বই সরবরাহ করতে পারে। তবে এবার মানসম্মত বই নিশ্চিতে আমরা কঠোর অবস্থানে যাব। দরপত্র দাখিলের সময় আমরা যে নমুনা কাগজ দিয়েছিলাম, তার বাইরের কাগজে বই ছাপালে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। 

প্রসঙ্গত, প্রতি বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে ৩৫ কোটি বই ছাপানো হয়। এর মধ্যে প্রাথমিকে ১০ কোটি ও মাধ্যমিকে ২৫ কোটি। তবে এ বছর এই সংখ্যা আরও কমে আসতে পারে। চাহিদা কম থাকায় এবার বই ছাপানো হতে পারে ৩২-৩৩ কোটি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা