বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৩ ২১:০৬ পিএম
আপডেট : ১৭ মে ২০২৩ ২১:৩৯ পিএম
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছাত্রী হল। প্রবা ফটো
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছাত্রী হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে তিন ঘণ্টা আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে একই হলের একাধিক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। হলের আবাসিক শিক্ষকের উপস্থিতিতেই এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার (১৬ মে) রাত ৯টার দিকে হলের ১২০৩ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর নাম হাফসা বিনতে নূর। তিনি চারুকলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
অভিযুক্তরা হলেন, হলের আবাসিক শিক্ষার্থী তন্বী, ইশিতা, ফাল্গুনী আক্তার, নিনজা শিকদার, ইরা ও নাজমুন নাহার স্বর্ণা পাটোয়ারী।
এ ঘটনায় বুধবার হল প্রভোস্টের মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।
উপাচার্যকে দেওয়া অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, হলে নিজেদের কক্ষে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাফসা বিনতে নূরের সঙ্গে জুনিয়র রুমমেট রেবেকা খাতুনের কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে রেবেকা খাতুন হলের অন্য কক্ষের আবাসিক ছাত্রীদের নিয়ে এসে রুম আটকে হাফসাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। প্রায় তিন ঘণ্টা নির্যাতনের পর হাফসা বিনতে নূর অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাশের কক্ষের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার পাশের রুম হওয়ায় আমি এসে হাফসাকে রুম থেকে বের করে নিয়ে যেতে চেয়েছি। কিন্তু রেবেকা, নিনজা, ফাল্গুনীসহ সকলে তাকে ঘেরাও দিয়ে ধরে যেন সে আসতে না পারে। একপর্যায়ে সে মোবাইল নিতে গেলেও তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে।’
এ বিষয়ে হাফসা বলেন, ‘আমাদের রুমের রেবেকা খাতুনের সঙ্গে রুম পরিষ্কার করা নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়। পরে সে হলের অন্য রুমের ৭-৮ জন মেয়েকে নিয়ে আমাদের রুমে এসে আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত ও মারধর করেছে। তারা সকলে মিলে রাত সাড়ে আটটা থেকে রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত আমার ওপর এ মানসিক নিপীড়ন চালায়। নিনজা শিকদার নামের এক মেয়ে এ পুরো ঘটনা মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে। আমাদের সহকারী হাউস টিউটর মানসুরা বেগম আসার পরও তারা থামেনি। একপর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। শুধু তাই নয়, এই রেবেকার কর্মকাণ্ডে আমাদের অন্যান্য রুমমেটরাও শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্থার শিকার হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্তদের একজন নাজমুন নাহার স্বর্ণা পাটোয়ারী বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমি ম্যামকে সঙ্গে নিয়ে ওদের রুমে যাই। আমি গিয়ে ওদের শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু হাফসা আপুকে মারধরের বিষয় আমি কিছু জানি না। একপর্যায়ে আমি ওদের রুমে ম্যামকে রেখে নিচে চলে আসি। আমি আসার পরে নাকি হাফসা আপু আমাদের ছাত্রলীগের মেয়েদের গায়ে হাত তুলেছে।’
ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত হলের সহকারী হাউস টিউটর মানসুরা বেগম বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনার জেরে আবেগের বশবর্তী হয়ে এ কলহের সূত্রপাত হয়। অবস্থা বেগতিক জেনে আমি সেখানে উপস্থিত হই। আমি যাওয়ার পরও তারা আক্রমণাত্মক ছিল। হাফসাকে তারা রুমের বাইরে যেতে ও ফোনটাও ধরতে দিচ্ছিল না। মূলত অন্য রুমের মেয়েদের নিয়ে আসার কারণেই এ ঘটনা এতদূর পর্যন্ত গড়িয়েছে। আমি সকলকে বোঝানোর চেষ্টা করার পরও তারা আমার সামনে বসেই আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠে।’
এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপিকা রাণী সরকার বলেন, ‘বেশ কিছু দিন ধরে হলে এমন ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের ঘটনায় আমি শঙ্কিত। আজ অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা আলোচনায় বসেছি। তারপর দুপক্ষকে ডেকে বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি। এরপর থেকে যদি কেউ এ রকম কাজে জড়িত হয়, তাহলে তাদের সিট বাতিল হবে।’